পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নয়ন, উৎপাদন এবং যাপিত জীবনে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। কয়েক মাস আগে কৃচ্ছ্রতা সাধনের লক্ষ্যে অঞ্চলভিক্তিক ‘এক ঘণ্টা লোডশেডিং’ ঘোষণা দেয়া হয়। একই সঙ্গে সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বাস্তবে দেখা যায় সরকারি অফিসে বিদ্যুতের সাশ্রয় হচ্ছে না; অথচ এলাকা ভেদে দিনে ৩ ঘণ্টা থেকে ১৩ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। এই লোডশেডিংয়ে মানুষের দুর্গতিই শুধু নয়; কলকারখানার উৎপাদন কমে গেছে। ভুক্তোভোগীদের অভিযোগÑ প্রচণ্ড গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে দিনরাত ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিঘ্ন হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন কমে গেছে এবং লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। এমনকি অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে শুধু বিদ্যুতের অভাবে। আর বিদ্যুতের ভোল্টেজের ওঠানামা এবং ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় ফ্রিজ, টিভিসহ ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দেশের সারারণ মানুষ। ইনকিলাবের বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা জানান, সবখানেই প্রায় অভিন্ন চিত্র। শহর এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে ঘন ঘন। আর গ্রাম এলাকায় কার্যত মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসে। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না।
বিদ্যুতের অভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রামের কল-কারখানার উৎপাদনের চাকা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তৈরী পোশাক কারখানাসহ ভারী শিল্প কারখানায় উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে গিয়ে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে রফতানিমুখী শিল্পখাত। সরকারি-বেসরকারি তিনটি ইপিজেডসহ চট্টগ্রাম নগরীতে অসংখ্য ভারী শিল্প কারখানা রয়েছে। তৈরী পোশাক, ইস্পাত, সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কারখানা এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি কার্যকর হয়েছে। ছুটির সময় বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলেও জেনারেটরে কারখানার উৎপাদন সচল রাখতে হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী যথাসময়ে পণ্য রফতানি করতে হিমশিম খাচ্ছেন তৈরী পোশাক কারখানা মালিকেরা। লোডশেডিংয়ে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফ্রিজে রাখা মাছ, গোশত, তরিতরকারি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওয়াসার পানির পাম্প ঠিকমতো চালাতে না পারায় অনেক এলাকায় পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন করে গ্রাহকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে সাভারে কবিরপুর এলাকা। গত এক সপ্তাহ থেকে এ এলাকায় ১৩ ঘণ্টার লোডশেডিং চলছে। লোডশেডিংয়ের এমন শিডিউল ও তীব্র গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। সাভার কবিরপুর এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, এলাকা যেন অগ্নিগর্ভ। পল্লী বিদ্যুৎ প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর বিদ্যুতের লোডশেডিং করছে। আর স্থায়ী হচ্ছে এক ঘণ্টা। একে তো তীব্র গরম, এর ওপর বিদ্যুৎ না থাকায় তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং করায় আইপিএসের চার্জও থাকছে না। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর বৈদ্যুতিক পাখা কিছুক্ষণ চালু থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একই এলাকার মনির হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়নের দাবি বাস্তবে তারা দেখতে পাচ্ছেন না। অথচ তারা এক হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল চার হাজার টাকা গুনছেন।
আশুলিয়ার বাসিন্দা শহিদুর রহমান বলে, সাভারে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মধ্যরাতে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। লোডশেডিং স্থায়ী হচ্ছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সারা দিন এদিক সেদিক কাটানো যায়। কিন্তু রাতে তো বাইরে বের হওয়া যায় না। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় ঘরে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মশার উপদ্রব তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে টেকাই দায় হয়ে পড়েছে। একে তো ভ্যাপসা গরম, এর ওপর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ফ্রিজে রাখা তরিতরকারি, মাছ, গোশত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানির পাম্পও চালানো যাচ্ছে না। ফলে পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
সারাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে ছোট-বড় হাজার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান। একদিকে উৎপাদন কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। এতে উভয় সঙ্কটে পড়েছেন শিল্প মালিকেরা। আবার বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে দেশের প্রধান রফতানি আয়ের খাত পোশাক শিল্পের অর্ডার কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। শিল্পোদ্যোক্তারা মনে করেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতির গতি থমকে যাবে। লোডশেডিং কমিয়ে সরকারের প্রশাসনিক ব্যয় কমানো ও সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ২১ লাখের বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। যার আওতায় জনগণ শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। এক যুগ আগে বিদ্যুৎ গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। এই মধ্যবর্তী সময়ে ২ কোটি ১৩ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ বেড়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮টিতে। দেশের যেসব স্থানে গ্রিডের বিদ্যুৎ সরাসরি পৌঁছানো যায়নি সেখানে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সংযোগ এবং সোলার মিনিগ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিপুলসংখ্যক জনগণকে সংযুক্ত করার পর এখন টেকসই, নিরবচ্ছিন্ন এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
জ্বালানি সাশ্রয়ের নামে গত ১৯ জুলাই থেকে সারা দেশে দিনে একবার ১ ঘণ্টা লোডশেডিং করার ঘোষণা দেয়া হয়। আবার শিল্পনগরী এলাকায় সপ্তাহে একদিন শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতিটি বিতরণ কোম্পানিকে লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঘোষণা করার নির্দেশ দেয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী শিডিউলও ঘোষণা করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। কিন্তু শুরু থেকেই দেশের বেশির ভাগ এলাকায় এ শিডিউল মানা হয়নি। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ডিজেলচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। পরে প্রয়োজনে লোডশেডিং বাড়ানো হবে। কিন্তু পরের শিডিউল আজও ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে হরহামেশাই। খোদ ঢাকা জেলার আশপাশের উপজেলাগুলো এবং রাজধানী ঢাকাতেই এলাকাভেদে দিনে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। রাজধানীর বাইরের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। সাভারের কবিরপুর এলাকা। গত এক সপ্তাহ থেকে এ এলাকায় ১৩ ঘণ্টার লোডশেডিং চলছে।
বিদ্যুতের লোডশেডিং আবার তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজধানীতেই দিনে- রাতে পাঁচ থেকে ছয়বার লোডশেডিং করা হচ্ছে। প্রতিবার স্থায়ী হচ্ছে এক ঘণ্টা। আর গ্রাম তো যেন আঁধারে ডুবে থাকছে। দেশের বেশিরভাগ এলাকায় দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার ১৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না। যতটুকু থাকছে তাও আবার ভোল্টেজ কম থাকায় বাতি নিভু নিভু করে জ্বলে। আর বৈদ্যুতিক পাখা যেন ঘোরে না। সবমিলিয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় আঁধারে ডুবছে দেশ। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এ সময়টাকে পিক আওয়ার ধরে সর্বোচ্চ চাহিদা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রাত ১১টার পর থেকে বিদ্যুতের চাহিদা কমতে থাকে। তবুও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে না। বরং দিন দিন বাড়ছে। আজকাল মধ্যরাতেও লোডশেডিং করা হচ্ছে। আর দিন শুরু হচ্ছে লোডশেডিং দিয়ে। খোদ রাজধানীতেই লোডশেডিংয়ের এ অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রামের কথা তো বলাই বাহুল্য। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। লোডশেডিংয়ে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফ্রিজে রাখা মাছ, গোশত, তরিতরকারি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওয়াসার পানির পাম্প ঠিকমতো চালাতে না পারায় অনেক এলাকায় পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিøষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুতের এ লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। কারণ তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যবহার করেও চাহিদার সাথে সরবরাহের সমন্বয় করা যাচ্ছে না। গতকালও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ৪৩ কোটি টাকার তেল পোড়াতে হয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে নিজস্ব জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। এতে খরচ আরো বেশি বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতির গতি থমকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই শিল্পোদ্যোক্তা। এছাড়া এখন বিশ্বমন্দার কারণে সারাবিশ্বেই পোশাকের বিক্রি কমে গেছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৈরী পোশাক খাতের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার মেনুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। গত পরশু আমার এখানে সাত ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ ছিল না। অন্যদিকে গ্যাসও নেই। এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। উৎপাদন কমে যাচ্ছে, শ্রমিকেরা অলসভাবে বসে থাকছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো যে ক্রয়াদেশ পেয়েছে তা শিপমেন্ট করতে পারবে না। কার্গোতে শিপমেন্ট করলে খরচ বেড়ে যাবে। আমাদের যে সুনাম অর্জিত হয়েছে সেটাও নষ্ট হবে। সর্বসাকুল্যে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, লোডশেডিংয়ের সময় আমরা জেনারেটর দিয়ে কাজ করি এবং এতে খরচ প্রকৃতপক্ষে তিন গুণ হয়। এসময় মেশিন ঠিকমতো চালাতে পারি না। এছাড়া লোডশেডিংয়ের দোহাই দিয়ে কর্মচারীরা সুযোগ নেয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে আমরা সবাই ভুক্তভোগী হচ্ছি। বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং তেলের দাম বৃদ্ধিতে সার্বিক পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেছে। বিদ্যুতে যেহেতু আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেখানে কেন সাশ্রয়ী হয়ে এখন বিদ্যুৎ যেটা জেনারেট হচ্ছে সেটাকে তারা বন্ধ করে দিচ্ছে? বন্ধ না রেখে বরং প্রশাসনিক ব্যয় কমানো ও সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
চলমান এ সঙ্কট বিষয়ে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মুখপাত্র আল মামুন মৃধা জানান, এসব ছোট ছোট ওয়ার্কশপ এবং কারখানা ৫ হাজার কোটি ডলার রফতানি আয়ের পেছনে কাজ করে। এসব কারখানা রফতানিযোগ্য পণ্যের যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। ছোট ছোট শিল্প কারখানার বেশির ভাগই আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। ফলে আবাসিক এলাকায় লোডশেডিং কমানো না গেলে যন্ত্রাংশের অভাবে রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া জ্বালানি নিয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকলে বিদেশিরাও বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন বলে মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রামে অসহনীয় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন। ভাদ্রের তালপাকা রোদে হাঁসফাঁস গরমে মানুষ এমনিতেই কাহিল। তার ওপর দফায় দফায় বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। বিদ্যুতের অভাবে স্থবির দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর কল-কারখানার উৎপাদনের চাকা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তৈরী পোশাক কারখানাসহ ভারী শিল্প কারখানায় উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে গিয়ে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে রফতানিমুখী শিল্পখাত। সরকারি-বেসরকারি তিনটি ইপিজেডসহ চট্টগ্রাম নগরীতে অসংখ্য ভারী শিল্প কারখানা রয়েছে। তৈরী পোশাক, ইস্পাত, সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কারখানা এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি কার্যকর হয়েছে। ছুটির সময় বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলেও জেনারেটরে কারখানার উৎপাদন সচল রাখতে হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী যথাসময়ে পণ্য রফতানি করতে হিমশিম খাচ্ছেন তৈরী পোশাক কারখানা মালিকেরা।
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দায় এমনিতেই বাজার সঙ্কুচিত। তার ওপর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কঠিন সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তৈরী পোশাক খাত। কারখানা এলাকায় গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। দফায় দফায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে জেনারেটর ব্যবহার করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের রেশনিংয়েও তেমন সুফল মিলছে না।
নগরীর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা আরো করুণ। মহানগরী এবং আশপাশে অসংখ্য ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে এসব কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মার্কেট, বিপণি কেন্দ্র, শপিংমলে চলছে মহামন্দা। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতার সঙ্কট। ব্যবসায়ীরা পুঁজি ভেঙে খাচ্ছেন। ক্রেতার অপেক্ষায় দোকান খুলে বসে থাকতে গিয়ে লোডশেডিং মোকাবেলা করছেন। দোকান খোলা রাখতে ব্যবহার করছেন জেনারেটর। এতে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলের সাথে বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় বেচাকেনা নেই। অলস সময় পার করছেন দোকান কর্মচারীরা।
অব্যাহত লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। নগরীতে রাতে দিনে কয়েক দফায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরো শোচনীয়। গভীর রাতেও লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। অসহ্য গরমে চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। পিডিবির হিসাবে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ মেগাওয়াট। আর লোডশেডিং করতে হচ্ছে গড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ মেগাওয়াট। তবে বাস্তবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরো বেশি। সঞ্চালন ব্যবস্থায় ত্রুটি কিংবা ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে যাওয়ায় কোনো কোনো এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।