Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি অস্ত্রের ভয়ানক বিস্তার

অভিযানে যে পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হচ্ছে তার কয়েকগুন নিরাপদে চলে যাচ্ছে অপরাধীদের গোপন ডেরায়

| প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্রের ভয়ানক বিস্তার ঘটেছে। সর্বত্রই আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন এলাকায় গোপন কারখানায় তৈরি হচ্ছে বন্দুক, রাইফেল, এলজি ও শুটারগান। আর সীমান্ত পথে বিদেশ থেকে আসছে একে-২২, এম-১৬ রাইফেলসহ পিস্তল ও রিভলবার। র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে যে পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হচ্ছে তার কয়েকগুন নিরাপদে চলে যাচ্ছে অপরাধীদের গোপন ডেরায়। আর এতে করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের বাসিন্দাদের অস্ত্রভান্ডার দিনে দিনে সমৃদ্ধ হচ্ছে।
ছোটোখাটো ঘটনাতেও অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের ক্যাডার মাস্তানরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নামছে। মিডিয়ায় অস্ত্রধারীদের ছবি প্রকাশ হওয়ার পরও এসব অস্ত্রও উদ্ধার হচ্ছে না। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে।
র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে নিয়মিত। তবে গত কয়েক বছরে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। বিক্রি ও পাচারকালে কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হলেও অস্ত্র চোরাচালানী সিন্ডিকেটের সদস্যরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। তদন্তের দুর্বলতার কারণে পার পেয়ে যায় গডফাদারেরা। ফলে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নেওটওয়ার্কও অক্ষত থেকে যাচ্ছে। র‌্যাব-পুলিশের হাতে দেশি অস্ত্রের পাশাপাশি বিদেশি অস্ত্রও ধরা পড়ছে। দেশের গোপন কারখানাগুলোতে এখন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হচ্ছে বলেও নিশ্চিত হয়েছেন র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা। রোববার কক্সবাজার জেলার চকোরিয়ায় দু’টি অবৈধ অস্ত্র কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব। সেখান থেকে ২০টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- আটটি একনলা বন্দুক, একটি দু’নলা বন্দুক, দু’টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, একটি পয়েন্ট টুটু বোরের রাইফেল ও আটটি ওয়ান শুটারগান।
এ দু’টি কারখানার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এক নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে র‌্যাব নিশ্চিত হয়, এ ধরনের অস্ত্র সেখানে দীর্ঘ দিন থেকে তৈরি করা হতো। আর এসব অস্ত্র বিক্রি হতো বিভিন্ন অপরাধী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে।
এর আগে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে একাধিক অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব। চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও সীতাকুন্ডের সলিমপুরের জঙ্গল থেকেও অবৈধ অস্ত্র কারখানা আবিষ্কার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জানা যায়, এসব এলাকায় আরো অবৈধ অস্ত্র কারখানা আছে। সেখানে তৈরি অস্ত্র চলে যাচ্ছে অপরাধীদের হাতে।
দেশি অস্ত্রের সমান্তরালে বিদেশি অস্ত্রও আসছে সীমান্ত পথে। কক্সবাজার ও তিন পাবর্ত্য জেলা এবং ফেনী ও কুমিল্লা সীমান্ত হয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে অবৈধ অস্ত্র দেশে আসছে। র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে প্রায়ই এসব অস্ত্র ধরা পড়ছে।
চলতি বছরের ১১ মাসে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অভিযানে ১৫৬টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করেছে। অন্য দিকে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মহানগর পুলিশ ২৩৮টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করে। র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধার অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একে-২২ সাব-মেশিনগান একটি, বিদেশি পিস্তল ৩৬টি, দেশি পিস্তল তিনটি, বিদেশি রিভলবার দুইটি, এসবিবিএল ৩৮টি, ডিবিবিএল দু’টি।
এ ছাড়া শর্টগান উদ্ধার হয় দু’টি, ওয়ান শুটারগান ৬৮টি, কাটা রাইফেল একটি,  দেশি রাইফেল তিনটি। অবৈধ ছাড়াও র‌্যাবের অভিযানে মোট ৪২টি ম্যাগাজিন, তিন হাজার ৭২৭ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি ও কার্তুজ, ৮৪ রাউন্ড খালি খোসা, ১৫টি ককটেল এবং ১৯টি রকেট ফ্লেয়ার উদ্ধার  হয়।
র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে হালকা বা ছোট অস্ত্রের পাশাপাশি ভারী যুদ্ধাস্ত্রও উদ্ধার হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে ছয়টি স্বয়ংক্রিয় বিদেশি পিস্তল ধরা পড়েছে নগরীতে। গত দুই বছরে র‌্যাব-পুলিশের হাতে অন্তত ১৫টি ভয়ঙ্কর যুদ্ধাস্ত্র একে-২২ রাইফেলসহ বেশ কিছু ভারী অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
হালকা অস্ত্রের পাশাপাশি অপরাধীদের কাছ থেকে ভারী অস্ত্রও উদ্ধার হচ্ছে।
জঙ্গিদের মতো রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের ভান্ডারেও মিলছে একে-২২ রাইফেলের মতো যুদ্ধাস্ত্র। গত ১৮ আগস্ট সাতকানিয়ায় হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতার ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয় স্বয়ংক্রিয় একে-২২ রাইফেল, ছয়টি গুলি, দু’টি ম্যাগজিন, তিনটি এলজি, তিন রাউন্ড ৭.৬৫ বোরের গুলি এবং ৭ রাউন্ড কার্তুজ। সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামে হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মাহফুজুল হকের ডোবা থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
তার আগে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে এক যুবলীগ নেতার বাড়িতেই পাওয়া যায় ২৩টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র। যুবলীগ নেতা মো: শাহেদ উল্লাহকে একটি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেখানো মতে, তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আরো ২২টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব ও কোস্টগার্ড।
পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালানি চক্রের নেটওয়ার্ক হয়ে কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার সীমান্ত পথে এসব বিদেশি অস্ত্র আসছে। চোরাচালানি চক্রের স্থানীয় এজেন্টদের হাত হয়ে তা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে অপরাধীদের হাতে চলে যাচ্ছে। সীমান্তে তৎপর বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীও এসব অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অস্ত্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ