Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুরআন ও হাদীসের আলোকে নবী-রাসূলদের জীবনী

মুফতি মুহাম্মদ আনিসুর রহমান রিজভি | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৫ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
ইবলিশ শয়তান সেজদা না করার কারণ: ইবলিশ হজরত আদম (আ:) কে সেজদা না করে আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল। আর সেজদা না করার কারণ হচ্ছে অহংকার ও হজরত আদম (আ:) এর প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ। যেমন পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বলল, আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা। আল্লাহ বললেন, তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কারণে তোর থাকার কোন অধিকার নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আরাফ: আয়াত: ১২- ১৩)

ইবলিশ শয়তানের যুক্তিটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত: আল্লাহতাআলা শয়তানকে সেজদা না করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে সেই আগুনের তৈরি বলে দাবি করে মাটির তৈরি হজরত আদম (আ:) কে সেজদা না করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিল। সে আগুনকে মাটির চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করেছিল। অথচ বাস্তবে মাটি আগুনের চেয়ে সব দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। কাজি সানাউল্লাহ পানিপথি (রহ.) বলেন, বিজ্ঞজনদের অভিমত হলো -মাটির মধ্যে রয়েছে বিনয়, নম্রতা ও সহনশীলতা। মাটি থেকে শ্রেষ্ঠ হজরত আদম (আ:) কে প্রথম থেকেই দেয়া হয়েছে চিরস্থায়ী স্বাভাবিক ঠিকানা। মাটির মধ্যে আরো রয়েছে অনুতাপ, ধৈর্য, গম্ভীর্য এবং ক্রন্দন। তাই হজরত আদম (আ:) এর মধ্যে ছিলো তাওবা, নম্রতা এবং কান্নাকাটির বৈশিষ্ট্য। ফলে তিনি লাভ করেছিলেন হেদায়ত ও উচ্চ মর্যাদা। অপরদিকে আগুনের মধ্যে রয়েছে উগ্রতা, উত্তাপ ও চাঞ্চল্য। এই স্বভাবের কারণে প্রথম থেকে আগুন থেকে সৃষ্ট ইবলিসের মধ্যে ছিলো উগ্র অহংকার এবং আদেশ লঙ্গনে প্রবৃত্তি। (কাজী সানাউল্লাহ পানিপতি রহ., ১২২৫ হি, তাফসীরে মাযহারী, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪০২)

ইবলিশ শয়তানের কান্না: হজরত মুসা (আ:) একদা শয়তানকে প্রচন্ডভাবে কান্নাকাটি করতে দেখে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। শয়তান বলল, আল্লাহর অনেক বান্দা শতসহস্র সেজদা দিচ্ছে না অর্থাৎ নামাজ আদায় করছে না অথচ তাদের কাউকে চির অভিশপ্ত করছে না। আমি কেবল একটি সেজদা না দেয়ার কারণে আমাকে চির অভিশপ্ত ও জাহান্নামি করা হয়েছে। তাই এভাবে কান্নাকাটি করছি। শয়তান আরো বলল, হে মুসা! আপনি আল্লাহর নিকট আমার পক্ষে সুপারিশ করুন যেন আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করেন। শয়তানের কথায় হজরত মুসা (আ:)’র অন্তরে করুণা হলো। তিনি আল্লাহর দরবারে শয়তানের আবেদনের কথা উল্লেখ করলে আল্লাহতায়ালা বললেন, হে মুসা! তুমি গিয়ে শয়তানকে বলো, সে যদি এখনো হজরত আদম (আ:)’র কবরে গিয়ে সেজদা করে তবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। হজরত মুসা (আ:) আল্লাহর প্রস্তাব শয়তানকে বললে, শয়তান বলল, জীবিত আদমকে সেজদা করিনি আর এখন মৃত আদমকে কিভাবে সেজদা করবো। এভাবে সে হজরত আদম (আ:) কে সেজদা করা থেকে বিরত রইলো। (তাযকারাতুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা-৬০, সূত্র: জামে কাসাসুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা-৫৭)

হজরত আদম (আ:) এর ইন্তেকাল ও দাফন: হজরত (আ:) এর অন্তিমকাল ঘনিয়ে আসলে জান্নাতি ফল খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হলো। তাঁর আকাঙ্ক্ষা পূরণে ফেরেশতারা জান্নাতের ফল নিয়ে এসেছিল। ফেরেশতারা তাঁর রুহ বের করলেন এবং তাঁর সন্তানদেরকে বললেন, আমরা যেভাবে তোমাদের পিতার দাফন-কাফন করছি তোমরাও তোমাদের সন্তানদের ও মৃতব্যক্তিদেরকে তেমনি করবে। হজরত জিব্রাইল (আ:) তিনি নিজেই আদম (আ:) কে গোসল দেন, কাফন পরিধান করালেন, সুগন্ধি লাগালেন এবং ফেরেশতারা তাঁর লাশ মোবারক বহন করে কাবা শরীফে এনে তাঁর জানাযা আদায় করলেন। হজরত জিব্রাঈল (আ:) ছিলেন ইমাম আর সকল ফেরেশতারা ছিলেন মুক্তাদী। আর এই নামাজে তাকবীর ছিল চারটি। অতঃপর কা’বা শরীফ থেকে তিন মাইল দূরে মিনায় মসজিদে খায়ফের নিকটে তাঁকে দাফন করা হয়।

হজরত আদম (আ:) এর কবর: হজরত আদম (আ:)’র কবর শরীফ কোথায় তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। এক বর্ণনায় আছে, জাবলে আবু কুবাইস নামক পাহাড়ে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে নূহ (আ:) এর প্লাবনের পর তাঁর লাশ হস্তান্তর করে বায়তুল মুকাদ্দাসে দাফন করা হয়। অপর বর্ণনামতে তাঁর কবর হলো মিনায় মসজিদে খায়ফের নিকটে। প্রসিদ্ধ মত হলো যে, তাঁকে সেই পাহাড়ের নিকট দাফন করা হয়েছে, হিন্দুস্তানে যেখানে তাঁকে অবতরণ করা হয়েছিল। হজরত আদম (আ:)’র মাজার শরীফে চব্বিশ ঘন্টা আল্লাহর অশেষ রহমত অবতীর্ণ হয়। (তাসকারাতুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা-৯১, কাসাসুল আম্বীয়া, পৃষ্ঠা-১০৯)

পরিসমাপ্তি: পরিশেষে বলতে পারি, যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুলগণকে দিকভ্রান্ত মানুষের হেদায়েতের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। মানব সৃষ্টির সূচনায় সর্বপ্রথম হজরত আদম (আ:) কে আল্লাহ সৃষ্টি করে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন । এ পর্যন্ত যত মানুষ পৃথিবীতে এসেছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত যত আসবে সবাই হজরত আদম (আ:) এর বংশধর। তাঁর মাধ্যমে মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছেন এবং তাদেরকে দিয়েছেন আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা। নবী-রাসুলগণই তাওহিদের প্রচারক, তাঁরা আমাদেরকে হেদায়ত দান করেছেন। তাঁদের দেখানো পথেই রয়েছে মানব মুক্তির নিশ্চয়তা। আল্লাহপাক তাঁদের প্রদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদেরকে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: আরবি প্রভাষক, চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম। এমফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ