পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্ষা শেষে শরতের আকাশ থাকে স্বচ্ছ নীল। প্রকৃতি থাকে নির্মল সজিব। তবে এখন আর প্রকৃতিতে সেই সজিবতা নেই। সুনীল আকাশও ধুলায় ধূসর, শীতের সন্ধ্যার মতো আবছা অন্ধকারাচ্ছন্ন। বায়ুদূষণের ফলে ঢাকার অবস্থা অনেকটাই এরকম। ধুলায় ধূসর অন্ধকারাচ্ছন্ন ঢাকায় দিনের বেলায়ও হেড লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। তার মানে ঢাকার বায়ুদূষণ আবারো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত ১ অক্টোবর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়। ওই দিন বায়ুমান সূচকে (একিউআই) ঢাকার স্কোর ছিল ১৬৫। বাতাসের এই মান ‘অস্বাস্থ্যকর’।
একিউআই স্কোর ১০১-২০০ এর মধ্যে থাকলে ওই বায়ুকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচিত হয়। এ ছাড়া এ মান ২০১-৩০০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ৩০১-৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘বিপজ্জনক’ বলে বিবেচিত হয়। যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বায়ুদূষণের সমস্যায় জর্জরিত। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। শীত আসার সাথে সাথে নির্মাণ কাজ, রাস্তাঘাট, ইটভাটা এবং অন্যান্য উৎস থেকে দূষক কণা ব্যাপকভাবে নিঃসরণের কারণে শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এবার শীথ আসার আগেই ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করেছে। করোনা মহামারিকালে ঢাকার বায়ুরমান ছিল স্বাভাবিক। এরপর ২০২১ সালে আবার ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের শুরুর দিকে অর্থাৎ জানুয়ারিতে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) স্কোর ২৬৯ নিয়ে ঢাকা আবার বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানে উঠে আসে। একিউআই স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে নগরবাসীর প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা তখন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন।
বায়ুদূষণকে পরিবেশবাদীরা মানুষের নীরব ঘাতক হিসেবে অখ্যায়িত করেছেন। বায়ুদূষণ ক্রমাগত বিশ্বব্যাপী মৃত্যু এবং বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির শীর্ষ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার ফলে মানুষের হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ ও ক্যান্সার হওয়ার শঙ্কা বৃদ্ধি পায়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ যেমন- স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশনের ‘এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন সিটিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষিত বায়ুর কারণে ২০১৯ সালে রাজধানীতে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু তিন বছর কমছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত চার কারণে রাজধানীর বাতাস দূষিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজ, পুরনো যানবাহনের আধিক্য, শহরের আশপাশের ইটভাটা ও শিল্প-কলকারখানার দূষণ এবং শহরের ভেতরে যে ময়লা আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক ও কঠোর না হওয়ায় এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটছে না বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
দেড় কোটিরও বেশি মানুষের আবাসস্থল ঢাকা। পরিবেশবিদরা বলছেন, অন্য দেশগুলো তাদের বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ রোধে যেখানে নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে ঢাকা ব্যর্থ। দূষণের সব থেকে বড় উৎস ঢাকার বর্জ্য, আর এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। আবার শহরের মধ্যে উন্নয়নকাজের ফলে সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণও ঠিকমতো করে উঠতে পারছে না দুই সিটি করপোরেশন। পরিবেশ অধিদফতর এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। এই বায়ুদূষণ রোধে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করলেও তা মানা হচ্ছে না। বালু ও মাটিভর্তি ট্রাক দিনের বেলা চলাচল করতে নিষেধ করা হলেও তা দিব্যি দিনেই চলাচল করছে। এসব ট্রাক চলাচলের সময় ছালা বা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় বালু বা মাটিভর্তি উন্মুক্ত ট্রাকই চলাচল করতে দেখা যায়। যেসব স্থানে রাস্তা মেরামতের কাজ হচ্ছে সেখানে প্রতিদিন সকাল বিকাল রাস্তায় পানি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও সিটি কর্পোরেশন বা পরিবেশ অধিদফতর কেউ এ দায়িত্ব পালন করছে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলো সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর প্রতিকারে যা করতে হবে সেটা করা হচ্ছে না। অর্থাৎ যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বললে বলতে হবে ঢাকাকে বায়ুদূষণ মুক্ত রাখার ব্যাপারে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে খুব একটা আন্তরিক মনে হয় না। উচ্চ আদালতের নির্দেশও উপেক্ষিত হচ্ছে কিন্তু সরকার এতেও নির্বিকার। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বায়ুদূষণ হচ্ছে। সেসব দেশ বায়ুদূষণ রোধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু আমরা সে তুলনায় কিছুই করছি না।
তবে বিশেষজ্ঞদের এমন মতামতের সঙ্গে একমত নয় পরিবেশ অধিদফতর। তারা বলছে, বায়ুদূষণ কমাতে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে বায়ুদূষণবিরোধী অভিযান। এরই মধ্যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে অনেক ইটভাটা। বন্ধ করা হয়েছে অনেক শিল্প-কারখানা। বড় বড় রাস্তায় প্রায়ই পানি ছিটানো হচ্ছে। পুরনো গাড়ি চলাচল যাতে না করতে পারে সেজন্য নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান চালানো হচ্ছে। এমনকি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিলি, পোস্টার ছাপানো এবং বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তামজীদ আহামেদ বলেন, ‘আমরা বায়ুদূষণ রোধে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।