পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
চাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, মসুর ডাল, ডিম, সিমেন্ট, রড-এই ৯টি অত্যাবশ্যক পণ্যের মূল্য এখন থেকে সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আর নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে কোনও পণ্য বিক্রি হলে সংশ্লিষ্টদের আর জরিমানা নয়, এখন থেকে সরাসরি মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক বাজারদর ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই ৯টি পণ্যের যথার্থ দাম কী হওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করে দেবে সরকার।
টিপু মুনশি বলেন, এতদিন ট্যারিফ কমিশন শুধু ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্য নির্ধারণ করে দিত। কিন্তু সা¤প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে এই পণ্যগুলোর দাম অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা হওয়া উচিত ছিল না। বিষয়গুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধারাবাহিকভাবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে বাজারে স্থিতিশীলতা তৈরি করা যায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এই বৈঠক করেছে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে ভোজ্যতেল ও চিনির পাশাপাশি চাল, আটা, ময়দা, মসুর ডাল, ডিম, সিমেন্ট ও রডের দামও নির্ধারণ করে দেবে সরকার। সার্বিক বিবেচনায় এই পণ্যগুলোর দাম কী হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব পণ্যের সব পর্যায়ের অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা করে যথাযথ দাম নির্ধারণ করবে। বাজারে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যের বিষয়টি তদারকি করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।
নির্ধারিত দাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। সরকার নির্ধারিত এই দাম কোনো স্তরের ব্যবসায়ী পর্যায়ে লঙ্ঘিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
ভোক্তা অধিদফতরের অভিযান বাড়বে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অভিযানে খালি জরিমানা করেছে। আমি বলেছি টাকা জরিমানা বাদ, অন্যায় যারা করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে তারা সঠিক না ভুল। দুই লাখ লাভ করলো, ৫০ হাজার জরিমানা করলে, সে তো মনের আনন্দে আছে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছে।
বর্তমানে মজুত, কারসাজি কিংবা কৃত্রিম সঙ্কটের মাধ্যমে বাড়তি দাম রাখার ক্ষেত্রে বর্তমান আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ তিন বছর সশ্রম কারাদÐের বিধান রয়েছে। সামনে ভোজ্যতেলের দাম কমবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেলের দাম আমরা অনেকবার বাড়িয়েছি। আবার এ পর্যন্ত তিনবার কমিয়েছি। আপনারা লক্ষ্য করবেন ৬ বা ৭ টাকা সয়াবিনে বাড়ানো হয়েছে, আবার ৭ টাকা পাম অয়েলে কমেছে।
তিনি বলেন, ইন্টারেস্টিং একটি বিষয় লক্ষণীয় আমাদের সয়াবিন তেল কিন্তু ৩৫ শতাংশের মতো ইমপোর্ট হয়। ৬৫ শতাংশ ইমপোর্ট হয় পাম অয়েল। অতএব সার্বিক ইমপ্যাক্টটা ভালো হয়েছে। আমরা খুব শিগগির আবারও বসবো। সময় হয়ে গেছে, হয় তো প্রথম সপ্তাহেই আমরা বসবো। এ সময় আমরা দেখে ঠিক করবো কি হওয়া উচিত। একটা ক্যালকুলেশন সিস্টেম আছে।
এ সময় ডলারের দাম নতুন করে না বাড়লে ভোজ্যতেলের দাম কমতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডলারের প্রাইস যদি না বাড়ে, একটু কমের দিকে থাকে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশাবাদী ডলারের দাম আর বাড়বে না, আরও কমের দিকে যাবে, তাহলে হয় তো তার একটা প্রভাব বাজারে পড়বে।
ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আখতার, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গত ২৩ আগস্ট মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন লিটারে সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বাড়ায়। নতুন দাম অনুযায়ী, বোতলের সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯২ টাকা, পাঁচ লিটার ৯৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ১৪৫ টাকা করা হয়। তার আগে ৩ আগস্ট বিটিটিসিকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনিং অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।