পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ওভাল অফিসের বাইরে আয়তাকার একটি ছোট কক্ষ। এতে কাঠের সাধারণ দুইটি ডেস্ক পাশাপাশি রাখা। একটিতে বসেন প্রেসিডেন্ট ওবামার পার্সোনাল সেক্রেটারি। অপরটিতে বসেন ব্রায়ান মোসটেলার।
মোসটেলারের কাজ সম্পর্কে খুব কম লোকই জানে। তবে হোয়াইট হাউজের ভেতরে তোলা ছবিগুলো দেখলে তাকে একনজরেই সর্বত্র বিরাজমান হিসেবে দেখা যাবে। হোয়াইট হাউজে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার চেয়ার থেকে প্রেসিডেন্টকে তার ডেস্কে সরাসরি দেখা যায়। তাকে এড়িয়ে কেউ ওভাল অফিসে ঢুকতে পারেনা।
মোসটেলারের সরকারি পদবী হচ্ছে ডিরেক্টর অব ওভাল অফিস অপারেশনস। ওবামা ওয়াশিংটন থাকলে তার প্রতিটি পদক্ষেপ, কার কার সঙ্গে তার সাক্ষাত হচ্ছে এবং কোন কোন বৈঠকে তিনি যোগ দিচ্ছেন সবকিছু যতেœর সঙ্গে দেখভাল করেন মোসটেলার।
ওবামা কোন বৈঠকে টেবিলের কোথায় পানির গ্লাসটি দেখতে পছন্দ করেন এবং পাশে কাকে বসাতে চান সবই জানেন মোসটেলার। তিনি জানেন, ওবামা বক্তব্য রাখার জন্য হোলান দেয়া ডেস্কটির কত উচ্চতা পছন্দ করেন। প্রেসিডেন্ট অতিথিদের কোন ড্রিংক অফার করবেন সে ব্যাপারেও তিনি জ্ঞাত। প্রেসিডেন্ট যেখানেই বক্তব্য রাখুক তিনি ওবামার মন্তব্যগুলো সাজিয়ে দেন এবং প্রথম পাতাটি খুলে রাখেন। কোন সাক্ষাতকারের আগে ওবামার একটি মোজা গোড়ালির ওপর দিকে জড়িয়ে আছে বা তার শার্টটি কুঁচকে আছে তা প্রেসিডেন্টের গোচরে আনেন তিনি।
হোয়াইট হাউজ জয়ের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ঘোষণা দেয়ার আগে নয় বছরের স্মৃতি তর্পনের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে ইলিনয়ে ফেরেন। তিনি যখন হোয়াইট হাউজে প্রবেশে তার ইতিহাস সৃষ্টিকারী আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন তখন ওবামাকে খুব কম লোকই চিনতো। ইলিনয়ে তার জীবনের সেই দিনগুলোর সাক্ষী এখন খুব বেশী নেই।
প্রেসিডেন্টের খুব ঘনিষ্ঠ কিছু কর্মী যারা প্রচারণার সময় নিজের মুহূর্তগুলো উপভোগ করেছেন মোসটেলার তাদের মতো নন। স্প্রিংফিল্ডে ওবামা তার বিখ্যাত ভাষণ দেয়ার পর তিনি শিকাগোতে প্রথমবারের মতো তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এখান থেকেই ওবামা তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। সে সময় মোসটেলার ইচ্ছা করেই নিজেকে আড়ালে রাখতেন।
সহকর্মীরা মোসটেলারকে প্রশাসনের একজন আড়ালের নায়ক হিসেবে প্রশংসা করেন। তিনি হচ্ছেন মানুষের পেছনের মানুষ। তাকে ছাড়া ওবামা হয়তো এ ধরণের বিশ্বজনীন খ্যাতি অর্জন করতে পারতেন না। তিনি এমনই পর্দার অন্তরালের একজন নায়ক।
তিনি সবসময়ই লোপ্রোফইলে থাকতে পছন্দ করেন। অথচ গোটা ওয়েস্ট উইং তার ওপরই নির্ভর করে এবং প্রেসিডেন্টের চেয়ে এটা আর কেউ ভালো জানেন না।
মোসটেলার প্রেসিডেন্টকে খুব ভালোভাবে জানেন। প্রতিটি দিকে তার নজর। প্রেসিডেন্টের দীর্ঘদিনের সিনিয়র উপদেষ্টা ভ্যালিরি জারেট বলেন, প্রেসিডেন্টের প্রতি তার সতর্কতা ও যত্ম সম্পর্কে ওবামা ভালো করেই জানেন। একারণে তার প্রতি প্রেসিডেন্টের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে এবং তার উপর নির্ভরও করেন।
খুবই বিনয়ী স্বভাবের মোসটেলারের রাজনীতিতে খুব বেশী আগ্রহ কখনোই ছিলনা। বরং ছোটবেলায় তিনি প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের ইস্ট হল থেকে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণ মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। লাল কার্পেটে মোড়া পোডিয়াম থেকে দেয়া রিগ্যানের সেই ভাষণ তাকে বিমোহিত করেছিল। তখনই আশ্চর্য হয়ে তিনি ভাবছিলেন কেউ এমন একজন আছেন যিনি পর্দার আড়াল থেকে প্রেসিডেন্টের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ তৈরি করেছেন। তখন থেকেই তার মধ্যে পর্দার আড়াল থেকে কিছু করার ইচ্ছা জেগে উঠে।
কলেজ জীবনে মোসটেলার ক্লিনটনের সময় হোয়াইট হাউজে গ্রীস্মকালীন ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করেন। তখন তাকে একটি অগ্রবর্তী দলের সাথে কিছুটা কাজ করতে দেয়া হয়। ক্লিনটনের পরবর্তী দুই বছরে তিনি প্রশাসনে কাজ করেন।
প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির সঙ্গে স্টাফ হিসেবে দেশের ভেতরে ও বিদেশ সফরের জন্য তিনি দূর থেকেই তার সর্বশেষ কলেজ ক্রেডিট সম্পন্ন করেন। তিনি বিশ্বের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে চাইলেও রাজনীতিকে পেশা হিসেবে নিতে চাননি। তিনি আল গোরের প্রচারণা টিমে কাজ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং ২০০২ সালের অলিম্পিকের জন্য সল্ট লেকের প্রস্তুতিতে সাহায্য করতে পশ্চিমে চলে যান। অলিম্পিকের জন্য সারা বিশ্বে লজিস্টিক্যাল প্লানিংয়ে কয়েক বছর কাজ করার পর মোসটেলার ২০০৭ সালে শিকাগোতে থিতু হন। তিনি সেখানে একটি বাড়ি কেনেন। সেখানে তিনি তৃণমূলে কাজ করতে প্রস্তুত ছিলেন। তখন তিনি একটি ফোনকল পান তাতে জানতে পারেন যে তার নিজ রাজ্যের একজন তরুণ সিনেটর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থীতা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন।
এ সময় ওবামা দুইটি যুগান্তকারী কাজ করার পরিকল্পনা করছিলেন। প্রথমেই তিনি স্প্রিংফিল্ডে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন, এই স্প্রিংফিল্ড থেকেই ১৪৯ বছর আগে আব্রাহাম লিংকন তার প্রার্থীতা ঘোষণা করেছিলেন। এরপর তিনি শিকাগোতে আসেন। দ্বিতীয় ঘটনার পরিকল্পনায় কি মোসটেলার সাহায্য করতে পারবেন। এ সময় মোসটেলাকে অস্থায়ী কাজের প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি গ্রহণ করেন তবে পরিস্কার জানিয়ে দেন যে চিরতরে শিকাগো ছাড়ার কোন আগ্রহ তার তেমন নেই। ওবামা টিমের এই প্রস্তাবের পর তিনি ওবামার সাথে দেখা করেন।
সে সময় তরুণ ওবামার বাগ্মীতা মোসটেলারকে খুব বেশী আকৃষ্ট করেনি যদিও পরে তিনি ওবামার প্রতি এতই বিমোহিত হন এবং অধিকাংশ আমেরিকানের মতোই তিনিও এই তরুণ রাজনীতিককে সমর্থন করেন। তিনি ওবামার প্রতি এতই মুগ্ধ হন যে সবকিছু ছেড়ে ওবামার প্রচারণা টিমে কাজ করতে রাজী হয়ে যান। ২০০৮ সালের কনভেনশন নাগাদ মোসটেলার নিজেকে ভিন্নরূপে রূপান্তিত করেন এবং সেই থেকে ওবামার হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ক্রমে তিনি ওবামার চোখ ও কান হয়ে উঠেন। তিনি সবকিছুকে ওবামার প্রেক্ষিত থেকে দেখা শুরু করেন।
২০০৮ সালে নির্বাচনের রাতে মোসটেলার শিকাগোর হায়াত রিজেন্সি হোটেলে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি সেখানে প্রহরা দিয়ে ওবামাকে হোটেল কক্ষে নিয়ে যান যখন তার মূল প্রচারণা টিম ওবামার এই বিরাট বিজয় উপভোগ করছিলেন। সেরাতে ওবামা ছিলেন শান্ত ও চিন্তিত। মোসটেলার বুঝতে পেরেছিলেন যে এসময় ওবামার একান্ত কিছুটা সময় দরকার। ফটোগ্রাফাররা যখন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ছবি তোলার জন্য ভীড় জমান তখন মোসটেলার তাদের থামিয়ে দেন। কিছুটা বিশ্রামের পর তিনি ওবামাকে তার বিজয়ী ভাষণ সম্পর্কে ব্রিফ করেন। তিনি জানান, সমস্ত বিষয় তিনি গুছিয়ে রেখেছেন। মোসটেলার সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেই থেকে নতুন পথচলা শুরু হলো।
ভাষণ সম্পর্কে ওবামা কিছুটা ধারণা দেন এবং সেই ভাবে তিনি প্রেসিডেন্টের বিজয়ী ভাষণ তৈরি করেন।
অবশ্য মোসটেলারের সমালোচকও রয়েছে। যারা তার কৃতিত্বকে খাটো করার চেষ্টা করেন। একটি ম্যাগাজিন তো রীতিমতো তাকে এই বলে ব্যাঙ্গ করেন যে তিনি এইচবিও টিভির একটি ধারাবাহিক সিরিজের মতোই প্রেসিডেন্টের অনিশ্চিত এক ব্যক্তিগত সহকারী। তবে তার সহকর্মীরা বলেন, মোসটেলার খুবই মেধাবী ও ধীরস্থির ব্যক্তিত্ব।
ওবামার দেহরক্ষী হিসেবে ২০১১ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন রিগি লাভ। তিনি স্মরণ করেন যে প্রেসিডেন্ট একটি শব্দের উচ্চারণ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দেন কিন্তু প্রেসিডেন্টের তাতে মনোঃপুত হয়নি। তখন প্রেসিডেন্ট বললেন, ঠিক আছে এটা মোসটেলারকে জিজ্ঞেস করুন। রিগি লাভ বলেন, মোসটেলারের কাজের ধরণই এমন ছিল যাতে তার উপর আস্থা রাখা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
৪০ বছর বয়সী মোসটেলার সুদর্শন। লম্বা, সিøম, কালো চুল, তীক্ষè দৃষ্টি। প্রতিদিন সকালে প্রেসিডেন্টের আগমনের অন্তত একঘন্টা আগেই তিনি তার ডেস্কে চলে আসেন। তিনি রোজ গার্ডেনের দিকের দরজাটি খুলে রাখেন এবং প্রেসিডেন্টের আগমন প্রত্যক্ষ করেন। ওবামা কাজ শেষে অফিস ত্যাগ করার সময়ও মোসটেলার সেখানকার বাতিগুলো নিভিয়ে দেয়ার জন্য সেখানে অবস্থান করেন।
প্রেসিডেন্টের আগমন ও নির্গমন একদিনও মিস করেন না মোসটেলার। তিনি ওবামার প্রশংসা করে বলেন, এত বছর এমন লোকের সঙ্গে কাজ করা তারজন্য একটি বড় ঘটনা। তিনি ওবামার সঙ্গে কাজ করতে স্বস্তিবোধ করেন। তিনি তার বসের ইচ্ছা-অনিচ্ছা খুব ভালো করেই জানে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জস আর্নেস্ট বলেন, মোসটেলারের মতো সহকারী পেয়ে ওবামাও স্বস্তিবোধ করেন।
ওবামার দুইটি প্রচারাভিযান ও তার প্রেসিডেন্সিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে মোসটেলার বলেন, তিনি এ ভাবে অনেক কিছু শিখেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ওবামার অনেক চাপ সহ্য করা তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। আমেরিকার জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা ও অন্যান্য দুঃখকষ্ট নিয়ে ওবামা যখন গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকেন তখনও ছায়ার মতো তার পাশে থাকেন মোসটেলার। তিনি বলেন, হোয়াইট হাউজে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন সারাজীবন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, একজন মানুষ সবকিছু সামাল দিতে পারেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোন, একজন বাস ড্রাইভার হোন, ৪ সন্তানের জননী একজন বেকার মা হোন, তরুণ স্বেচ্ছাসেবী হোন তিনি যেই হোন তিনি আমাদেরই একজন। তাদের সাহায্য করতে সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে আসতে পারে।
তিনি বলেন, মানুষের আবেগের মূল্য অনেক। এই আবেগই বিশ্বকে ছোট করে এনেছে কারণ এমন কোন ব্যক্তি বা স্থান বা প্রকল্প বা অভিযাত্রা নেই যা দৃশ্যতঃ খুবই ভীতিকর। ৯ বছর আগে তিনি ওবামার সঙ্গে তার অভিযাত্রা শুরু করেছিলেন। আগামী দিনে কি ঘটবে তা কেউ জানে না। তবে এই ৯ বছরের অভিজ্ঞতা তাকে আনন্দ দেয়, উজ্জীবিত করে। এবং এখন থেকে হাতে আরো ১০ মাস রয়েছে। এই সময়েও ওবামার তাকে খুবই দরকার হবে। Ñসূত্র : দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।