Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টানাপার্টির দৌরাত্ম্য বাড়ছে

৫ দিনেও হদিস মেলেনি জি এম কাদেরের মোবাইলের : থামছে না চুরি-ছিনতাই

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

গত ৩১ আগস্ট রাত ১১টার দিকে উত্তরার বাসায় যাচ্ছিলেন জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মুহাম্মদ (জিএম) কাদের। পথে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সামনে যানজটে পড়ে তাকে বহনকারী ব্যক্তিগত গাড়িটি। গাড়ির এসি কাজ না করায় জানালার গ্লাস খুলে রাখেন তিনি। ওই সময় তিনি ফোনে কথা বলছিলেন। আর গাড়ির খোলা জানালার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে জিএম কাদের হাতে থাকা আইফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। জি এম কাদেরের মোবাইল ছিনতাইয়ের পাঁচ দিন পার হলেও এখনো সেটি উদ্ধার করা যায়নি। পুলিশের দাবি, ফোনটি উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। কিন্তু আইফোন ব্র্যান্ডের হওয়াতে ফোনটির খুঁজতে বেগ পেতে হচ্ছে।

এছাড়া রাজধানীতে টানাপার্টির দৌরাত্ম বেড়েই চলছে। বিমানবন্দর মোড় থেকে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় বাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রী ও সড়কের চলাচলকারী পথচারীরা ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন যাত্রী-পথচারীরা। এবিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরর বিভিন্ন অভিযানে অসংখ্য ছিনতাইকারী গ্রেফতার হলেও ছিনতাইয়ের ঘটনা রাজধানীতে ঘটছেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছিনতাইয়ের এমন ঘটনা রাজধানীতে নতুন নয়। সব সময়ই এমন ঘটনা ঘটতো। এসব দুর্ঘটনা রোধ করতেই রাজধানীতে সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয় ডিএমপি। বিভিন্ন সময় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েকশ সিসি ক্যামেরা বসালেও থামানো যাচ্ছে না চুরি, ছিনতাই। রাজধানীতে সম্প্রতি সময়ে চুরি, ছিনতাইসহ ছোট অপরাধ ব্যাপক আকার ধারন করেছে।
ডিএমপির সূত্রে জানা গেছে, ৫০টি থানায় সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে ৮৫৮টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবুজবাগ, ডেমরা এবং শেরেবাংলা নগর থানায় ৩২টি করে, পল্লবী থানায় ৩০টি ক্যামেরা আছে। সবচেয়ে কম রয়েছে মতিঝিল থানা এলাকায় ১০টি, খিলগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শাহআলী, বাড্ডা, বিমানবন্দর থানায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে ১১টি করে। ট্রাফিক বিভাগের আটটি অঞ্চলে রয়েছে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা।
ডিএমপির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীতে শতাধিক পেশাদার ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। এদের বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পেশাদার এসব ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।
গত ২৩ এপ্রিল মিরপুর-১ পাইকপাড়া ছলিমউদ্দিন মার্কেট দিয়ে রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন সিকদার মোহাম্মদ রেজাউর রহমান রুমেল। রিকশার পেছনে হঠাৎ এক শিশু ওঠে। এর কয়েক মিনিট পরই দেখেন পাঞ্জারির পকেটে নিজের মোবাইলটি নেই। রুমেল ফিরে গিয়ে তাকে আর খুঁজেও পাননি। মিরপুর মডেল থানায় ডিজি করলেও এখনো পাননি তার মোবাইল।
ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনার অধিকাংশই যেসব স্থানে সিসি ক্যামেরা নেই, সেসব স্থানে হয়। ফলে ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়। মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোতে দেখা যায়, মোবাইল সিমের মাধ্যমে মোবাইল উদ্ধার করা যায়। এতে ছিনতাইকারী তখন ধরা পড়ে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, চুরি ও ছিনতাইসহ ছোট অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের বিষয়ে সব সময় সক্রিয় রয়েছে ডিএমপির সকল পুলিশ। অপরাধীদের ক্ষেত্রে কোন ছাড় নয়। পুলিশ সাধারন মানুষের নিরাপত্তায় রাতদিন কাজ করছে। অপরাধীদের গ্রেফতারের পর জামিনে বেরিয়ে আবারো একই ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরা অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজে দেয়। অনেক জায়গায় সিসি ক্যামেরা না থাকায় অনেকে হয়তো সুযোগ নেয়।
অন্যদিকে মামলাটির তদন্ত সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরের সামনে থেকে জিএম কাদেরের ফোনটি ছিনতাইয় পর থেকে সেটি উদ্ধারে সাড়াশি অভিযানে নামে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজন ছিনতাইকারীকেও আটক করা হয়েছে। আটকের পর তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তবে সে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি। এছাড়া, সন্দেহভাজন একাধিক ব্যক্তিকে জিএম কাদেরের ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে করেও পুলিশ তেমনি কোনো ফলাফল পায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বিমানবন্দর থানার এসআই মো. রুবেল বলেন, জিএম কাদেরের ফোনটি উদ্ধার করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে একজনকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ছিনতাই হওয়া ফোনটি আইফোন। তাই এটি উদ্ধারে আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ফোনটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এছাড়াও গত বছরের ২৫ মে রাজধানীর বিজয় সরণিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মোবাইলটি ছিনতাই হয়। ছিনতাইয়ের সময় মন্ত্রীর গাড়ির জানালা খোলা ছিল। ঘটনার দেড় মাস পর একটি ছিনতাইকারী চক্রের কাছ থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করে পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টানাপার্টি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ