Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিশু-কিশোরদের বিপজ্জনক ব্যবহার বেড়েই চলেছে

খুলনায় মিছিল-সমাবেশ-হামলা মিছিলে জনপ্রতি ভাড়া ১০০ : হামলা-মারামারিতে ৩০০ : প্রভাবিত করে কথিত বড় ভাইরা : নেশার খরচ জোগাতেই অংশগ্রহণ করে অনেকে

ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

খুলনা মহানগরীর রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ কিছুদিন ধরেই বেশ উত্তপ্ত রয়েছে। সরকারি দল ও বিএনপি রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে। প্রায় প্রতিদিনই ছোটবড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এসকল ঘটনার পাওয়া আলোকচিত্রে সম্মুখভাবে ধরা পড়ছে বেশ কিছু শিশু কিশোরের মুখ। মিছিলের সামনে প্যানা-ফেস্টুন হাতে তারা সেøাগান দেয়। সমাবেশে নেতাকর্মীদের সাথে অংশ নেয়। মারামারি সংঘর্ষ হলে হকি স্টিক, রাম দা ও লাঠি নিয়ে তারা আগে এগিয়ে যায়। বয়স কম এবং পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারায় মামলার এজাহারে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এভাবেই খুলনায় রাজনৈতিক মিছিল সমাবেশ ও হামলায় শিশু কিশোরদের বিপজ্জনক ব্যবহার বেড়েই চলেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ সকল শিশু কিশোরদের বয়স ১২ থেকে ১৭-এর মধ্যে। তাদের বসবাস নগরীর বিভিন্ন বস্তি এলাকায়। কেউ কেউ স্কুলে যায়, ভ্যান চালায়। চুরি ও পকেটমারির মত অপরাধও করে থাকে। মারাত্মক আঁঠা ও ইয়াবার নেশায় জড়িয়ে পড়েছে অনেকেই। নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা মিছিল মিটিংয়ে যায়। তারা সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বয়রা কাদের সরদারের বস্তি, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্বর্ণালী বস্তি, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের খোড়াবস্তি, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাবু মিয়ার বস্তি, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুল শিকদারের বস্তি, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রহমানিয়া বস্তি, লবণচরা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বস্তি, জোড়াগেট ও আলমনগর বস্তিতে এই সব শিশু কিশোরদের বসবাস।

জোড়াগেট বস্তিতে কথা হয় এমন এক শিশুর পরিবারের সাথে। রিকশা চালক আলাউদ্দিন শেখ জানান, তার দুই ছেলে। বড় ছেলে ঢাকায় একটি ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। ছোট ছেলে একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মাঝেমাঝে দু’তিনদিনের জন্য ছোট ছেলে বাড়ির বাইরে চলে যায়। কোথায় যায় তা জানি না। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেক শাসন করেছি কিন্তু ছেলে কথা শোনে না। এলাকার বড় ভাইরা এসে মিছিলে ডেকে নিয়ে যায়। বস্তিতে আরো কয়েকটি সমবয়সী ছেলে আছে, তারাও যায় সেই বড় ভাইয়ের সাথে। কথিত বড় ভাইয়ের নাম পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি দলের বড় ভাই, নাম জানালে সমস্যা হবে।
অনুসন্ধানে খোড়াবস্তিতে থাকা এক কিশোরকে পাওয়া গেল যে গত দুই বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের মিছিলেই যোগ দেয়। অনেক অনুরোধের পর কিশোর সাবিরুল জানায়, মিছিলে গেলে ১০০ টাকা পাওয়া যায়। মারামারি করলে ৩০০ টাকা পাওয়া যায়। কারা এ টাকা দেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সে জানায়, লিডাররা দেন। রাম দা, লাঠি ও ছুরিসহ বিভিন্ন অস্ত্র কারা দেয়, তার উত্তর সে দেয়নি। তবে বিভিন্ন নেশার কথা অকপটে সে স্বীকার করে জানায়, দিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা খরচ হয় নেশাদ্রব্যে। বস্তিতে তার মত আরো ৮/৯ জন আছে যারা মিছিল মিটিংয়ে যায়।

এ বিষয়ে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, সুস্পষ্ট আইন রয়েছে, শিশু কিশোরদের কোনো প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত করা যাবে না। এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপরও তাদের ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজে লিপ্ত করানো হচ্ছে। রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিপজ্জনকভাবে তাদের সম্পৃক্ত করা অনুচিত। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও ভূমিকা রয়েছে।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশু-কিশোরদের সম্পৃক্ত করা হয় না। এ বিষয়ে আমরা সজাগ সচেতন রয়েছি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, কখনোই আমাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শিশু কিশোরদের ব্যবহার করি না। শিশুরা দেশের ভবিষ্যত। তাদের এখন পড়াশোনা করার বয়স, ভবিষ্যত গড়ার বয়স।



 

Show all comments
  • Mohmmed Dolilur ৩১ আগস্ট, ২০২২, ৩:১২ এএম says : 0
    একমাত্র দেশের শাসন বেবসতা কে দলীয় সংসদীয় কাচরা দুর্গন্ধ ময়লা আবর্জনা সংসদীয় পদ্ধতি করার পরেই এই অবস্থা,আগে যখন প্রেসিডেনট পদ্ধতি ছিল,এই গুলি ছিল না,বর্তমানে এই দুর্গন্ধ ময়লা আবর্জনা সংসদীয় পদ্ধতি করায়,দলীয় ভাবে এই শিশুদের বেবহার হতেছে,এরা দল দলীয় হয়ে খারাপ হয়ে যাক তাতে কি,দল বড় হবে,আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে এবং আসতে পারবে,এরা গাঁজা আর বাবা খেয়ে বলবে আমার দল তোমার দল এই দল সেই দল,আর কি এদের মধ্যে খমতায় আসতে পারমু এবং থাকতে পারমু কি আবার লেখা পড়া,বর্তমানে ছেলেকে বাবা বলেন,আববা অথবা বাবা,আজকের দিনে ছেলে বাবাকে বলে আজ মিছিল মিটিং আছে,সেখানে যেতে হবে,তখন বাবা কিছু না বলে চুপ থাকতে হয়,মনে মনে বলে হায়রে আমার ছেলে তুমি বড় বাবা অথবা গাঁজা খেয়ে মিছিলে যাও,এই কথা বলার সাহস নেই বলার যে এই আমার ছেলে নামাজ পড অথবা কোথাও যাওয়ার দরকার নেই,কে বলতে পারবে এমন বাবা নেই আজকাল,অরাজকতার সংসদীয় কাচরা দুর্গন্ধ ময়লা আবর্জনার পদ্ধতি যতদিন থাকবে তত্ত্ দিন ছেলে মেয়েরা বরবাদি হবে এবং শিক্ষা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিশু-কিশোরদের বিপজ্জনক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ