Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশুলিয়ায় পুলিশ প্রহরায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে অসাধুচক্র

প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাউফুর রহমান পরাগ, আশুলিয়া থেকে : সম্প্রতি রাজধানীতে যখন তীব্র গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে ঠিক এসময় ঢাকার নিকটবর্তী আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে পুলিশ প্রহরায় দেওয়া হচ্ছে হাজারো অবৈধ গ্যাস সংযোগ। থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে অন্ধকারেই জঙ্গল ও মেঠোপথে গর্ত করে দেওয়া হচ্ছে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ।
আর এর জন্য অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের নিকট থেকে সংযোগপ্রতি ৪৫-৫০হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্রটি।একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে দেশের মহামূল্যবান সম্পদ লুট-পাটের মাধ্যমে হাতে গোনা গুটি কয়েক লোক কালো টাকার পাহাড় গড়ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সম্প্রতি দিবাগত রাত ২টার দিকে সবাই যখন ঘুমে বিভোর ঠিক সে সময়ই আশুলিয়ার কবিরপুর বায়ান্নদাগ এলাকায় চলছে তিতাস গ্যাস চুরির মহাৎসব। একটি অসাধু চক্র স্থানীয় প্রশাসন, তিতাস গ্যাসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পুলিশ প্রহরায় দিচ্ছে হাজারো অবৈধ সংযোগ। কৌশলে মেঠো রাস্তার পাশ ঘেষে ও জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গর্ত করে দেওয়া হচ্ছে এসব সংযোগ। আর সেখানে টহল দ্বায়িত্ব পালন করছে পুলিশ প্রশাসন। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বেই সেখানে থাকা পুলিশের সহায়তায় সু-কৌশলে গ্যাস চুরির স্পট থেকে সটকে পরে অবৈধ সংযোগ প্রদানের মূল হোতা আব্বাস মন্ডল, জাহাঙ্গীর হোসেন, জমসেদ, মাহফুজসহ তাদের সহযোগী এলাকার পাতি মাস্তানরা। মেঠোপথের পাশের গর্ত ধরে এগুতেই চোখে পড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা লাইট নেভানো একটি পুলিশ ভ্যানের দিকে। এখান থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকার খোড়া গর্ত ধরে এগুনোর পর দেখা গেল গ্যাস চুরির সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য। বিপুল পরিমাণ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য আনা পাইপ লুকিয়ে রাখা হয়েছে জঙ্গলের ভিতরে। সাংবাদিকদের দেখতেই সেখানে পূর্বে থেকেই উপস্থিত থাকা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক শওকত আলী কুশল বিনিময়ের জন্য এগিয়ে আসেন। আর ঠিক তখনই কৌশলে দু’একজন দৌড়ে এসে ওয়েল্ডিং মেশিন দিয়ে পাইপ কাটা শুরু করে। দৃশ্য দেখে মনে হল যেন মিস্ত্রিকে আগে থেকেই এটি করতে বলে রাখা হয়েছিল। পরে আবার দুই অচেনা মুখের লোক তা কাঁধে করে নিয়েও যায়। আপনারা এখানে ঠিক কি জন্যে এসেছেন এমন প্রশ্œের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরেছি এই এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমরা অবৈধ গ্যাস নেওয়ার বেশ কিছু পাইপ জব্দ করি। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আগেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। কি পরিমাণ পাইপ জব্দ করা হয়েছে এব্যাপারে তিনি বলেন, “আমরা ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের আনুমানিক শতাধিক পাইপ জব্দ করেছি। অন্য কোথাও আরও পাইপ লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি না তা বের করার চেষ্টা চলছে।” কিন্তু কিভাবে রাতা-রাতি এক কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে গ্যাস চুরির এই মহাযজ্ঞ সংঘটিত হচ্ছে তা কি আপনারা পূর্বে জানতেন না? এমন প্রশ্নে হতচকিত হয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এই অসাধু চক্রটিকে অনেক বেশী প্রভাবশালী ও চতুর। তাই তাদের ট্রেস করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ পাহারায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানকারীদের ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর পুলিশ পাহারায় অসাধু চক্রের কিছু লোক এসব সংযোগ দিচ্ছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। এঘটনায় পুলিশ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটি অবহিত করার পরও ভোর ৪টা নাগাদ ঘটনাস্থলে তিতাসের কোন কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। এমনকি মঙ্গলবার সকালে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে একাধিক যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সাড়া মেলেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আশুলিয়ায় পুলিশ প্রহরায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে অসাধুচক্র
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ