পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল স্বাধীনতার দশ বছর আগে, ১৯৬১ সালে। পাবনা জেলার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। অধিগ্রহণ করা হয় ২৬০ একর জমি। ১৯৬৪ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতিও আমদানি করা হয়। তবে সেই যন্ত্রপাতিবাহী জাহাজ চট্টগ্রামে না এসে নোঙ্গর করে করাচি বন্দরে। ওই স্বপ্নের ওখানেই মৃত্যু হয়।
তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫০ বছরের পুরনো ওই স্বপ্ন আবার জাগিয়ে তোলে। ২০১০ সালের ২১ মে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার সঙ্গে ঋণচুক্তিও হয়। বর্তমানে সম্পন্ন হওয়ার পথে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। অপেক্ষা এখন প্রকল্পের মূল কাজের। এই প্রকল্প সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৩৪তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আর উৎপাদন সক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ চলে আসবে শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে। আর দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ ভাগ আসবে এই খাত থেকে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল অংশের অনুমোদন হতে যাচ্ছে। এটিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার জন্য মাইলফলক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এটি দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। ২ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার তৃতীয় প্রজন্মের (সর্বাধুনিক প্রযুক্তি) এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা (১৪.১৪ বিলিয়ন ডলার)। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা ও রাশিয়ার ঋণ দেবে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা (১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার)। এ প্রকল্পে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ লাইবর প্লাস ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার জন্য গত ২৬ জুলাই বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে রাশিয়া।
আজ একনেকে অনুমোদনের পর পুরোদমে শুরু হবে মূল প্রকল্পের কাজ। ১২শ’ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট থাকবে এই প্রকল্পে। প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২১ সাল নাগাদ। ওই বছরেই জাতীয় গ্রিডে পারমাণবিক বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার আশা করছে সরকার। আর দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আয়ু নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বছর। এই কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হবে ২ টাকার কম।
বিতর্ক রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে। তবে জানা গেছে, নিরাপত্তার ইস্যুটি মাথায় রেখেই রাশিয়ার সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি ভিভিইআর ১২০০ মডেলে স্থাপিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিশ্বের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো মাথায় রেখেই রাশিয়া তার সর্বশেষ মডেলের আধুনিকায়ন করে এই মডেল দাঁড় করিয়েছে। রাশিয়ার অভ্যন্তরেই নবোভরনেজ ও লেনিনগ্রাদে ভিভিইআর ১২০০ মডেলটি চালু করা হয়েছে। তুরস্ক ও ফিনল্যান্ডসহ অনেক দেশে এই প্রযুক্তি গ্রহণে এগিয়ে এসেছে। এসব কারণে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার সক্ষমতা আছে এই মডেলটির। আর পাবনা জেলাতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ৭.৮ মাত্রার যার কেন্দ্রস্থল ছিল নেপালে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী রাশিয়ান কোম্পানি রোসাটোম জানিয়েছে, এই মডেলটি যে কোনো ধরনের বিমান হামলা থেকেও রক্ষা পেতে সক্ষম। বিশ্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান হলো ‘রেসাটোম’।
এদিকে এই প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ স্থানীয় জনশক্তি তৈরি করতে রাশিয়ায় প্রতি বছর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশীদের। প্রতি মাসেই একাধিক দল যাচ্ছে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য। আরও দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য সারাদেশ থেকে বাছাই করে তিন বছরমেয়াদি মাস্টার্স প্রোগ্রাম ও পাঁচ বছর মেয়াদি স্পেশালিস্ট প্রোগ্রামে রাশিয়ায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক পরমাণুু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং আইএইএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২১ মে বাংলাদেশ এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক ও একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তি এবং ২০১২ সালের ৪ জুন বাংলাদেশে পারমাণবিক সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। পরে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রমের জন্য ৫০ কোটি ডলারের একটি স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট চুক্তি এবং প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজের অর্থায়নের জন্য পৃথক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এই বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পাদনে ৫ হাজার ৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে ২ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। আজ অনুমোদন দেয়া হচ্ছে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন (মূল পর্যায়)’ শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।