Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

থামছেই না কিছু পুলিশের অপরাধ

এসআই রতনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা : পুরান ঢাকায় স্বর্ণ ছিনতাইয়ের অভিযোগে বনানী থানার এসআইসহ গ্রেফতার ৩ : ডেমরার এসআইয়ের হাউজিং ব্যবসা

প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৯ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

নূরুল ইসলাম : সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকের ঘটনা। রেজাউল করিম নামে এক ব্যবসায়ী পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার থেকে ৯শ’ গ্রাম স্বর্ণ কিনে যশোরের উদ্দেশে রওনা করেন। গুলিস্তান ফুলবাড়ীয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি হোটেলের সামনে এলে পুলিশ পরিচয়ে তার পথরোধ করেন বনানী থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগী। ওই ব্যবসায়ীকে তারা বলেন, তোর বিরুদ্ধে মামলা আছে। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর কাছে থাকা স্বর্ণগুলো ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় ব্যবসায়ী চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে এসআইসহ দু’জনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে বংশাল থানা পুলিশ এসে এসআইসহ তিনজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। লালবাগ জোনের ডিসি মফিজুল ইসলাম জানান, এসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে ছিনতাই এবং পুলিশের সোর্স আব্দুর রাজ্জাকসহ দু’জনের বিরুদ্ধে স্বর্ণ পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে, শ্যামলী আশা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তারকে তল্লাশির নামে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা ও অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রাজধানীর আদাবর থানার এসআই রতন কুমার হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন টাইব্যুনাল। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ পরোয়ানা জারি করেন। এর আগে শ্লীলতাহানির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এ বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান। যদিও পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে ওই ঘটনায় এসআই রতনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। গত ৩১ জানুয়ারি আশা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ফারহানা আক্তার বিকেলে ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বই কিনতে শিয়া মসজিদের দিকে রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন। এসময় মসজিদের বিপরীতে থাকা আদাবর থানার এসআই রতন কুমারসহ পুলিশের তিন সদস্য তাকে জোর করে রিকশা থেকে নামান। এরপর তার কাছে ইয়াবা আছে কি না জানতে চান ওই দারোগা। এতে ফারহানা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। এক পর্যায়ে শিয়া মসজিদের বিপরীতে একটি ইলেকট্রিকের দোকানে নিয়ে তাকে নানা অনৈতিক প্রস্তাব দেন এসআই রতন। ফারহানার অভিযোগ, পরিচয়পত্র দেখানোর পরও বারবার ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করেন রতন। পরে ফারহানা রতনকে বলেন, স্থানীয় লোকদের সামনে তার ব্যাগ তল্লাশি করতে হবে এবং প্রয়োজনে থানায় যাবার কথা বলেন তিনি। কিন্তু তার কোনো কথাই শুনতে চাননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এসময় রতন গর্ব করে ফারহানাকে বলেছিলেন, আমার কাছে ওসি, ডিসি কিছুইনা। কারও কাছে নালিশ করেও কোন লাভ নেই। তবে কোনো মিডিয়াকে এ বিষয়টা না জানানোর অনুরোধ জানান ওই দারোগা। গত ৩ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শাহআলী থানার চার পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের সোর্স দেলোয়ার চাঁদা আদায়ের জের ধরে বাবুল মাতব্বর নামে একজন চা দোকানিকে জ্বলন্ত চুলার উপর ফেলে হত্যার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ৯ জানুয়ারী রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ৫ লাখ টাকার জন্য এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ শিকদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর কদিন পরেই যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আরশাদ হোসেন আকাশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দাশকে মারপিট করে গুরুতর আহত করেন। এই ঘটনাও আলোচিত হয়। এছাড়া, গত ১৭ জানুয়ারি আগৈলঝাড়ায় ব্যবসায়ীকে পুলিশের নির্যাতন এবং ২৭ জানুয়ারি যশোরে টাকার জন্য প্রবাসীকে আটক রেখে পুলিশের নির্যাতনের অভিযোগসহ প্রতিদিনই পত্রিকায় পাতায় পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছাপা হচ্ছে। এতো গেল মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া ঘটনা। এর বাইরে বহু ঘটনা ঘটছে যা অনেকেই জানতে পারে না। ভুক্তভোগীরাই শুধু জানেন কিন্তু পুলিশের ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না। এভাবেই কতিপয় পুলিশ সদস্যদের অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। একের পর এক আলোচিত ঘটনার পরও পুলিশের অনেক সদস্যই নিজেকে অপরাধ প্রবণতা থেকে নিবৃত করতে পারছেন না। এই অপরাধ প্রবণতার মধ্যে রয়েছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, মামলা তদন্তে ঘুষ নেওয়া, গ্রেফতার বা ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে, মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া, জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়। পাশাপাশি ছিনতাই-ডাকাতি, মাদক কেনাবেচা, ধর্ষণসহ বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে। এর বাইরে এক মামলার আসামী ভিন্ন মামলায় চালানসহ আরও বিভিন্ন পন্থায় টাকা উপার্জনের অভিযোগ আছে কোনো কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এসবের বাইরে একই থানায় দীর্ঘদিন চাকরি করার সুবাদে কোনো কোনো পুলিশ সদস্য চাকরির বিধি ভঙ্গ করে থানা এলাকায় ব্যবসা খুলে বসেছেন। ডেমরা থানার এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে একই থানা এলাকায় হাউজিং ব্যবসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ সদস্যদের এসব অপরাধ প্রবণতা বন্ধ করতে পুলিশ প্রশাসন থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। আইজিসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদিও বার বার বলেছেন কোনো পুলিশ সদস্যের অপরাধের দায় পুলিশ বাহিনী নিবে না। সাম্প্রতিক আলোচিত কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে অপরাধের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি ‘দৃশ্যমান’ করার সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সংসদীয় কমিটির সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ বাহিনী অনেক ভালো কাজ করছে, তবে দুই-চার জন সদস্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত ও দৃশ্যমান করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. এ এস এম আমানউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ পুলিশ সদস্যের কর্মকা-ের জন্য গোটা পুলিশ বিভাগের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
সূত্র জানায়, বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার সদস্য রয়েছে। ২০১৫ সালে বিভিন্ন অপরাধে ৯ হাজার ৯৫৮ পুলিশকে বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৭৬ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে থানা এবং আদালতে মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে কনস্টেবল থেকে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ৭০ জন, উপপরিদর্শক (এসআই) ৪ জন এবং পরিদর্শক ২ জন। যাদের আদালতে বিচার চলছে। তাদের চাকরিচ্যুত হয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন অপরাধে বিভাগীয় দ- দেওয়া হয়েছে।
সূত্র বলছে, গত বছর সংখ্যার বিচারে ৬৯ হাজার পুলিশ সদস্য সাজা পেয়েছেন। এদের একটি বড় অংশের বিরুদ্ধে নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদের সদস্যরা ফৌজদারি অপরাধসহ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নিয়মনীতি লঙ্ঘনে সবচেয়ে বেশি জড়াচ্ছেন। তবে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেলায় এই হার একেবারেই নগণ্য। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল এই ৫ বছরে বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশের কনস্টেবল থেকে এসআই পদে ৬৩ হাজার ৩৪৯ জনকে লঘুদ-, তিন হাজার ৫৯০ জনকে গুরুদ-, ৪৬১ জনকে বরখাস্ত ও ১২৩ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬৭ হাজার ৫২৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সময়ে ২৩৪ জন পুলিশ পরিদর্শকের (ইন্সপেক্টর) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এদের মধ্যে ২০৭ জনকে লঘুদ- ও ২৭ জনকে গুরুদ- দেওয়া হয়েছে। এএসপি থেকে এর ওপরের কর্মকর্তা পর্যায়ে ৪৭ জনকে লঘুদ-, ১২ জনকে গুরুদ-, একজনকে বরখাস্ত ও পরে চাকরিচ্যুত ও তিন জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ বাহিনীর নিজস্ব আইনে তদন্ত পরবর্তী অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে সাজা প্রদান করে পুলিশ সদর দফতরের ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড (ডিএপিএস) শাখা। গুরুদ- সাজার মধ্যে রয়েছে বেতন কর্তন ও এক পদ নিচে নামিয়ে দেওয়া। লঘুদ- হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য তিরস্কার ও সতর্ক করা। আর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ না হলে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দ-প্রাপ্তদের অনেকেই উচ্চ আদালতে রিট করে চাকরিতে বহাল রয়েছেন। তবে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ডিএপিএস শাখায় যেসব অভিযোগ নথিভুক্ত হয়, তা প্রকৃত অপরাধের চেয়ে অনেক কম। কাগজে-কলমে অভিযোগের যে সংখ্যা দেখানো হয়, প্রকৃত অভিযোগ তার চেয়ে অনেক বেশি। অনেক অভিযোগ সদর দপ্তর পর্যন্ত আসে না। অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেই পুলিশ কর্মকর্তারা নিম্নপদের সদস্যদের বারবার সতর্ক করেন। এসব সত্ত্বেও পুলিশের অপরাধে জড়ানোর হার কমছে না। মাঠ পর্যায়ে কতিপয় পুলিশ সদস্য ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণের মতো অপরাধ করছে। তাছাড়া অপরাধী গ্রেফতারে সোর্স হিসেবে যাদের রাখা হয় তাদেরকে ব্যবহার করে পুলিশ সদস্যরা অপরাধ ঘটাচ্ছে। এসব ঘটনার বাইরেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি বিধিকে তোয়াক্কা না করার অভিযোগ রয়েছে বহু পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ডিএমপির থানাগুলোতে এমন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আছেন যারা নিজেকে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসাবে পরিচয় দিতে দ্বিধা করেন না। অনেকে আবার টাকা ও রাজনৈতিক প্রভাবের জোরে একই থানায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন কোনো কোনো থানার ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা। গত সপ্তাহে যাত্রাবাড়ী থানা থেকে বদলিকৃত ওসি অবণী শংকর করের বিরুদ্ধেও নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। চার বছরের বেশি সময় ধরে ওই কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানায় কর্মরত ছিলেন। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠার পর তাকে বদলি করা হয়েছে। এদিকে, ডেমরা থানার এসআই তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই থানার মাতুয়াইল নিউ টাউনের বাদশা মিয়া সড়কে হাউজিং ব্যবসা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, থানার এসআই হিসেবে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে নীচু জমিতে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে তাতে জমি ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। বিসমিল্লাহ প্রজেক্ট নামের ওই কোম্পানীর চেয়ারম্যান এসআই মো: তৌহিদুল ইসলাম। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের নামের প্রথমে তার ছবিসহ নাম ছাড়াও মোবাইল নম্বর দেয়া আছে। এর নীচে রয়েছে ৪জন পরিচালক ও দুজন কো-চেয়ারম্যানের নাম ও ছবি। পুলিশের চাকরি করেও একই থানা এলাকাতে এভাবে হাউজিং ব্যবসা করতে পারেন কি না জানতে চাইলে এসআই তৌহিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এটা আমরা নিজেরা নিজেরা করেছি। নিজেরা নিজেরা বলতে তিনি একবার পুলিশ সদস্য এবং পরে বলেন আত্মীয়-স্বজনরা মিলে করেছি। কিন্তু পরিচয় গোপন করে এই প্রতিবেদক নিজেও ফ্ল্যাট কেনার জন্য একটি ফরম সংগ্রহ করেছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য এ ধরণের কোনো ব্যবসার সাথে জড়িত থাকতে পারে না। তিনি বলেন, বিষয়টা আমার জানা নেই। এই ঘটনা সত্যি হলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত এসআইয়ের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর বাইরে ফৌজদারী অপরাধের অনেক অভিযোগ আছে পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ জুন এক নারী পুলিশ কনস্টেবলকে ধর্ষণে জড়িত তার সাবেক স্বামী এএসআই কলিমুর রহমানকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই পুলিশ সদস্যকে রিমান্ডেও আনা হয়। একই বছরের ১৪ জুন মোশাররফ হোসেন নামের আরেক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন তার সাবেক স্ত্রী। রাজধানীর খিলগাঁও থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বর্তমানে কারাবন্দী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আবদুল কাদেরকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় আদালত হেলাল উদ্দিনকে তিন বছরের কারাদ- দিয়েছেন। রাজধানীর কাফরুলে কলেজ ছাত্র মোমিন হত্যার অভিযোগে মতিঝিল থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলামের মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। প্রায় ১০ বছর কারাভোগের পর সাবেক ওসি রফিক গত বছরের ২২ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. এ এস এম আমানউল্লাহ মনে করেন, পুলিশের এই সমস্যা রাজনৈতিক। এটাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি চায় তাহলে এ সমস্যার সমাধান হবে। এ ছাড়া সমাধানের কোনো পথ আছে বলে আমার মনে হয় না। প্রফেসর ড. আমানউল্লাহ বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন স্তর থেকে শুরু করে ঢাকায় কর্তব্যরত পুলিশ বাহিনীতে পরিবর্তন করা দরকার। তিনি বলেন, ঢাকায় নির্দিষ্ট কয়েক জেলার অধিবাসীরাই সংখ্যায় অধিক। এটাতে পরিবর্তন আনা দরকার। একই সাথে ছাত্রজীবনে বিভিন্ন দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িতদের সংখ্যাও পুলিশ বাহিনীতে এখন বেশি। অযোগ্য কিছু সদস্য রাজনীতি ও টাকার জোড়ে ঢাকায় পোস্টিং নিয়ে এসেছে। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া ঘুষের বিনিময়ে পুলিশের চাকরি দেয়ার অনিয়মটাও দূর করতে হবে। সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আমানউল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি চান তবে এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এটা যতো তাড়াতাড়ি করা যায় আমাদের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য ততোটাই মঙ্গলজনক হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • রফিক ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৩৪ এএম says : 0
    এদের জন্যই আজ দেশের আইন-শৃংখলার এই করুণ অবস্থা।
    Total Reply(0) Reply
  • কাসেম ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৩৫ এএম says : 0
    অপরাধী যেই হোক না কেন তার শাস্তি হওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • হাবিব ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৩৫ এএম says : 0
    এভাবে চলতে পারে না..................
    Total Reply(0) Reply
  • Jesmin ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৩৬ এএম says : 0
    dolio kaje babohar kora hole tara o beporoua hobe e
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: থামছেই না কিছু পুলিশের অপরাধ

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ