Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটি

অধ্যাপক কাজী সামশুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৫৪ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
তিনি উপলব্দি করেন যে এখানকার সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা রক্ষা করার জন্য সুন্নীয়ত ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। এ সময় তিনি বললেন, ‘কাম করো দ্বীনকো বাঁচাও, ইসলামকো বাঁচাও’। তিনি ভক্ত অনুরক্তদের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য জমি খোঁজ করতে নির্দেশ দিলেন, বললেন এমন জমি দেখ শহর ভি না হো, গাঁও ভি না হো, সাথ মসজিদ ভি হো আওর তালা ভি হো, অর্থাৎ শহর ও না গ্রাম ও না, সাথে মসজিদ থাকবে, পুকুরও থাকবে। অনেক জমি দেখা হলো হুজুরের পছন্দ হয় না। শেষে ষোলশহরের নাজিরপাড়ার বর্তমান স্থানটি (যেখানে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া অবস্থিত) দেখানো হলে হজুর বলেন যে হ্যাঁ এখান থেকে আমি দ্বীনি শিক্ষার খুশবু পাচ্ছি। এখানেই ১৯৫৪ সালে নবী পাকের ৩৮তম বংশধর আলেমে দ্বীন শরীয়ত ত্বরীকতের কান্ডারী গোমরাহীর অন্ধকার থেকে আলোর পথের দিশারী কুতুবুল আউলিয়া গাউসে জমান হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি পবিত্র হস্ত মুবারক দ্বারা ঐতিহাসিক জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার ভিত্তি প্রসÍর স্থাপন করেন। পরিচালনার দায়িত্ব আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট-এর উপর ন্যসÍ, তথাপি এর পিছনে প্রিয় নবী ও আওলাদে রাসূলগণের জাহেরী বাতেনী শক্তিই মূল পরিচালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। হুজুর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠালগ্নে কয়েকটি অতি মূল্যবান নসিহত করেন। প্রিয় নবী বলেছেন এ মাদ্রাসার ভার তিনি নিজেই নিয়েছেন। সোবহানাল্লাহ, ইয়ে কিস্তিয়ে নুহ (আ.) হ্যায়। হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম-এর কিসতি সদৃশ, এ মাদ্রাসার খেদমত যারা করবে তারা ঐ কিসতির যাত্রীদের মতো মুক্তি পাবে। হুজুর আরো বলেন ‘মুঝে দেখনা হ্যায়তো, মাদ্রাসাকো দেখো’ ‘মুঝছে মহব্বত হ্যায়তো মাদ্রাসাকো মহব্বত করো’ ‘মাদরাসা কি লিয়ে মান্নত করো, মান্নাত পুরো হোনেছে ওয়াদা পুরো করো।’ ‘চেনা-অচেনা হাজার হাজার নবী অলী প্রেমিক আল্লাহর বান্দা লক্ষ লক্ষ টাকা দান খয়রাত করে যাচ্ছে এবং তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করছে।’ মসলকে আলা হযরত এর আক্বীদার উপর এই মাদ্রাসার কার্যক্রম বিসÍৃত। এখানকার শিক্ষার্থীরা একজন খাঁটি নবী অলী প্রেমিক হয়ে দেশ দেশান্তরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর পক্ষে জেহাদ করে যাচ্ছে।

প্রিয় দৌহিত্র্য আওলাদে রসুল গাউসে জমান হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী)কে সাথে নিয়ে হুজুর ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রাম সফরে আসেন (এটা ছিল হুজুরের শেষ সফর)। প্রায় সাত মাস চট্টগ্রামে অবস্থান করে ৩০/৩৫ জন মুরীদান সঙ্গে করে হুজুর প্রিয় নাতিসহ জাহাজযোগে হজ্ব পালনার্থে জেদ্দার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। বহু বছর পর হুজুর পুনর্বার হজ্বে গেলেন। এটাই ছিল হুজুরের শেষ সফর।

১৯৬০ সালে ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবদুল খালেক, আলহাজ্ব নুর মুহাম্মদ সওদাগর আলকাদেরী, আলহাজ্ব ডা. টি হোসেন, হাজী আবুল বশর, আলহাজ্ব আমিনুর রহমান সওদাগর, আলহাজ্ব আকরাম আলী খান, আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম সওদাগর, ফজলুর রহমান হুজুরকে আনতে সিরিকোট শরীফ যান। শারীরিক দুর্বলতার কারণে হুজুর আসতে পারেননি। হুজুর ভাইদের বলেছিলেন ‘ওপরওয়ালাকো হুকুম মিলনে ছে জরুর জাউঙ্গা’, লেকিন যানে কো হুকুম নেহী হ্যায়।’’ অনেক কান্নাকাটি করে ভাইয়েরা চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। হুজুর ১৯৬১ সালের ২২ মে মোতাবেক ১১ই জিলক্বদ লক্ষ লক্ষ পীর ভাইদের শোক সাগরে ভাসিয়ে অন্তিম শয়ানে অবগাহন করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজেউন)।

হুজুর ক্বিবলার সবচেয়ে বড় কারামত এই জামেয়া। হুজুর ক্বিবলার সালানা ওরস মোবারকের প্রাক্কালে গভীর প্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এ মহান রাহবার আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদকে, আমরা তাঁর নেগাহ-করম কামনা করছি, করুণাময়ের দরবারে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের হুজুর ক্বিবলার নির্দেশিত পথে চলার তওফিক দিন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অদ্যাবধি যারা খেদমত করে জান্নাতবাসী হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আল্লাহ পাক তাঁদের দরজাকে বুলন্দ করুন। জামেয়াকে যারা ভালবাসবে দুনিয়া আখিরাতে তারাই সফল, যারা শত্রুতা করবে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। আসুন আমরা সকলে আওলাদে রাসুল এর এ মহান কীর্তিকে আঁকড়ে ধরে সামনে এগিয়ে চলি। এ হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। দরবারে আলিয়া কাদেরিয়ার সাজ্জাদানসীন হযরত মাশায়েখ ক্বেরাম গাউসে জমান হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ ও হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ জামেয়া আনজুমানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। প্রিয় নবীর ৪০তম অধঃসÍন বংশধর আমাদের পরিচালক ও নির্দেশদাতা, আল্লাহ পাক আমাদের নবী অলিপ্রেমিক হবার সৌভাগ্য দান করুন আমিন!
লেখক: প্রেস এন্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারী- আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ