Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মামলার চাপে খালেদা জিয়া

প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৩৬ এএম, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক এসব মিথ্যা মামলা -মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
আইনি প্রক্রিয়ায় সব মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হবেন-আইনজীবীদের প্রত্যাশা
রফিক মুহাম্মদ/মালেক মল্লিক : মামলার চাপে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। শুধু খালেদা জিয়াই নয়, বলা যায় পুরো দলই এখন মামলার চাপে ন্যূব্জ। সারাদেশে বিএনপির নেতারা শত শত মামলা কাঁধে নিয়ে কেউ ফেরারী কেউবা জামিন নিয়ে প্রতিনিয়ত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নামে মোট ৩৭টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। প্রায় প্রতিমাসেই কোন না কোন মামলার হাজিরার তারিখ থাকছে, কোন মামলায় নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারিও হচ্ছে। কয়েকটি মামলা অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এবং কোন কোনটিতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জন্য ধার্য রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রদ্রোহ ১টি, নাশকতার ৯টি এবং মানহানির অভিযোগসহ সারাদেশে অন্তত ৩৭টি মামলা করা হয়। এই সবের মধ্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের চারটি মামলা। এসব মামলায় অন্তত মাসে একবার হলেও আদালত পাড়ায় যেতে হচ্ছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। গত ২৪ নভেম্বর নাইকো দুর্নীতি মামলার খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বিশেষ আদালতে রায়ের পর্যায়ে রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা। এ মামলায় রায় খুব শিগগিরই হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
মামলার ফাঁদে ফেলে বিএনপির চেয়ারপার্সনকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সরকারের এই কৌশলের বিষয়ে বিএনপির আইনজীবী এবং নেতারাও অত্যন্ত সজাগ রয়েছেন। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে নানান মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছে। এ সব মামলা দিয়ে চেয়ারপার্সনের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে সরকার সব রকম ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যে মামলায় সাজা দিয়ে সরকার তাকে আগামী নির্বাচন থেকেও দূরে রাখার হীন ষড়যন্ত্র করছে। তবে সরকারের এ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র কিছুতেই সফল হবে না। বিএনপির নেতাকর্মী এবং দেশের সাধারণ জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের আইনজীবী সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক এই সব মামলা করা হয়েছে, যাতে করে বেগম খালেদা জিয়ার এইসব মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অথচ আদালতে ২০/২৫ বছর আগের মামলা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বেগম জিয়া থেকে তার পরিবারের নাবালক শিশু পর্যন্ত মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা কোনটির আইনগত ভিত্তিও নেই। এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের কোনভাবেই সাজা হতে পারে না। তিনি এতে বেকসুর খালাস পাবেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন আগামী নির্বাচনে অযোগ্য করতেই তার মামলাগুলো সরকার খুব দ্রুত শেষ করতে চাইছে বলে তার আইনজীবীরা অভিযোগ করছেন। আর দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এসব মিথ্যা মামলা সরকার রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেন, এসরকার হামলা ও মামলাবাজ সরকার। বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পরায়ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করছে। এ সরকার বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবে এসব মামলার ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। বিএনপির চেয়ারপার্সনকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার যে ষড়যন্ত্র সরকার করছে তা কিছুতেই সফল হবে না। বিএনপির চেয়ারপার্সনকে মিথ্যে মামলায় সাজা দিয়ে এ সরকার একদিনও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
এ বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ৩৬ থেকে ৩৭ টি মামলা রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি দেশের স্বার্থে মামলাগুলোতে আইনগতভাবে লড়ে যাবেন। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির দাবি, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে করা ৩৭টি মামলার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার নাকশতার এবং রাষ্ট্রদ্রোহের ১০টি মামলায় হাজিরার নতুন তারিখ আদালত নির্ধারণ করেছে। আগামী ৯ জানুয়ারী এ ১০টি মামলায় আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে একইদিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালতে হাজির হয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের পরবর্তী বক্তব্য দেয়ার জন্য আগামী ৮ ডিসেম্বর ধার্য রয়েছে। ওই আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্ব শেষে এ মামলাটির রায়ের দিন ধার্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ ছাড়া অন্য দুটি মামলায় ঢাকার ও নড়াইলের আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ৩৭ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতির মামলা রয়েছে ৫টি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৪টি। মামলাগুলো হল-গ্যাটকো, নাইকো ও বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। রাষ্ট্রদ্রোহ ১টি ও নাশকতার মামলা ৯টি। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ১টি মামলাসহ সব মামলা করা হয় বর্তমান সরকারের আমলে। ৩৭ মামলার মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে দুটি, একটি মামলা আত্মপক্ষের সমর্থন, সাক্ষীর জন্য দুটি, ১৪টি অভিযোগ গঠন শুনানির অপেক্ষায় ও দুটি পলাতকদের পত্রিকা বিজ্ঞাপ্তির জন্য রয়েছে। আর ১৬টি মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। আর  ড্যান্ডি ডায়িং মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমান, আরেক পুত্র আরাফাত রহমানের স্ত্রী-পুত্রকে বিবাদী করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে বিচারিক আদালতে এই মামলার কার্যক্রম চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী।  
সূত্রে জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৪টি মামলা হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আর কয়েকটি মামলা হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও। তবে তার বিরুদ্ধে সেসব মামলার এখনও কোনটি সচল নেই বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার মামলাগুলো সচল করেছে দুদক।
রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার ১০টি মামলা :  ১০ মামলায় খালেদা জিয়াকে আগামী ৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে-দারুস সালাম থানার নাশকতার ৮ মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহের ১টি ও যাত্রাবাড়ী থানার বিস্ফোরক আইনে ১টি মামলা। ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জের ধরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সরকার সমর্থিত অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী। এছাড়াও ২০১৫ সালের যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রোলবোমা হামলা করা হয়। ওই ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা করা হয়। রাজধানীর দারুসসালাম থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়। ৪৫ কোটি টাকার ঋণখেলাপির অভিযোগে সোনালী ব্যাংক একটি মামলা করে। মামলাটি ঢাকার অর্থঋণ আদালতে সাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে। দারুস সালাম থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের আট মামলা, যাত্রাবাড়ী থানার দুই মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি, গ্যাটকো, নাইকো দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের একটি করে মোট ১৪টি মামলা অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও দারুস সালাম থানার নাশকতার মামলায় পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির জন্য ধার্য রয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আসলেই মামলা দুটির অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য হবে। দুই মামলাতেই আসামি খালেদা। তদন্তাধীন ১৬ মামলা :  গুলশানে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা এবং বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মানহানি মামলাসহ ১৬টি মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। গুলশানে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা এবং বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মানহানি মামলাসহ ১৬টি মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। জন্মদিন পালন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ১৭ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। অপরদিকে ২৩ আগস্ট নড়াইলে একটি মানহানির মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।



 

Show all comments
  • ফোরকান ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:১৯ এএম says : 0
    কোন ষড়যন্ত্র কিছুতেই সফল হবে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ