Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সকালে ভোগান্তি সন্ধ্যায় স্বস্তি

অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন : প্রথম কার্যদিবসে ঢাকার চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

অফিস আদালতের নতুন সময়সূচির প্রথম দিনে সকালে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। রাজধানী ঢাকা যেন থমকে দাঁড়িয়েছিল। দিনের শুরুতে নগরবাসীর অফিস সময় নির্ধারিত থাকায় ও প্রতিদিনের মতো শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় একই হওয়ায় সব সড়কেই দেখা দেয় যানজট। রাজধানীর প্রতিটি সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি এবং তীব্র যানজট দেখা যায়। কিন্তু কর্মজীবী মানুষের বেশির ভাগই বিকেলের মধ্যে ঘরে ফিরে যাওয়ায় সন্ধ্যায় রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার রাস্তা দেখা গেছে ফাঁকা। স্বাভাবিকভাবেই সিগন্যাল ছাড়া দীর্ঘলাইন ছাড়ায় যানবাহনগুলোকে চলতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর যারা বের হয়েছেন তারা স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করেন।

অন্য সব দিনের চেয়ে গতকাল সকালে একটু আগ থেকেই কর্মচাঞ্চল্য হয়ে উঠে রাজধানী। সরকার ঘোষিত অফিসের নতুন সময়-সূচি অনুযায়ী অফিস-কার্যালয়ে পৌঁছাতে যে যার মতো ব্যস্ত হন। গতকাল বুধবার সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে প্রচণ্ড যানজট শুরু হয়েছে। গণপরিবহনের অপেক্ষায় প্রধান সড়কের পাশে অফিসগামী অনেক যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস এবং ব্যাংকের নতুন সময়সূচির প্রথম দিন রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে যানজটও শুরু হয়েছে। অফিস সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে আসায় গতকাল বুধবার সকাল ৭টা থেকেই ঢাকার প্রায় প্রতিটি রাস্তায় দেখা যায় ব্যাপক ভিড়। তবে ওই সময় বাসের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় এবং আগেভাগে বেশি মানুষ রাস্তায় নামায় মোড়ে মোড়ে দেখা যায় জটলা। বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেককে।

রাজধানীতে বসবাসকারী কয়েকজন বাসিন্দা বলছেন, হঠাৎ অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময় একই সময় হওয়ার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচি পরিবর্তন করলে হয়তো এর বেশি সুফল পাওয়া যেত। করণ একই সময়ে সব প্রতিষ্ঠান শুরু ও ছুটি হওয়ার কারণে রাস্তায় সবাই একসাথে বের হওয়ার কারণে যানজট বাড়ছে। তবে সকালের দিকে যানজট শুরু হয়ে দুপুরে কমে আবার বিকেলে বাড়ে আবার সন্ধ্যায় কমে এভাবেই কাটে গতকালের সারা দিন। নতুন নির্ধারিত সময়ে রাস্তার যানজট কমাতে হলে স্কুলের সময়ের সাথে অফিসের সময়ের পার্থক্য করা দরকার। একই সময়ে হলে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হবে।

জানা যায়, নতুন নিয়মে সব সরকারি অফিস চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। ব্যাংক চলবে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত, এর মধ্যে ৩টা পর্যন্ত লেনদেন করা যাবে। আগে সরকারি অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ চলত। অফিসের কাজের সময় এগিয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই দিন ছুটি দেয়া হয়েছে সপ্তাহে। তবে ক্লাসের সময় রাখা হয়েছে আগের মতই। ঢাকার অধিকাংশ স্কুলের প্রভাতী শাখায় ক্লাস শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। ফলে অফিস ও স্কুলের ভিড় পড়েছে প্রায় একই সময়ে। তাতে বিভিন্ন পয়েন্টে অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঘণ্টাখানেক আগেই যানজট দেখা দিয়েছে। বিমানবন্দর সড়কেও সকাল ৭টার পর থেকে যানবাহনের বেশ চাপ দেখা গেছে। বনানী, মহাখালী, কাকলী, প্রতিটি সিগন্যালেই ছিল দীর্ঘলাইন, গাড়ি চলেছে ধীর গতিতে। বনানী সিগন্যালের যানাবাহনের লাইন আর্মি স্টেডিয়াম ছাড়িয়ে বনানী ফ্লাইওভার পর্যন্ত চলে যেতে দেখা গেছে। চেয়ারম্যানবাড়ি মোড়ে দায়িত্বপালনকারী ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য জানান, নতুন অফিস সূচির সঙ্গে স্কুল শুরুর সময় কাছাকাছি হয়ে গেছে। ফলে একইসঙ্গে প্রচুর যানবাহন রাস্তায় আসার যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর হয়ে আজমপুর, জসিমউদ্দিন মোড় থেকে বিমানবন্দর সড়কে। খিলক্ষেত থেকে বিশ্বরোড হয়ে রেডিসনের সামনে দিয়ে বনানী-কাকুলী হয়ে মহাখালী পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এদিকে মোহাম্মদপুর থেকে বিজয় সরণি, ফার্মগেট-কারওয়ানবাজার হয়ে বাংলামোটর, শাহবাগ এলাকায়ও যানবাহনের চাপ দেখা গেছে।

খিলক্ষেত থেকে কুড়িল হয়ে নতুন বাজার, বাড্ডা হয়ে রামপুরা-মালিবাগ পর্যন্ত, যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকায়ও সকাল থেকেই যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় এবং যানজট নিরসনে আজ থেকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস, আদালত, ব্যাংক নতুন সময়-সূচিতে শুরু হয়েছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিসগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত, ব্যাংকগুলো ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চালু রাখা হবে। তবে লেনদেন বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এ কারণেই দিনের প্রথম প্রহরে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছেন অফিসগামী যাত্রীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, অন্যদিনের মতো সকালে রাস্তায় নেমে সহজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেতে পারিনি। রাস্তায় বের হয়ে দেকা যায় অন্য দিনের চেয়ে গাড়ি বেশি। রাস্তায় যানজট এতো বেশি মেয়েকে নিয়ে রিকশায় অনেক সময় বসে থাকতে হয়েছে। অফিসের নতুন সময়সূচির জন্য সব গাড়ি এক সাথে রাস্তায় নেমেছে।
বাস যাত্রীরা বলেন, রাস্তায় এতো বেশি প্রাইভেটকার এক সাথে বের হওয়ার কারণে যানজট বেশি হয়েছে। প্রাইভেটকারগুলো যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী হয়ে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোকে গুলিস্তান, মতিঝিল, নিউমার্কেট, মিরপুর ও গাবতলীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এই পথে সকালে যাত্রীর ভিড় বেশি থাকে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। তবে নতুন অফিস সূচির শুরুর দিন সকাল ৭টার আগ থেকেই বাসস্ট্যান্ডে ভিড় দেখা গেছে যাত্রীদের। কিন্তু সেই চাপ সামলানোর মত বাস রাস্তায় নেই ছিলোনা সেসময়।

জানতে চাইলে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাবিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, নতুন সময়-সূচিতে একই সময়ে লোকজন বের হওয়ার কারণে রাস্তায় চাপ ছিলো বেশি। ভোরের দিকে যানজট কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানজট বাড়তে থাকে। বিকেলের দিকে আবার যানজট বাড়ে। রাস্তায় যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ