পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলার মুক্তারপুরের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছোড়া মুহুর্মুহু টিয়ারশেল, রাবার বুলেট গুলি এবং ইটপাটকেলের আঘাতে উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিএনপি নেতাদের দাবি, পুলিশের এক কর্মকর্তা তাঁদের কর্মসূচির ব্যানার ছিঁড়ে ফেলায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মুহুর্মুহু ছোড়া কাঁদানে গ্যাস, গুলি ও রাবার বুলেটে তাঁদের ৭০-৭৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছে। এতে পুলিশের ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নেতাকর্মীদেরকে হত্যা ও জখমের প্রতিবাদে কেন্দ্রের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার বেলা ৩টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে যোগ দিতে মিছিল নিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর এলাকায় আসেন। এসময় পুলিশ তাদের সেখানে অবস্থান নিতে বাধা দেয়। মুক্তাপুর থেকে পরে নেতাকর্মীরা ট্রাকে করে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় যান। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল আসতে শুরু করে। এ সময় মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বিএনপির একটি মিছিলের ব্যানার ধরে টান দেন। এতে নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। প্রথম দিকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিএনপির ইটপাটকেলের জবাবে গুলি ছোড়ে পুলিশ। তবে পরবর্তী ৩৫ মিনিট পুলিশকে কোণঠাসা করে ফেলেন বিএনপির কর্মীরা। তিন দিক থেকে ছোড়া ইটপাটকেলে বেশ কয়েকজন আহত হন।
কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পিছু হটতে হটতে ধলেশ্বরী নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।
তারা হলেন- মিরকাদিম পৌর বিএনপির কর্মী মোহাম্মদ শাওন, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন। পথচারী আলমগীর হোসেন জানান, বিকেলে মুক্তারপুর ব্রিজের পাশে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় জাহাঙ্গীরকে। তার মুখমন্ডলে গুরুতর জখম হয়েছে। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়।
এছাড়া আহত অন্য নেতাকর্মীরাও কেউ মুন্সীগঞ্জ জেলা হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। বিকেল চারটার দিকে পুলিশের একাধিক দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি কাজী সাব্বির আহমেদ ও দৈনিক দিনকালের জেলা প্রতিনিধি গুলজার হোসেন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন হিসেব পাঁচ-সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সদর উপজেলা বিএনপি’র সমাবেশে জনগণ ও নেতাকর্মীরা জমায়েত হলে বিনা উস্কানিতে পুলিশ হামলা চালিয়ে ও নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে শতাধিক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করেছে। আহতদের মধ্যে বিএনপি নেতা শাওন, যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর, ছাত্রদল নেতা তারিক, বিএনপি কর্মী শিপন, তপন, রুবেল, সোহেল, হাফিজুল, হাসান গুলিবিদ্ধ হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে অনেককেই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মিনহাজ উল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান, পরিদর্শক মোজাম্মেল হক, উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাসার, ফরিদুল হাসান, লিটু গাজী, ফাইজুর রহমান, কাজল দাস, মাইনুদ্দিন সুকান্ত বাউল, আনিসুল হক, অজিত, কনস্টেবল রায়হানসহ অন্তত ২০-২৫ জন। বিএনপি নেতা-কর্মীরা মুন্সিগঞ্জ জেলা হাসপাতালে না যাওয়ায় তাঁদের নাম জানা যায়নি।
জেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, পুলিশের অনুমতি নিয়েই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছিলাম। বেলা তিনটার দিকে আমাদের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে মুক্তারপুর এর দিকে আসছিলেন। তখন পুলিশ আমাদের লোকজনকে মিছিল করতে নিষেধ করে। আমাদের লোকজন মিছিল করা বন্ধ করে দেয়। সে সময় পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিছিল থেকে ব্যানার টেনে ছিঁড়ে নিতে চায়। তখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পুলিশ আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। পরে আমাদের লোকজন আত্মরক্ষার জন্য ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং গুলি ছুড়তে থাকে। এতে আমাদের অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে আহত একজনের অবস্থা গুরুতর।’
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, পুলিশ সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। বিএনপির নেতা-কর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। তাঁদের নিষেধ করায় তাঁরা আরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা মুক্তারপুর ফেরীঘাট এলাকায় জড়ো হচ্ছিল। এ সময় দু’দিক থেকে পৃথক দু’টি মিছিল আসছিলো। হঠাৎ পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। মিছিলের ব্যানার কেড়ে নেয় ও লাঠিচার্জ করে। এতে সংঘর্ষ বেধে যায়। আমাদের ৭০-৭৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।