Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শরতে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে ফুটেছে প্রকৃতির সৌন্দর্য

নীল আকাশে মেঘের মেলা, নিচে দোল খাচ্ছে কাশফুল

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৪ এএম


শরৎ মানেই নীল আকাশে ছেঁড়া মেঘ এবং নিচে সাদা রঙের খেলা। নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ আর নদীর বুকে জেগে উঠা চরে দোল খাওয়া কাঁশবন। এ দুটো মনে জাগায় এক ভিন্ন ধরনের অনুভূতি। শরৎকালে ভ্রমণবিলাসীদের প্রথম পছন্দ কাঁশবন। কাছে থেকে একটু ছোয়া পেতে কাঁশ ফুলের টানে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমী।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগাডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলা নদীর অববাহিকার জগমনের চরে শত শত বিঘা জমিতে দোল খাচ্ছে কাঁশবন। বর্তমানে এমন দৃশ্য কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চলের বুকে। কাঁশবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেনি, কাঁশগাছ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই।

জানা গেছে, কোনো খরচ ছাড়াই চরের বাসিন্দারা এক বিঘা জমির কাঁশবন বিক্রি করে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করছেন। অনাবাদী বালু চরে বন্যার পরে এসব কাঁশ গাছ জন্মে। মাত্র ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে গাছগুলো বড় হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। কাঁশবন বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এখানকার মানুষজন।
সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলার চরে কাঁশবন দেখতে আসা মিলন মিয়া জানান, তার বাড়ি ১০ কিলোমিটার দূরে। নদীর চরে শরতের অপরূপ দৃশ্য কাঁশবন দেখার জন্যই এসেছেন। তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে আবার বেড়াতে আসবেন। ওই ইউনিয়নের জগমনের চরের মাহাবুব বলেন, তার দুই বিঘা জমিতে কাঁশবন আছে। পাঁচ থেকে ছয় মাস পর কাঁশ গাছের ফুল পড়ে গেলে গাছগুলো কেটে প্রতি হাজার আঁটি চার থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের কালির আলগা চরের মতিয়ার রহমান জানান, তার ১০ বিঘা জমিতে কাঁশ গাছের আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর বন্যার পর এমনিতেই জমিতে জন্ম নেয়। আর মাত্র এক থেকে দেড় মাস পর জমির এই গাছ বিক্রি করা যায়। আর এই টাকায় সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসারে খরচ চালানো যাবে।
যাত্রাপুর ভগবতী চরের আব্দুল আজিজ বলেন, কাঁশবনের এখন অনেক চাহিদা। ১০ বছর আগে মানুষ কাঁশের ছন দিয়ে ঘর, বেড়া বানাতো। এখন তা বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। এগুলো খুলনা ও বরিশাল বিভাগের লোকজন নিয়ে পানের বরজের কাজে লাগাচ্ছেন। অনেকে আবার কিনে ঘরের ছাউনি ও ঘরের বেড়া দেয়।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, ঋতুপরিক্রমায় এখন শরৎকাল। আর সেই শরৎকালের বৈশিষ্ট্য কাঁশফুল। কুড়িগ্রামে চার শতাধিক চরাঞ্চলে রয়েছে। এসব চরে এখন কাঁশফুলের সমারোহ। কাঁশফুলের ইংরেজি নাম ক্যাটকিন। এই ফুলের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। কাঁশ সাধারণত গোখাদ্যের খর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, কাঁশ দিয়ে গ্রামাঞ্চলে ঘরের ছাউনি, বেড়া নির্মাণ করা হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক ফসল পান গাছের ছাউনি ও বরজেও এর ব্যবহার হয়। কাঁশে অনেক ওষুধি গুণ রয়েছে। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাঁশের মূল পিশিয়ে খাওয়ানো হয়। ব্যাথা বা ফোঁড়া হলে কাশের মূলের রস উপশম করে। তাছাড়া পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে যেখানে শিল্প-কারখানার ছাই থাকে, সেখানে কাঁশ জন্ম নিলে পরিবেশ পরিশোধিত হয়।

 



 

Show all comments
  • MD. Mainul Islam ৭ অক্টোবর, ২০২২, ৬:০৩ এএম says : 0
    Really it is a wonderful scene of nature. It makes our life freshes, charming and alluring. In my childhood I enjoyed it very much. But it is a matter of great sorrow that time has changed and hurt to visit the wonderful pictures
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ