Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আগস্টে ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

রেমিট্যান্স সামলাচ্ছে ডলারের চাপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৪ এএম

দেশের অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আশা জাগাচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। জুলাই মাসের পর আগস্টেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্সের গতি বেশ ঊর্ধ্বমুখী। জুলাইয়ের পর আগস্টেও ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠালেন প্রবাসীরা। সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসে প্রায় ২০৪ কোটি (২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন তারা। এই অঙ্ক গত বছরের আগস্টের চেয়ে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত বছরের আগস্টে ১৮১ কোটি ডলার এসেছিল।
আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) হিসাবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এসেছিল ৩৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। এই বছরের একই সময়ে এসেছে ৪১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ।
দুই বছরের করোনা মহামারি ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসে ২০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৯ হাজার ৩১০ কোটি টাকা।
বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১০৫/১০৬ টাকা দরেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সে হিসাব বিবেচনায় নিলে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ আরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশা করছি বছরের বাকি ১০ মাসেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে ওলটপালট করে দিয়েছে। তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে। এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে চালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে। গত সোমবার জ্বালানি তেলের দাম লিটারে মাত্র ৫ টাকা কমিয়েছে সরকার। এতে বাজারের আগুন নেভাতে কোনো ভ‚মিকা রাখবে না।
আগামী দিনগুলোতে কী হবে? এই প্রশ্ন যখন সবার মধ্যে, তখন স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো এই অর্থের প্রবাহ। মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের কথা। ভরা করোনা মহামারির মধ্যেও ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে নতুন সঙ্কট দেখা দিয়েছে, সেই সঙ্কট কাটাতেও সবার আগে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। আবার বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। এই সময় এটারই খুব দরকার ছিল।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের বিস্ময়কর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি হবে নতুন রেকর্ড। এতে অনেকটাই চাপমুক্ত হবে দেশ। ইতোমধ্যে সে লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।
রেমিট্যান্স কেন বাড়ছে-প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই বাড়ছে রেমিট্যান্স। তিনি বলেন, এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রফতানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কিনেছে। তবে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১০৬ টাকা পর্যন্ত দরে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করেছে। সে হিসাবে কোনো প্রবাসী এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ ডলার দেশে পাঠালে ১০৬ টাকার সঙ্গে নগদ প্রণোদনার ২ টাকা ৫০ পয়সা যুক্ত হয়ে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন। খোলাবাজারে ডলারের দর প্রায় একই। সে কারণেই প্রবাসীরা এখন অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে দেশে টাকা না পাঠিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন বলে জানান ব্যাংকাররা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেমিট্যান্স

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ