Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেন প্রকল্প আবারো বাড়ল সময় ও ব্যয়

আড়াই বছরের প্রকল্পে ৭ বছর ব্যয় বেড়েছে ১৭শ’ কোটি টাকা ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে নির্মাণকাজ

প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পলাশ মাহমুদ : আড়াই বছরের প্রকল্পে পার হয়েছে ছয় বছর। দুই হাজার কোটি টাকার স্থলে তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে ১১শ কোটি টাকা (৬০ শতাংশ)। কিন্তু তাতেও শেষ হলো না ১৯২ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের কাজ। শেষ মুহূর্তে এসে আবারও এক বছর (ডিসেম্বর, ২০১৬) সময় বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৬২৬ কোটি টাকা। এ নিয়ে প্রকল্পটির সময় নির্ধারণ হলো সাত বছর। আর ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ (১৭শ’ কোটি টাকা)। তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী ইবনে হাসান আলম দায়িত্ব নেয়ার পরে কাজের গতি সন্তোষজনক।
এদিকে আগামী মে মাসে প্রধানমন্ত্রী চার লেন উদ্বোধন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত মাসের ৩ তারিখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় নির্মিত ‘কার আন্ডারপাস’ উদ্বোধনকালে মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী মে মাসের শেষ দিকে ইনশাআল্লাহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফোর লেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।’
তবে এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর্যায়ে নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সে কারণে নতুন করে সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত (১ বছর) সময় ও ৬২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
তবে গতকালের সভায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেক সভায় প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার সময় তিনি এ তাগিদ দেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’
অন্যদিকে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে হাসান আলম দায়িত্ব দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। নির্ধারিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ শেষ করার জন্য তিনি নিয়মিত মনিটরিং করছেন। একই সাথে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। প্রকল্পটি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে হাসান আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন ফিনিশিংযের কাজ চলছে। ১০টি প্যাকেজের মধ্যে কয়েকটি প্যাকেজের কাজ সামান্য বাকি আছে।’ তবে এগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের দরপত্রে ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের জুন মাসের মধ্যে (আড়াই বছর) কাজ শেষ করা কথা। কিন্তু আড়াই বছরে প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। পরে দেড় বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদাররা। ফলে পুনরায় ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের মধ্যেও কাজ করতে ব্যর্থ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর পর ২০১৫ সালের ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য সময় নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। তৃতীয় দফা সময় বৃদ্ধির পর কাজ শেষ করতে না পারায় গতকাল পুনরায় সময় বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০০৫ সালে এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। ২০১০ সালে প্রথম দফায় ২১৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় ব্যয় বাড়ানো হয় ২০১২ সালে। তখন প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। এর পর ২০১৩ সালে তৃতীয় দফায় ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। তিন দফা মিলে মোট ১১শ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি হয়, যা মূল ব্যয়ের চেয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৬০ শতাংশ। আর সর্বশেষ গতকাল ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়।
গত জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের ১৯২ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। সড়কের দু’দিক ফিনিশিংয়ের কাজের বাকি ২৭৪ কিলোমিটার আগামী মে মাসের আগেই শেষ হবে। এছাড়া মহাসড়কে ১৪টি বাইপাস, ২৩টি সেতু ও ২৩০টি কালভার্ট নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে কিছু কাজ এখনো বাকি যা এ বছরের মধ্যে শেষ হতে পারে। এর মধ্যে তিনটি রেলওয়ে ওভারপাসের মধ্যে কোনোটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। ফেনীর ওভারপাসের সংযোগ সড়কের কাজই শুরু হয়নি। সব মিলিয়ে রেলওয়ে ওভারপাসের কাজ ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল আনাম বলেন, দুটি প্যাকেজের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে; জুনের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। তবে ফেনী রেলক্রসিং অংশের বাস্তবায়ন কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। এ জন্য বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। পুরো কাজ শেষ করতে এক বছর সময় প্রয়োজন।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন এলাকাগুলোর মধ্যে প্রকল্পের ২, ৩ ও ৫ নম্বর প্যাকেজের কাজ অনেক পিছিয়ে। এসব প্যাকেজের কোনো কোনো অংশে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র। কোনো কোনো অংশে লেভেলিংয়ের কাজ চলছে। আবার কিছু কিছু স্থানে লেভেলিংয়ের কাজ শেষ হলেও পিচ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়নি।
প্রকল্পের কাজের ধীরগতির পেছনে সংশ্লিষ্টরা বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে ঠিকাদারের ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব, অব্যবস্থাপনা, ঠিকাদারের বিল আটকে থাকা, ঠিকাদারদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, কিছু ডিজাইন চূড়ান্ত না হওয়া। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক বলেন, মূলত পাথর সংকটের কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় তিন মাস কাজ বন্ধ ছিল পাথর সংকটে। তবে চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করা যাবে।
অন্যদিকে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দেরি হওয়ায় সরকারের প্রায় ১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডির প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। আর প্রকল্পের কাজে বিলম্ব হওয়ায় বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সংগঠনটির সভাপতি হোসেন খালেদ এই ক্ষতির কথা জানান। এসময় তিনি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের (সওজ) বরাত দিয়ে বলেন, শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ দেরি হওয়ার কারণে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। তাই অবিলম্বে এ মহাসড়ক দুটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
২০০৬ সালে একনেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কটি দুই লেন থেকে থেকে চার লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। ২০০৯ সালে ১১ জুন এ প্রকল্পের ১০টি প্যাকেজের জন্য পৃথক দরপত্র আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। সওজের প্রাক্কলনের চেয়ে কম দর প্রস্তাব করায় ৭টি প্যাকেজের কাজ পায় চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। ২টির কাজ করছে দেশীয় রেজা কনস্ট্রাকশন ও বাকি ১টির অংশের কাজ করছে তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেন প্রকল্প আবারো বাড়ল সময় ও ব্যয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ