পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘প্রকল্প মানে কর্মকর্তাদের গাড়ি বিলাস সরকারি টাকা লুটপাট একং দুর্নীতি’ অনেক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে এটাই চিত্র। ব্যাতিক্রম দেখা গেছে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকল্পে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ নৌপথ ড্রেজিং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ৯২৩ কোটি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে ৩০২ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। মৃতপ্রায় নদীগুলোর অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পে মাধ্যমে সারা দেশের ১০ হাজার কি.মি. নৌপথ খনন ও নদীর নাব্যতা ফিরেছে। এ কারণে কৃষি কাজের সেচ সহায়তা পাওয়া কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাছ উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
সারাদেশের নৌকেন্দ্রিক নৌবাণিজ্য গড়ার ক্ষেত্রে নৌপথে নাব্যতা, বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। নৌবান্ধব ও উন্নয়ন কার্যকর নৌপথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ব্যবস্থা গতিশীল রাখার লক্ষ্যে আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রতিবছর এসব নদীগুলো সংরক্ষা এবং ড্রেজিং না করা হলে আবারো নৌপথ বন্ধ হবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক ইনকিলাবকে বলেন, ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো উন্নয়ন সহযোগীদের পরিকল্পনামতো সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নে বাড়তি গুরুত্ব না দেয়ায় দেশের সম্ভাবনাময় নৌ-খাত গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল। বর্তমান সরকার মৃতপ্রায় নদীগুলোর অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ করে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরেছে। প্রতিবছর এ নদীগুলো সংরক্ষা এবং ড্রেজিং না করা হলে আবারো নৌপথ বন্ধ হবে। সে জন্য নতুন নতুন প্রকল্প চালু থাকার দরকার।
এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, দেশের নৌ-পরিবহন খাতে যতটা বিনিয়োগ দরকার, বর্তমান সরকার ঠিক, ততটাই বিনিয়োগ করছে। গত ১২ বছরে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক নৌপথ সচল হয়েছে। বন্দর সচল হয়েছে। নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমেই বাড়ছে। নৌ-পরিবহন খাতের উন্নয়নে আমরা সঠিক পথেই আছি। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশ্তেহার পূরণের লক্ষ্যে সারাদেশের ১০ হাজার কি.মি. নৌপথ খনন ও নাব্যতা ফিরে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে টাকা ব্যয় করা হয়, কিন্তু এ ড্রেজিং প্রকল্পে ৩০২ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে। এটা বিরল দৃষ্টান্ত।
এ দিকে বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) ও প্রকল্প পরিচালক মো. ছাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশ্তেহার পূরণের লক্ষ্যে সারাদেশের ১০ হাজার কি.মি. নৌপথ খনন ও নাব্যতা রক্ষার কার করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সারাবছর নদীতে পানি থাকছে, পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়া রোধ হয়েছে। ড্রেজিং-এর মাধ্যমে ভরাটকৃত ভূমিতে বৃক্ষরোপণ, বনায়ন এবং পরিবেশ উন্নত করা হচ্ছে। নদী সমূহে নাব্যতা দিয়ে আসায় নৌপথের উন্নয়ন, যাত্রী ও মালামাল ব্যস্থা সদৃঢ় হয়েছে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মাইলফলক।
বিআইডব্লিউটিএ প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) চলতি দায়িত্ব রকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, নৌপথে নাব্যতা রক্ষা ও মালামাল পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পে ১ম পর্যায়ে ২৪টি নৌপথ এবং ২য় ২৯টি নদী খনন মধ্যে অভ্যন্তরীণ নৌপথের উন্নয়ন নাব্যতা ফিরেছে। আমরা যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ব্যবস্থা সদৃঢ় রাখার লক্ষ্যে এটি বাস্তবায়ন করেছি। নৌপথগুলো যাতে বন্ধ না হয়। তা রক্ষণাবেক্ষণার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অভ্যন্তরীণ নৌপথসমূহে পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে চলাচলের জন্য ড্রেজিং এর মাধ্যমে ক্রম-হ্রাসমান নাব্যতা উন্নয়ন করার লক্ষ্যে ২০১২ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে চলতি ৩০ জুন শেষ করা হয়েছে। দেশীয় অর্থায়নে ১ হাজার ৯২৩ কোটি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়। এতে প্রায় ৩০২ কোটি টাকা সাশ্রয়ে করা হয়েছে। যা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এ খনন প্রকল্পের আওতায় ২৪টি নৌপথে মোট ১১ হাজার ৩ লাখ ঘনমিটার খননের মাধ্যমে ২৩৮৬ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নদীগুলে হচ্ছে, খুলনা বাগেরহাট মোংলা-ঘষিয়াখালি চ্যানেল, পটুয়াখালীর খাগদান লাউকাঠি নদী, ভোলা জেলার ভোলার নালা নদী, বরিশালের কীর্তনখোলা, পালরদি নদী, সিলেটের চলতি, সুরমা, বাউলাই, নতুন নদী, সুনামগঞ্জের রক্তি, রকমা নালা, নেত্রোকোনার মগড়া, কংশ, ভোগাই কংশ, ইছামতি, মাদারীপুরের আপারকুমার, মানিকগঞ্জের ধলেশ^রী, কালিগঞ্জ, গোপালগঞ্জের মধুমতি, ভৈরব, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ ও দিনাজপুরর আত্রাই নদী, কুড়িগ্রামের দুধকুমার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বুড়ি, তিতাস, নরসিংদী জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদের নাব্যতা হারানো বন্ধ নদীর চ্যানেল খননের মাধ্যমে নাব্যতা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
খুলনা নোয়াপাড়া নদীবন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। এপথে গড়ে ১০০-১২০টি সার, সিমেন্ট, চাল, গম, কয়লা মালবাহী কার্গো পরিবাহিত হচ্ছে। নৌপথে নাব্যতা সংকটে দীর্ঘদিন নৌচলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। পূর্ণ জোয়ারের সুবিধা ছাড়া নৌযান চলাচল করতে পারত না। কিন্তু আলোচ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে নৌপথে নাব্যতা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে সারা বছর সার্বক্ষণিক কার্গো জাহাজ চলাচল করেছে। মৃত প্রায় কংশ নদীর পাগলাজোড়, মোহনগঞ্জ, বাউলাই নদীর আনোয়ার-তাহেরপুর, বরিশাল-পটুয়াখালী নৌপথের সাহেবের হাট নালা, তিতাস নদীর দাউদকান্দি, হোমনা-রামকৃষ্ণপুর, বাঞ্ছারামপুর, চলতি নদীর সুনামগঞ্জ-ডলুরা নৌপথ নারায়ন এর মেঘনা-লাঙ্গলবন্দ নৌপথ, মগড়া নদীর চামড়াঘাট-মদন পর্যন্ত ড্রেজিং করে নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের ড্রেজিংয়ের মাটি ভরাট করে পতিত, নীচু প্রায় ৬ হাজার ৫০০ একর অকৃষি জমিতে কৃষি জমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। তাছাড়া প্রায় ১২টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের নিচু জায়গা ভরাট করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। হাওর অঞ্চলে যেমন সুনামগঞ্জের তাহেরপুর, বিশ্বাস্তপুর, মদন, আটপাড়া, নিকলী, পাগলা জোড়, ধর্মপাশা, মোহনগঞ্জ, বাঞ্ছারামপুর এলাকায় প্রায় ৫০ কি.মি. নিচু জায়গা ভরাট করে গ্রামের গরিব মানুষের গবাদি পশু পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীগুলোর নাব্যতা ফিরে আসায় বর্তমানে নদীতে সারাবছর পানি থাকায় কৃষি কাজের সেচ সহায়তা পেয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাংস উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে নদীতে সারাবছর দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে। নদীর গতি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় অতি বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। বন্যার ক্ষতি সাধন হ্রাস পেয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।