পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আন্দোলনের ‘রিহার্সেল চলছে, ফাইনাল খেলা’ এখনো শুরু হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র্র রায়। তিনি বলেন, ওবায়দুর কাদের (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক) প্রায় বলেন, আমাগো আন্দোলন করার মোরদ নেই, আন্দোলন নিয়ে কত কথা কয়। এতো কথা আপনি বলেন কেনো? এটা মাত্র তো রিহার্সেল, এখনো তো ফাইনাল খেলা আমাদের নেতা-কর্মীরা শুরু করেনি।
গতকাল বুধবার বিকালে মিরপুরে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন। মহানগর উত্তর মিরপুর জোনের উদ্যোগে জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জের শাওন প্রধানের হত্যা, পল্লবীসহ সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচির হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে যারা আছেন, জনগণের পক্ষে থাকেন। আমাদের সাথে মিছিল করার দরকার নেই। লুটেরা-খুনি এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য অতি উৎসাহ প্রকাশ করলে এর জবাব দিতে জনগণ বাধ্য হবে। এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের কারো রক্ত বৃথা যেতে পারে না। অতীতে কারো রক্ত বৃথা যায়নি। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, গণতন্ত্র এনেছি; রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতা রক্ষা করব এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।
তিনি বলেন, দেশী-বিদেশী আর প্রতিবেশী এবং আপনাদের আশেপাশে কিছু সংস্থার লোকরা ঝুঁড়ি নিয়ে নেতাদের বাসায় যায়, আর দুই’শ আসন শেখ হাসিনার জন্য...। আসন কী কারো বাপের? যে দেশের লোকেরা এটা করেন, আমরা কি তাদের দেশে বাস করি? স্বাধীন বাংলাদেশে কূটনৈতিক সৃষ্টাচার মেনে চলবেন। আমাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবেন না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে আহ্বান থাকবে, জনগণের গণতান্ত্রিক এই লড়াইয়ে বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকুন। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমরা গণতান্ত্রিক বিশ্বের সদস্য হিসেবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার প্রশ্নে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমাদের কাল ক্ষমতায় এনে দিতে হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে ক্ষমতায় বসাবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের একটি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব আপনি নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে-এ কথা বলেছিল সুজাতা সিং। কিন্তু সম্প্রতি, ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার বললেন আমরা কোনো ব্যক্তি বা দলের পক্ষে নয়। বহুদিন পরে বলল, এ কথাটার মানে বুঝতে হবে। তারা এই বোঝা বহন করে আর কলঙ্কিত হতে চায় না। কারণ, তারাও একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তাদেরও তো অন্যান্য দেশের সাথে চলতে হয়। জবাব দিতে হয়। সুতরাং শেখ হাসিনার সব খেলা শেষ। সাহায্য আনতে গিয়ে সাহায্য পায়নি-নিশ্চিত থাকেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, এখন দিনের ভোট রাতে কাটারও লোক নেই। সে কারণে ভোট দিনেই হবে। শেখ হাসিনাকে ছাড়াই হবে অর্থাৎ তার পদত্যাগ নিশ্চিত করতেই হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে জেগে উঠেছেন, সামনে এগুবার পথটা অব্যাহত রাখতে হবে। যদি চিকন লাঠিতে না পোশায়, এরপরে প্রত্যেকের হাতে মোটা মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামবেন। কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। আমার ভাই মরেছে, মরতে হয় আমিও মরব। তবে, রক্তের ঋণ পরিশোধ করব। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।
দেশে শতকরা ৫ ভাগ পুলিশ খারাপ উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যদের বলব, আপনাদের ভুল বোঝানো হয়। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আপনাদের চাকরি থাকবে না। এটা অত্যন্ত ভুল ধারনা। আমরা জানি কোনটা ইচ্ছায় কোনটা অনিচ্ছায়। এই কাণ্ডজ্ঞান বিএনপির নেতাদের আছে। সবার তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যাবে। আমাদের শত্রু ভাববেন না, আপনারা জনগণের পক্ষে আসেন। জনগণ আপনাদের সম্মান করবে। মনে করবেন না, আপনাদের পোশাককে ভয় করে, তারা আপনাদের পোশাককে সম্মান করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যে খালেদা জিয়া ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গণতন্ত্র এনে দিয়েছে। তাকে বিনা কারণে জেল খানায় আটক করা হয়। যে তারেক রহমানের কোনো মামলা প্রমাণিত হয় না, তারপরও আদালত শেখ হাসিনাকে খুশি করতে তাকে দণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছে। তিনি এখন দেশের বাইরে থেকে চলমান আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাকে সহযোগিত করতে আপনারা আন্তরিকতা ও সফলতার স্বার্থে ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। ওরা পরাজিত হবে, পালাতে চাইবে। কিন্তু পালাতে দেব না। বিজয় আমাদের হবেই।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বক্তব্যের পর্ব অনেক হয়েছে, বক্তব্যে সরকার যাবে না। আর বক্তব্যে দেশ স্বাধীন হয়নি। দেশ স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধে, সেই যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলন জিয়াউর রহমান এ কথা সঠিক? উপস্থিত নেতারা সমস্বরে বলেন ঠিক।
গয়েশ্বর চন্দ্র আরো বলেন, এই সরকার কোনো কিছুর দাম কমাবে না। আমাদের প্রথম দায়িত্ব এই সরকারকে নামানো। এরপর অবাধ সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণ যাদের ক্ষমতায় বসাবে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম কমাবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। এই আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কোনো দাবি করে লাভ নেই। তাই, জনগণের দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই সমাবেশে আসার সময় আপনাদের হাতে ছোট ছোট লাঠির মাথায় পতাকা ছিল। পুলিশ তা রেখে দিতে চেয়েছিল। আপনারা দেননি। এরপর মোটা মোটা বাঁশির লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। প্রত্যেকের হাতে লাঠি থাকবে। কাউকে আঘাত করার জন্য নয়; আমাদের চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের আত্মরক্ষার জন্য। আঘাত আসলে তো পাল্টা আঘাত করতেই হবে। সেখানে তো ছাড় দেওয়ার কোনো উপায় নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গত দুটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল,বনানীতে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে তার ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই এর চেয়ে শান্তিপূর্ণ কী কর্মসূচি হতে পারে। সেখানে তাবিথ আাউয়ালের মতো সুশিক্ষিত এবং তরুণ নেতার হামলা করল। তাবিথ কে তা আওয়ামী লীগ ভালো করে জানেন। তার ওপরে আঘাত করার পর দেশে-বিদেশ থেকে প্রতিবাদ এসেছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বহু দেশ থেকে প্রতিবাদ এসেছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাবিথ আউয়াল ও বরকত উল্লাহ বুলু কে আঘাত করেছে? তাদের ধরেন। জনগণের সামনে বলবেন এক কথা আর কানে কানে বলবেন ভিন্ন কথা। মানুষ এগুলো বুঝে। নুরে আলম, আবদুর রহিম, শাওনকে কারা হত্যা করেছে? কর্মসূচি ছিল না, তারপরও কেন কেরাণীগঞ্জে আমার বাড়িতে হামলা করা হলো? নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাসুদের বাড়িতে রাতে আগুন দেওয়া হলো, বই পুড়িয়ে দেওয়া হলো, কী কারণে? কেন তার বাবা-মায়ের গায়ে হাত তোলা হলো। কেন তার শিশু ভাইকে নির্যাতন করা হলো? আপনারা আমাদের বাড়িঘরে আক্রমণ করেন, আপনাদের বাড়িঘরও কিন্তু আমরা চিনি। পাল্টা কাজটা যদি আমরা শুরু করি পালানোর জায়গা পাবেন?
তিনি আরো বলেন, আমরা এখনও আন্দোলন শুরু করিনি। কিন্তু শুরু করলে...। ওবায়দুল কাদের জেল খানা থেকে (ওয়ান ইলেভেন) ফিরে এসে বলেছিলেন আর রাজনীতি করব না। সেই দিনগুলি সামনে আসতেছে। সেই কথা বলার সময় এসেছে।
সমাবেশে খালেদা জিয়া, তারেক রহমাননের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিল নিয়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, তাবিথ আউয়াল, বজলুল বাছিত আঞ্জু, নাজিম উদ্দিন আলম, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, রফিকুল আলম মজনু, মামুন হাসান, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, রাজীব আহসন, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।