Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

১। মোহাম্মাদ ফাতহুল বারী ফাইয়্যাজ, খেজুরবাগ, ঢাকা
জিজ্ঞাসা : জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের গুরুত্ব ও মর্যাদা কি?
জবাব : ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ বাইতুল্লাহ শরিফের হজ সমাগত। যাদেরকে আল্লাহতায়ালা তাওফিক দিয়েছেন তারা অনেকেই ইতোমধ্যে তালবিয়া আদায় করতে করতে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছে গেছেন বা সহসাই পৌঁছে যাবেন। হজের দিনগুলোতে হাজী সাহেবান তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, মুযদালেফা, আরাফাতে অবস্থান, মিনায় কংকর নিক্ষেপ, কোরবানি ইত্যাদি বহুবিধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতের আমলসমূহে সদা ব্যস্ত থাকবেন। মূলত দুনিয়াদারির সংশ্রব ত্যাগ করে একান্তভাবে আল্লাহমুখী হয়ে ইবাদতে মশগুল থেকে গুনাহসমূহ মাফ করিয়ে নেয়ার সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকবেন। আর আমরা যারা হজের কর্মে ব্যস্ত নই, তারা তো এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। যারা হজ করছেন না, তাদের জন্য কি এ পবিত্র সময়ে কিছুই নেই। আল্লাহতায়ালা দয়াপরবশ হয়ে আমাদেরকে একেবারে বঞ্চিত করেননি। তিনি আমাদের জন্য কিছু সুযোগ রেখেছেন। প্রথমত দশই জিলহজ কোরবানির ঈদের দিন হাজী সাহেবান যেমন কোরবানি আদায় করবেন, আমাদেরও তাদের মতো কোরবানি করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের প্রতি কোরবানি করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, জিলহজ মাসের প্রথম দশটি দিনের আমলকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সূরা আল ফজরের মধ্যে এ দশটি দিনের কসম করেছেন। ‘‘ওয়া লায়ালিন আশর’’ অর্থাৎ দশটি রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশটি দিন বুঝানো হয়েছে বলে মুফাস্সিরীনে কেরামের সম্মিলিত অভিমত। প্রিয় নবীজী (সা.) হাদিস শরিফে এদিনগুলোর ফজিলত প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এ দিনগুলোর আমলের ন্যায় অন্য কোনো দিনের আমল আল্লাহর কাছে এত পছন্দনীয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, এমন কি আল্লাহর পথে জিহাদ করলেও নয়? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করলেও নয়! তবে, যে ব্যক্তি নিজের জানমাল নিয়ে এমনভাবে জিহাদে গিয়েছে যে, আর কোনোটা নিয়েই ফেরত আসেনি (এমন শাহাদাতের মর্যাদা অবশ্য সর্বোচ্চ)-বুখারি। “সেদিন আল্লাহ যত লোককে মাফ করে দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করেন, তা আর কোনো দিন ঘটে না”-মুসলিম।
এ দশটি দিনে বেশি বেশি করে নেক আমলের সুযোগ হাত ছাড়া করা নিশ্চয়ই ঠিক হবে না। এ সময়গুলোতে কি কি আমল করা উচিত। নফল আমলের মধ্যে সর্বোচ্চ হলো নফল সালাত, বিশেষ করে সালাতুত্ তাহাজ্জুদ। কোরআন তেলাওয়াত, জিকর, ইস্তেগফার, দোয়া ও দরূদ ইত্যাদি। এ সময়ে নফল রোজার আমল করা খুবই উত্তম। দশ তারিখে যেহেতু ঈদ হওয়ার কারণে রোজা রাখা হারাম, তাই সেদিনটি বাদ দিয়ে তার পূর্বের ৯টি দিন রোজা রাখার চেষ্টা করা খুবই উত্তম ইবাদত। যারা ৯ দিন রোজা রাখতে পারবেন না, তারা অন্তত ৯ জিলহজ আরাফাতের দিন এবং সম্ভব হলে তার পূর্বের দিনটির রোজা রাখার চেষ্টা করা উচিত। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “আরাফাতের দিনের রোজা গত এবং আগামী এ দুই বৎসরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়ার কারণ হয়ে যায়’’-(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)।
প্রিয় নবীজী (সা.) জিলহজ মাসের প্রথম দশটি দিনের রোজা (ঈদের দিন ছাড়া) রাখা কখনও ছাড়েননি-(আহমদ, নাসায়ী)। এ দশ দিনের সর্বশেষ দিনটি কোরবানির ঈদ। ইবরাহীম (আ.)’র কোরবানির এ সুন্নাতকে আল্লাহতায়ালা আমাদের ন্য জারি করে দিয়েছেন। আর তাতে আমাদের জন্য রেখেছেন নেকি অর্জনের অফুরন্ত সুযোগ। কোরবানির এ বিশাল সওয়াবের কথা উল্লেখ করে প্রিয় নবীজী (সা.) ইরশাদ করছেন, “কোরবানির ঈদের দিন পশু যবাই করে রক্ত প্রবাহ করার মত আর কোন আমল এত পছন্দনীয় নয় আল্লাহর কাছে। কোরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি সহকারে আসবে বান্দার নেকির ওজন বাড়িয়ে দিতে। পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায় (কবুল হয়ে যায়)। কাজেই পবিত্র মনে কোরবানি কর”-(ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)।
অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, “প্রতিটি পশমে রয়েছে নেকি” (তিরমিজি, আহমদ, ইবন মাজাহ)। এবার চিন্তা করে দেখুন, একটা পশুর কতগুলো পশম রয়েছে। দিবারাত্রি গুনতে থাকলেও কখনও গুণে শেষ করতে পারবেন নি? এত অগণিত পরিমাণ নেকি আল্লাহ দান করবেন কোরবানি করলে। কেউ কেউ প্রশ্ন করে বসেন : বাংলাদেশে যেহেতু গবাদিপশু কম। তাই এতগুলো গবাদিপশু কোরবানি না করে সমপরিমাণ মূল্য গরিব-মিসকিনকে দান করে দিলে হয় না? প্রথমত, শরিয়তের হুকুম যেভাবে এসেছে সেভাবে পালন করার নামই ইবাদত। শরিয়তের হুকুমে পরিবর্তন আনার কোনো ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। দ্বিতীয়ত, প্রথমেই হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, কোরবানির আমলে যে সওয়াব আছে লক্ষ কোটি টাকা দান খয়রাত করেও কোরবানির আমলের সমপর্যায়ের সওয়াব অর্জন করা যাবে না।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ