Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘এখন মোর ছইল চোরাকারবারি হই গেইল’

দিনাজপুর অফিস | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

বিএসএফ গুলি করি মারিছে-এখন মোর ছইল চোরাকারবারী হই গেইল কথাগুলো সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা হতদরিদ্র জাহাঙ্গীর আলম-এর। আগের দিন স্কুল পড়ুয়া ছেলে রাজমিস্ত্রি’র যোগালী (মুজুরী) দিয়ে ৩০০ টাকা বাবার হাতে তুলে দিয়েছিল। আর রাতেই সেই ছেলেই ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুবরণ করে হয়ে গেল চোরাকারবারী।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সন্তানের লাশের খোঁজে সীমান্তে অবস্থান করার সময় ফ্যাল ফ্যাল করে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় হতদরিদ্র জাহাঙ্গীর আলমকে। এ সময় তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে শুধু উপরের কয়েকটি কথা বলে ক্ষান্ত হয়ে যান। হতদরিদ্র জাহাঙ্গীর আলম ফেরি করে দিনভর গ্রামে সবজি বিক্রি করে সংসার চালান। চার সন্তানকে দারিদ্রতার কষাঘাত থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য কষ্ট হলেও পড়ালেখা করাতে থাকেন। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে এইচএসসি’র শিক্ষার্থী। মেঝো ছেলে স্থানীয় খানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। ছোট দুই মেয়ে প্রাইমারিতে রয়েছে। সন্তানেরাও গরীব পিতার কষ্টকে মনের মধ্যে লালন করে পড়ালেখার পাশাপাশি দিনমজুরি করতেন। উদ্দেশ্য বাবাকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করা। হঠাৎ করেই একটি বুলেট সকল আশা-আকাঙ্খাকে ধুলিসাৎ করে দিল। নিজ স্বাধীন দেশের মাটিতে থাকা অবস্থায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘাতকেরা লাশ নিজেদের ভূমিতে টেনে নিয়ে যান। বলছি গত বুধবার দিবাগত রাতে দিনাজপুর সদর উপজেলার দাইনুর সীমান্তে গুলিবর্ষণের ঘটনার কথা। বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হয় নবম শ্রেনীর ছাত্র মিনার । গত বৃহস্পতিবার স্কুলের ক্লাশে উপস্থিত হওয়ার পরিবর্তে সীমান্তের মাটিতে লাশ হয়ে পড়ে থাকে। মিনারের অকাল মৃত্যু’র দ্বায়ভার কার? মিনার এর সাথে একই এলাকার লতিপুলের ছেলে এমদাদুল সালমানের ছেলে সাগর নিখোঁজ রয়েছে। তারা কোথায় আছে কি কেমন আছে একথাটিও কেউ জানাতে বা বলতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ তারা আতংকিত। কিন্তু প্রশ্ন কেন এই আতংক। তাদের অপরাধ তারা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বসবাস করে। পাখির মত গুলি করে হত্যার পর বানানো হয় চোরাকারবারী বা মাদক ব্যবসায়ী।

মিনারুলের মা মিনারা বেগম জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোবাইল করে মিনারুল জানায়, রংয়ের মিস্ত্রির সাথে কাজ করছি একটু দেরি হবে বাড়ি আসতে। রাত ১০ টার দিকে মোবাইল করলে মিনারুলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বাকরুদ্ধ হতদরিদ্র ফেরিওয়ালা জাহাঙ্গীরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিএসএফ গুলি করি মারিছে-এখন মোর ছেলে চোরাকারবারী হই গেইল” স্থানীয় লোকজন জানান, গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্তে গুলির শব্দ শুনতে পান। পরদিন সকালে সীমান্তের মেইন পিলার ৩১৫ কাছে জমির আইলে মিনারুলের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। রাতভর সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বর্ডার গার্ড মিনারুলের মৃত্যু সম্পর্কে কিছু না জানলেও পরদিন খবর পেয়ে যথারীতি বিএসএফের কাছে পত্র দেন। এলাকাবাসীর মতে গুলি করে হত্যার পর বিএসএফ সদস্যরা নিহত মিনারের লাশ নিজ এলাকায় নিয়ে যায়। তারা বাংলাদেশি ভূখন্ডে অবস্থানকালেই তাদের উপর গুলি চালানো হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সীমান্তে বাংলাদেশি ও ভারতীয় দুই দেশের বাসিন্দাদের আবাদি জমি রয়েছে। অনেকে জমিতে পানি দিতে অথবা জমির ফসল দেখতেও রাতে যায়। গরমকালে অনেকেই জমির পাশে ঠাণ্ডা বাতাসের জন্য ঘোরাঘুরি করে। বিএসএফ চ্যালেঞ্জ না করে সীমান্তে দেখা মাত্রই গুলি ছোড়ে হত্যা করে।
কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য সকল মৃত্যুর সঠিক কারণ থাকে। তদন্তসাপেক্ষে মৃত্যু যদি হত্যাকাণ্ড হয় অথবা প্ররোচনা হয় তারপরেও মামলা এবং বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। কেবলমাত্র সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় কোন বিচার হয় না। বরং মৃত্যুর পর চোরাকারবারী বা মাদক ব্যবসায়ীর তোকমা ঘাড়ে চেপে যায় মৃত ব্যক্তির। কিন্তু কেউ বুঝেনা পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ বহন করার যন্ত্রণা।



 

Show all comments
  • মামুন ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১:৫৭ এএম says : 0
    ভারত যদি চীন বা পাকিস্তানের ১ জন নাগরিক কে এভাবে গুলি করে হত্যা্্্
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএসএফ

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ