Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রতীকের মতো প্রার্থীদের মাঝেও সুশৃঙ্খল সহাবস্থান দেখতে চান ভোটাররা

প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০২ এএম, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

না’গঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার: নাসিক নির্বাচনকে ঘিরে শহর/শহরতলীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলি এখন মেয়রও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ছবিসম্বলিত পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। যে দিকেই তাকানো যায় সেদিকেই দেখা যায় নৌকা/ধানের শীষসহ অন্যান্য প্রতীকের সুশৃঙ্খল সহাবস্থান। নাসিক ভোটারগণ আশা করছেন বিভিন্ন জনের ছবিসম্বলিত পোস্টারের সুশৃঙ্খল সহাবস্থানের মতো প্রার্থীগণ যেন তাদের মাঝেও সুশৃঙ্খল সহাবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হন। এদিকে নির্বাচনী বৈতরুণী পার হতে রাত-দিনের ঘুম হারাম করে প্রার্থীগণ ছুটে চলেছেন নির্বাচনী এলাকা নাসিকের ৪ থানার অলিগলি পাড়া-মহল্লায়। পায়ে হেঁটে নারী-পুরুষ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের সালাম, এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ছুটে আসছেন পার্থীদের এক নজর দেখতে, প্রার্থীদের সাথে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করছেন তারা। অন্যদিকে চলছে বড় দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী এবং দলের শীর্ষ নেতাদের মাঝে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টির অপচেষ্টা। তারা ভোটারদের মাঝে প্রচার করছেন দলীয় কোন্দলের কারণে এবার ভোটারগণ নৌকার প্রতীক বুকে সেঁটে ভোট দিবেন ধানের শীষে; আবার কেউ কেউ গুজব ছড়াচ্ছেন বাইরে ধানের শীষ অন্তরে নৌকা। তবে দু’ বড় দলের প্রার্থীই বলছেন দু’দলের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। নেতা-কর্মীগণ ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনার  মোঃ জাবেদ আলী
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জুয়েল আইচের যাদুকরী কোনো প্রভাব পাবেন না। নির্বাচনের আগের রাতে বাক্স ভরে দেয়া অসম্ভব কাজ। এনসিসি নির্বাচনে প্রতিটি কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। এ নির্বাচন  সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে দেশের জন্য একটা মডেল হিসেব তৈরি হবে। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী  নিরপেক্ষ থাকবে। আমরা কারো পক্ষে কাজ করছি তা কেউ বলতে পারবে না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০১৬ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মেয়র প্রার্থীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোঃ জাবেদ আলী এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া। এছাড়া এনসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার নূরুজ্জামান তালুকদার, সহকারী রিটার্নিং জেলা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশনার মেয়রদের কাছ থেকে বিভিন্ন মতামত নেন।
নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোঃ জাবেদ আলী আরো বলেন, শপথ নেয়ার পর থেকেই  নির্বাচন কমিশনকে ‘আজ্ঞাবহ’ বলা হলেও  প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলাম। বিদায় নেয়ার আগের কাজ ও কর্মের পরিবর্তন হবে না।
তিনি মেয়র প্রার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, নির্বাচনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হলো ভোটার। ভোটারদের আপনারা উদ্বুুদ্ধ করতে পারলে ভোটকেন্দ্র অবশ্যই ভোটারে পূর্ণ থাকবে। ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের অনিয়ম লক্ষ্য করলে জনগণকে নিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি।
তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, নির্বাচনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তা বরদাশত করা হবে না। একই সাথে কোনো প্রার্থীকে বেকায়দায় ফেলার প্রয়াস ও গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মত দেন। মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অ্যাড. শাখাওয়াত হোসেন খাঁন বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আছে। তবে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা আছে।
তিনি নির্বাচন কমিশনারকে জানান, রিটার্নিং অফিসারের বলা ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৩টি কেন্দ্রের ব্যাপারে তাকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। ভোট কেন্দ্রেই যেন ভোট গণনা করা হয়। তিনি বলেন, হাত-পা বেঁধে দেয়া যাতে না হয়।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর গণভবনে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণভবন মানুষের, আর প্রধানমন্ত্রী তো জনগণের, আমারও। তবে কেন এনসিসি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে গণভবনে ডেকে তার পক্ষে কাজ করার জন্য এমপিদের নির্দেশনা দেয়া হলো। এনসিসি নির্বাচনে সাতাশটি ওয়ার্ডে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিলেই হবে না, নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে কিনা  তা দেখার দাবি রাখেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, বিএনপি প্রার্থী শাখাওয়াত নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের  যে অভিযোগ তুলেছেন  তা অস্বীকার করছি এবং এটি মিথ্যে। নারায়ণগঞ্জে আমি সব সবসময়ই চাপে থাকি। সরকারি দলের প্রার্থী হলেও এ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে কোনো সুবিধা নেই নাই। প্রশাসন দিলেও আমি নেব না।
তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করেন, নির্বাচনী পরিবেশ এমনভাবে নেয়া হোক যেন ভোটাররা যাকে ভোট দিতে চায়, তাকেই যেন দিতে পারে। কারো দয়া, দাক্ষিণ্য নিয়ে আমি নির্বাচনে জয়ী হতে চাই না। তিনি বলেন, অন্যদের চেয়ে আমার বেশি নিরাপত্তা দরকার। আমি এ নির্বাচন কী জন্য, কেন নির্বাচন করছি তা নারায়ণগঞ্জবাসী খুব ভালো করেই জানে। বিএনপি প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শাখাওয়াত ভাই সাঁতার জানেন, পানিতে ডুববেন না।
সাখাওয়াত মতামত দেয়ার সময়, নির্বাচন কমিশনকে  এ নির্বাচন হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দেয়ার মতো যাতে না নয় এমন কথার প্রতিউত্তরে তিনি একথা বলেন। এ ছাড়াও এনসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নূরুজ্জামান তালুকদার বলেছেন, বিজয়ের মাসে কোনো অনিয়মের কাছে হার মানব না। ভোট কেন্দ্র সুরক্ষিত থাকবে। নির্বাচনে কোনো সহিংসতা হতে দেয়া হবে না। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, নির্বাচনে ব্যালট বাক্সে হাত দেবেন তো কাউকে অক্ষত রাখব না। ব্যালট রক্ষার্থে লাঠি দিয়ে হোক আর বন্দুকের গুলি দিয়ে হোক আহত করা হবে। সাতাশ ওয়ার্ডে সাতাশ জন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন।
নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে নাসিক নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীর হাতপাখা প্রতীক ভোটযুদ্ধে জয়ী হবে বলে মন্তব্য করেন নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীম।
গতকাল পীর সাহেব চরমোনাই মনোনীত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতী মাসুম বিল্লাহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার কান্দাপাড়া এলাকায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীমের সাথে সাক্ষাৎ করে দোয়া চান। এ সময় মুফতী মাসুম বিল্লাহর সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নগর সেক্রেটারি সুলতান মাহমুদসহ, ইশা ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নায়েবে আমীর নেতা-কর্মীদেরকে বলেন, আল্লাহভীতি নামক গুণ সবাইকে অর্জন করতে হবে। কারণ এ একটি গুণই প্রশাসনিক কাঠামোর সর্বোচ্চ স্তরকে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মসাৎ, খেয়ানত প্রভৃতি অন্যায় থেকে মুক্ত রাখতে যথেষ্ট। এ গুণের ফলে মাটির এ ধরার মানুষগুলো ফেরেশতাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন হয়।
জনগণ ভোট দিতে পারলে ধানের শীষের বিজয় ঠেকিয়ে রাখার সামর্থ্য কারো নেইÑ গয়েশ্বর রায়
সিদ্ধিরগঞ্জ (না:গঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নাসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, জনগণ ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে আছে। জনগণকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে, তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে সাহস যোগাতে হবে। জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে ধানের শীষের বিজয় ঠেকিয়ে রাখার সামর্থ্য কারো  নেই।
নৌকায় মানুষের অনীহা রয়েছে উল্লেখ করে গয়েশ্বর রায় বলেন, নৌকা মার্কার প্রার্থী তার অনুশোচনা, তার ক্ষোভ, তার দুঃখ, তার কথার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসছে। তিনি (আইভী) বলছেন, মার্কা যাই হউক আমাকে ভোট দিন। তিনি বুঝতে পারছেন নৌকা মার্কার প্রতি মানুষের অনীহা আছে। সেই কারণে তিনি নৌকাকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজেকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।
গতকাল বিকেলে সিটি করপোরেশনের ২ ওয়ার্ডের মৌচাক বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে দিনের নির্বাচনী প্রচারণা শেষে তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এসময় তার সাথে ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোতন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা  আবুল খায়ের ভুইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, হাবিবুর রশিদ হাবিব, নাজিম উদ্দিন আলম, জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ বিএনপি’র জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাসিক

২০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ