পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতা শফিক রেহমান ১৯৯৩ সালে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবসের ওকালতি করে দেশ, সমাজ এবং পরিবারের পরিবেশ নষ্ট করেছেন। এবার ২০১৬ সালে তিনি সরকারের মন্ত্রণালয় বিশেষের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য তৎপর হয়েছেন। নর-নারী বিশেষ করে এ দেশের একশ্রেণীর যুবক-যুবতীর মানসিক বিকৃতি ঘটিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, এবার ২০১৬ সালে ‘ভালোবাসা মন্ত্রণালয়’ নামে একটি মন্ত্রণালয় খোলার জন্য জোর ওকালতি করেছেন। তার এই ওকালতি ঢাকার একটি বাংলা দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাপা হয়েছে। তিনি জোরের সাথে বলেছেন, যদি আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে এই মন্ত্রণালয় তিনি প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বেন। আর বর্তমান আওয়ামী সরকার যদি তার এই আইডিয়াকে ছিনতাই করে একটি মন্ত্রণালয় বানায় তাহলে তিনি তাদেরকে মোবারকবাদ জানাবেন।
১৪ই ফেব্রুয়ারি : রক্তাক্ত ১৪ই ফেব্রুয়ারি
বিএনপি নেতা শফিক রেহমান কি জানেন যে, জনগণের মাঝে তার সম্পর্কে সাধারণ পারসেপশন কী? তাকে অনেকে বলেন, লাল গোলাপ শফিক। তাকে অন্যেরা বলেন, লারে লাপ্পা শফিক। হয়ত তিনি জানেন, অথবা জানেন না যে, এই ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের ঝা-া উড্ডীন হয়েছে এক রক্ত¯œাত হৃদয়বিদারক দিবসের ওপর পাড়া দিয়ে। তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন জেনারেল এরশাদ। এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ তিনি বিএনপি সরকারের প্রধান প্রেসিডেন্ট জাস্টিস আব্দুস সাত্তারের কাছ থেকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক শাসনের অবসান ও শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের দাবিতে তুমুল ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়।
১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলনের এক অগ্নিঝরা দিন। ১৯৮৩ সালের এই দিনে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সূচিত হয়েছিল প্রথম বড় ধরনের আন্দোলন, যা মধ্য ফেব্রুয়ারির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। সেই থেকে দিনটি স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে নানা আয়োজনে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ’৯২-এর পর থেকে এই শফিক রেহমানদের ‘ভ্যালেন্টাইন্স’ প্রোপাগান্ডার প্রভাবে নতুন প্রজন্মের চেতনায় দিবসটি নাড়া দিতে পারছে না। পশ্চিম থেকে আগত এই বিকৃত মানসিকতায় ভেসে যাচ্ছে রক্তের অক্ষরে লেখা এক গৌরবময় সংগ্রামের ঐতিহাসিক দিন। দিনটি এখন পরিণত হয়েছে ভালোবাসা দিবসের নামে বহুজাতিক কোম্পানির পণ্য বিক্রির দিন হিসেবে। নতুন প্রজন্ম বুঝতে পারছে না, ফাগুনের এই আগুনঝরা দিনের সঙ্গে মিশে আছে ১৯৮৩ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহীদ জাফর, জয়নাল ও দিপালী সাহার লাল টকটকে রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হওয়ার কাহিনী। এই ৩ তরুণ-তরুণী তাদের জীবন দিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে (এরশাদ) প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। রক্তের অক্ষরে যারা আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াইয়ের সূচনা করেন, ভ্যালেন্টাইনের নেশায় তাদের জন্য অবহেলা ছাড়া আমরা কিছুই দিতে পারিনি। ১৯৮৩ সালের এই দিন মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন ছাত্র। এই ছাত্রহত্যার পর সামরিক সরকার নি¤েœাক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
১. সভা, শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এবং মেট্রোপলিটন ঢাকার অবশিষ্ট এলাকায় রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।
পরদিন ১৫ই ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্ররা সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত হয়। সামরিক আইন ভঙ্গ করে তারা একটি শোভাযাত্রা বের করে। এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ধ্বনি দিতে দিতে তারা একযোগে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পুলিশ কার্জন হল সংযোগস্থলে বাধা দেয়। বাধা পেয়ে ছাত্ররা পুলিশের প্রতি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ হোস পাইপের সাহায্যে পানি নিক্ষেপ করে। সেটি ব্যর্থ হলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’... (দৈনিক ইত্তেফাক : ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ১৯৮৩)
১৭ বছর আগে বনাম
১০ বছর আগে
ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালনের ইতিহাস ১৭৪৭ বছর আগেকার। এতদিন আগের কথা ইতিহাসে পড়ে শফিক রেহমান এই দিবসটি বাংলাদেশে চালু করার জন্য গলদঘর্ম হয়েছেন এবং ১৯৯৩ সালে এই দিবসটির পক্ষে প্রচার শুরু করেছেন। অথচ এর মাত্র ১০ বছর আগে ১৯৮৩ সালের একই দিন অর্থাৎ ১৪ই ফেব্রুয়ারি এই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নেমে যে ৩টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল, সে কথা বিলাত ফেরত শফিক রেহমান বেমালুম ভুলে গেলেন? আর যাবেন না কেন? তিনি তো তার ইংরেজি এবং বিলেতি কায়দায় রপ্ত। দেশে ফিরে তিনি তার মস্তিষ্কজাত কালচার থেকে ভ্যালেন্টাইন্স উগরিয়ে দেন। স্বৈরাচারের সহায়তায় সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’-এ প্রেমের বন্যা ছুটিয়ে দেন। তারই বিষময় পরিণতিতে আজ সমাজদেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে পরকীয়া, অজাচার ও ভ্রষ্টাচারের বিষবাষ্প।
প্রেম বনাম বিয়ে : একটি
উৎকট ডাবল স্ট্যান্ডার্ড
ভ্যালেন্টাইন বা ভালোবাসা দিবসের প্রবক্তারা যে লেকচার দেন তার নির্যাস দাঁড়ায় নিম্নরূপÑ
প্রেমেতে মজিলে মন
মানে নাকো হাঁড়ি ডোম
এইসব তথাকথিত প্রগতিবাদী, যারা প্রগতির ঝা-া উঁচিয়ে সাম্যবাদী প্রেমের ধ্বজা ওড়ান, তারা কি তাদের ভার্সিটিপড়–য়া কন্যাদের সাথে একজন ভার্সিটিপড়–য়া ছাত্রের বিয়ে দেবেন? সমাজে কিন্তু বলা হচ্ছে যে, বিবাহযোগ্যা কন্যার জন্য উপযুক্ত পাত্র হিসাবে বিসিএস অফিসার, মিলিটারি অফিসার, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, অথবা লব্ধপ্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে মোটা বেতনে চাকরিরত অফিসার চাই, সেখানে একজন ভার্সিটিপড়–য়াকে কোন অবস্থাপন্ন গার্জিয়ান তাদের জামাই করতে রাজি হবেন? এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীর প্রেমকে উৎসাহিত করে এ ধরনের আঁতেলরা কি ভবিষ্যতে ওই ছাত্র বা ছাত্রীর বিয়ের জন্য একটি সমস্যা পয়দা করেন না? এছাড়া ‘জয়তু ভালোবাসা’ বলে তারা ভালোবাসার যে ঢালাও সবক দেন, তার ফলে কি গোপন প্রণয়কে উৎসাহিত করা হয় না? গোপন প্রেমের ক্যাটাগরিতে যারা পড়ে তারা হলো Ñ ১. অবিবাহিত তরুণ-তরুণী, ২. বিবাহিত রমণী ও অবিবাহিত যুবক, ৩. বিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত কুমারী, ৪. পরকীয়া প্রেম অর্থাৎ বিবাহিত পরস্ত্রী ও বিবাহিত পরপুরুষ। এরাও তো প্রেম করে। এদের ব্যাপারে এখন এসব সমাজপতি কী বলবেন? হায় মহব্বত জিন্দাবাদ? যদি বিবাহিত পরপুরুষ ও পরস্ত্রী গলা ফাটিয়ে গেয়ে ওঠেÑ
‘প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে
বাঁধন খুলে দাও, দাও দাও দাও।
ভুলিব ভাবনা পিছনে চাব না
পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও।’
তাহলে তারা কী বলবেন? তসলিমা নাসরিনের কি ভাবশিষ্য হবেন? একটা করে ঘর ভাঙবে আর টপাটপ একটা করে বিয়ে? নাকি তসলিমা নাসরিনের থিওরি অনুযায়ী বিয়েশাদির কোনো বালাই নেই? ভ্যালেন্টাইন্স ডে কি সেই তসলিমা থিওরিকে বাষ্পায়িত করার নিরলস ‘সংগ্রাম’ (?)?
ভালোবাসার নামে চটকদার বুলি
ভালোবাসা উদ্দাম, ভালোবাসা উত্তাল, ভালোবাসা মানে না কোনো বাধা-বন্ধন। এসব চটকদার বুলি আমরা শুনে আসছি অনেক দিন আগে থেকে, সেই বুদ্ধি-বয়স থেকে। কিন্তু সেসব কথা তো সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ কোনোদিন আমল দেয়নি। কিন্তু আজ ওইসব প্রেম-সংকীর্তন সমাজদেহের এখানে-সেখানে গেড়ে বসছে কেন? মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে চোখের সামনে ঘটে গেল চিত্রনায়ক সালমান শাহ্’র রহস্যময় মৃত্যু। এই মৃত্যুর সাথে জড়িত বলে শোনা গেল বেশ কয়েকটি আলোচিত নাম। এদের মধ্যে ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি এবং একজন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা। শোনা গিয়েছিল এক ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী। কিন্তু তারপর যা হওয়ার তাই হলো। রহস্যের জট খুলল না। সালমান শাহ্ মরে গেছেন। মরে গিয়ে হয়ত আকাশের ওই মিটিমিটি তারার মাঝে মিলিয়ে গেছেন। চিত্রনায়িকা দিতির স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। পত্র-পত্রিকার পাতায় কয়েকদিন ঝড় উঠেছে। তারপর যথা পূর্বং তথা পরং। সেই হত্যাকা-ও বিস্মৃতির অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। এখানেও এসেছিল একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর নাম। তিনি সমাজে বাধাহীনভাবে ঘুরে বেড়ান। এই ধরনের অসংখ্য কাহিনী, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, পরকীয়া প্রেম, বিবাহ-পূর্ব অনাচার-অযাচার এবং ভ্রষ্টাচার এই সমাজের জন্য ধীরে ধীরে গা-সওয়া হয়ে যাচ্ছে। অবাধ প্রেম এবং বাধাহীন উচ্ছৃঙ্খলতাকে, মনে হচ্ছে, মহলবিশেষ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির রাবার স্ট্যাম্প মেরে দিচ্ছে। আর সেই বৈধতার সিল মারার উছিলা হিসেবে আমদানি করা হয়েছে পশ্চিম দুনিয়া থেকে অবাধ মেলামেশা ও যথেচ্ছাচারের প্রতীক ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। গাঢ় মমতায় প্রেমপিয়াসীরা ওটার নাম দিয়েছেন ‘ভালোবাসা দিবস’। মোহাম্মদ রফির উর্দু/হিন্দি গানের স্পিরিট বিধৃত হয়ে ওঠে ভালোবাসার অসংখ্য কবিতায়, যেগুলো বিশালভাবে প্রচার পায় ভ্যালেন্টাইন্স ডেতেÑ
প্রবল-পবনে তরঙ্গ তুলিল
হৃদয় দুলিল, দুলিল দুলিল-
পাগল হে নাবিক, ভুলাও দিগি¦দিক
পাল তুলে দাও, দাও দাও দাও॥
কতছবি কত গান
বাংলাদেশে অতি সম্প্রতি যেসব ত্রিশোর্র্ধ্ব তন্বী তরুণী শিখর দশনারা যৌবনের বাধাহীন বিজয় বৈজয়ন্তী উড়িয়ে সমাজে নৈরাজ্যের ঝড় তুলেছেন তাদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে মনে পড়েছে কয়েকটি নাম। সর্বাগ্রে মনে পড়ছে মরহুম এসপি বাশারের অনন্ত যৌবনা বিধবা পতœী মনিকে। মনে পড়ছে তিন সন্তানের জননী এক উচ্চপদস্থ সাবেক আমলাকন্যা এবং বিত্তশালী ব্যবসায়ীর ঘরণী ফৌজিয়া নাজকে। মনে পড়ছে নিম্নবিত্তের অর্ধাঙ্গিনী আপন দুই আত্মজের কলঙ্কিনী মা যৌবন মদমত্তা আয়েশা বেগমকে। মনে পড়ছে সুঠাম দেহসৌষ্ঠবের অধিকারিণী কিশোরী কন্যার জননী বিসিএস ক্যাডার মরহুমা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেদা বেগমকে। মনে পড়ছে হতভাগ্য প্রেমপিয়াসী মৃত নূর নাহার কাজলকে। কত ছবি কত গান।
মুন্নী ভাবী বা ফৌজিয়া নাজরা প্রেমের জোয়ারে যখন পাল তুলে দেয় তখন তাদের অঙ্গের বসন স্খলিত হয়, অঞ্চল যায় উড়ে। হায় মহব্বত জিন্দাবাদের মতোই লাজলজ্জা উধাও হয়, সাজসজ্জা ঘুচে যায়।
মনি আয়েশা বেগমরাই সম্ভবত কবির কাছে চিত্রিত হয়েছে ‘নন্দন বাসিনী উর্বশী’ হিসেবে। ওরাই যুগযুগান্তর হতে বিশ্বের ‘প্রেয়সী, অপূর্ব শোভনা উর্বশী’! তারা চিহ্নিত হয়ে আছে ‘বৃন্তহীন পুষ্পসম আপনি বিকশি উর্বশী’। ওরা ‘সুর সভাতলে নৃত্যরত পুলকে উল্লসী/ বিলোল হিল্লোল উর্বশী’। এই কলামে আসবে আরো কয়েকটি চরিত্র তখন দেখা যাবে ওরা ‘স্বর্গের উদয়াচলে মূর্তিমতী উর্বশী/ ভুবন মোহিনী উর্বশী’।
ওরা কি কোনোদিন বালিকা বয়সী মুকুলিকা ছিল না? নাকি ওরা জন্ম থেকেই ‘অখিল মানসস্বর্গে অনন্ত রঙ্গিনী/ স্বপ্ন সঙ্গিনী নিষ্ঠুরা বধিরা উর্বশী’? এইসব ‘গৌরবশশীরা’ কোনোদিন কি ‘অস্তাচলবাসিনী’ হবে না? প্রেমকুঞ্জের নিভৃত প্রকোষ্ঠ ছেড়ে এইসব অযাচার সংবাদপত্র তথা জনারণ্যে আসত না যদি তার সাথে সহিংসতা না থাকত অথবা জাতীয় স্বার্থ জড়িত না থাকত। এই অনাচার এবং ভ্রষ্টাচার বিষবৃক্ষের রূপও ধারণ করত না যদি শুদ্ধাচারের প্রতি বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট এবং সুদৃঢ় নৈতিক কমিটমেন্ট থাকত। সমাজ, পরিবার এবং লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে এই ধরনের কত যে দুরাচার হচ্ছে, কয়জন তার খবর রাখে? আপনার আশপাশে যদি এ ধরনের অনৈতিক ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে আপনি হয়তো বিষয়টিকে এড়িয়ে চোখের মণি ঊর্ধ্বাকাশে তুলে যান। কিন্তু তাদের স্বৈরিণী আচরণের জন্য যদি এসপি বাশারকে নিভে যেতে হয়, যদি সফিউল্লাকে সর্বস্বান্ত হয়ে পথে পথে ঘুুরতে হয়, যদি সাহিদা এবং নূরনাহার কাজলকে অমূল্য জীবন দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, তাহলে সমাজ এবং রাষ্ট্র আর সেখানে নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারে না। রাষ্ট্রকে তথা প্রশাসনযন্ত্রকে সেখানে খুঁড়ে খুঁড়ে পূতিগন্ধময় আবর্জনা বের করতে হবে।
রসাতলে যাচ্ছে সমাজ
কতিপয় জ্ঞানপাপী মানুষ আমাদের সরলপ্রাণ তরুণ-তরুণীর কুসুমকোমল হৃদয়বৃত্তিকে উস্কিয়ে দিয়ে যে সামাজিক নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ, সেটা কি তারা একবারও চিন্তা করেছেন? এমন যদি হতো যে, এই তথাকথিত ‘ভালোবাসা দিবস’ বা ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ বাংলাদেশের সুদীর্ঘকালের সামাজিক ঐতিহ্যে লালিত অথবা ধর্মীয় আচার-আচরণ ও রীতিনীতি থেকে উৎসারিত, তাহলেও না হয় একটি কথা ছিল। কিন্তু যে ঘটনার সাথে আমাদের শিকড়ের কোনো সম্পর্ক নেই, নৃতত্ত্বের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই, সেই শিকড়বিহীন একটি উড়ে আসা অপসংস্কৃতির প্রচ্ছায়া নিয়ে কেন আমাদের এই মাতামাতি?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।