পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমদানির চাপে বৈদেশিক মুদ্রা-ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে দেশের কিছু ব্যাংক অনৈতিকভাবে ডলার ব্যবসায় নেমে পড়ে। তারা কম দামে ডলার কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে ডলার সঙ্কটের সৃষ্টি করেন। পর্যাপ্ত ডলার থাকার পরও ডলার নেই প্রচার করে ব্যাংকে বিক্রির বদলে সিন্ডিকেট তৈরি করে খোলা বাজারে বেশি দরে বিক্রি করেছেন। ব্যাংকে ডলার পাওয়া যায় না, এমন খবরে দেশে হুহু করে বেড়ে যায় ডলারের দাম। ফলে যারা উচ্চশিক্ষা, ব্যবসা, চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান, তাদের খোলা বাজার থেকে অধিক মূল্যে ডলার ক্রয় করতে হয়। এতে অসাধু পন্থায় ডলার বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে ওই সব ব্যাংক। কয়েকটি ব্যাংকের এই ডলার কারসাজিতে কারো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও অনেকেই রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। জানতে চাইলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম আউলিয়া বলেন, ডলারের বাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে আমদানি চাপ কমে এসেছে। পাশাপাশি এ সময়ে প্রবাসী আয়ও বাড়ছে। আমরা একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। তবে বাজার আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাবেন তাই সন্তানের হাতে কিছু ডলার দিবেন আব্দুর রহমান। কিন্তু ডলারের বাজার চড়া। তাই দাম কমার আশায় কয়েক মাস অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু কোনোভাবেই কমছিল না বরং প্রতিদিনই বাড়ছে ডলারের দাম। আর সর্বশেষ ১২০ টাকায় ডলারের দাম উঠলে আরও বাড়তে পারে এই চিন্তায় গত বুধবার ১১৮ টাকায় ১ হাজার ডলার কিনেন। অথচ কয়েক মাস আগেই এই ডলারের দাম ছিল ৮৭/৮৮ টাকা। এমনিতেই মধ্যবিত্ত পরিবারটির করোনায় ছোট ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এরপর সন্তানের উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য ধার-দেনা করে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু ডলারের বাড়তি দামের কারণে আব্দুর রহমানকে অতিরিক্ত প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। যা আসলে পরিবারটির জন্য বাড়তি বোঝা।
রাব্বি হাসান ব্যারিস্ট্রারি পড়তে লন্ডনে যাবেন। বাবা মোজাম্মেল হক টেনশনে আছেন ছেলের কয়েক মাসের চলার জন্য সঙ্গে কিছু পাউন্ড দিতে হবে এ নিয়ে। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারটির মাথায় হাত ডলারের মতোই পাউন্ডের বাজারও চড়া। গত বুধবার একটি মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ১৪৬ টাকায় ১ হাজার পাউন্ড কিনেছেন। অথচ জুলাই মাসের শেষেও ১২০ টাকার আশপাশে পাউন্ডের দাম ছিল। মোজাম্মেল হক জানান, তার বাজেটের অতিরিক্ত ২৬ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে পাউন্ডের পেছনে। এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার মৌসুম। ডলারের পেছনে অতিরিক্ত ব্যয়ে তাই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো বিপাকে। পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের ব্যয় বেড়েছে অনেক।
দেশের মুদ্রাবাজার বেশি কিছুদিন থেকে নিয়ন্ত্রণহীন। খোলাবাজারে কদিন আগেও ডলার বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। পাশাপাশি গত সপ্তাহে পাউন্ডের দামও ছিল চড়া। গত সপ্তাহে খোলাবাজারে ১৪৫ থেকে ১৪৬ টাকায় পাউন্ড বিক্রি করতে দেখা গেছে। ওই সপ্তাহে আরেক মুদ্রা ইউরোর দামও ছিল ১১৬ থেকে ১১৮ টাকা। অথচ ১ মাস আগেও ইউরোর দাম ছিল ৯৬-৯৮ টাকা। আর গত ১৭ মে দেশে খোলাবাজারে ডলার প্রথমবারের মতো ১০০ টাকার ঘর পেরোয়। এরপর আবার কমে আসে। গত ১৭ জুলাই ডলারের দাম আবারও ১০০ টাকা অতিক্রম করে।
আমদানি খরচ বাড়ায় মে মাস থেকে দেশে ডলারের সঙ্কট দেখা দেয়। তাতে রফতানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানি দায় শোধ করা যাচ্ছে না। এর ফলে বেড়ে গেছে ডলারের দাম। পাশাপাশি কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা এই ডলার কারাসাজিতে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত মাসের মাঝামাঝিতে যোগদান করে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু পদক্ষেপ নেন। যেসব পদক্ষেপের কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। গত সপ্তাহ থেকে চলতি সপ্তাহে কিছুটা কমেছে ডলার, পাউন্ডের দাম। গত রোববার ডলার বিক্রি হয়েছে ১১২-১১৪ টাকায় আর পাউন্ড বিক্রি হয়েছে ১৪১-১৪৩ টাকায়। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা নেই। যার কারণে তারা ডলার নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করছে। ডলারকে রাখিমালের ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। আপনি পণ্য কিনে রাখবেন। তারপর পণ্যের দাম বাড়লে বাড়তি মুনাফায় তা বিক্রি করবেন। ডলারকে সে অবস্থায় নিয়ে গেছে ব্যাংকগুলো।
সূত্র মতে, গত রোববার ব্যাংক প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে বৈঠক শেষে ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার কেনাবেচায় দামের ব্যবধান (স্প্রেড) সর্বোচ্চ কত হতে পারবে, তা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে দরে ডলার কেনা হবে, বিক্রির দাম হবে তার চেয়ে সর্বোচ্চ ১ টাকা বেশি।
এর আগে ডলারের সঙ্কট কমাতে ও দাম সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া নানামুখী পদক্ষেপের মধ্যে বিলাসী পণ্যসহ সার্বিক আমদানিতে নানা শর্ত আরোপ করা হয়। এতে কমেছে আমদানির এলসি (লেটার অব ক্রেডিট-ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ, এতে চাপ কমেছে ডলারের বাজারে, ফিরতে শুরু করেছে টাকার মান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, আগস্ট মাসের ১১ দিনে দেশে মোট ১৬১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা জুলাই মাসের তুলনায় ৯৪ কোটি ডলার বা ৩৬ শতাংশ কম। জুলাই মাসে আমদানি হয়েছিল ২৫৫ কোটি ডলার। খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারে ডলারের সঙ্কট ও দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে ব্যাংক শাখাগুলোতে নগদ ডলার কেনা ও বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শাখাগুলোও ডলার কিনতে ও বিক্রি করতে পারবে। আগে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী (এডি) শাখা ডলার কেনাবেচা করতে পারত।
এছাড়া প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ব্র্যাক, সিটি, ডাচ-বাংলা, প্রাইম ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণ করতে গত ৮ আগস্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য ডলার দাম বৃদ্ধির কারসাজিতে জড়িত ছিল আরও প্রায় ১০টি ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরও এ কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর তাই কারসাজিতে জড়িত কিছু ব্যাংকের কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিলেও অন্যান্য ব্যাংকগুলো ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা নিজে যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুযোগ নিয়েছেন, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দিয়েছেন। এমনকি যাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে, তাদের থেকেও অধিক ডলার সংরক্ষণ করে কয়েকগুণ মুনাফা করেছে একাধিক দেশি ও বিদেশি ব্যাংক। অথচ তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় বেসরকারি ব্যাংক ‘ব্যাংক এশিয়া’ গত বছরের জানুয়ারি-জুন এই সময়ে ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধি করে প্রায় ৮০০ শতাংশ মুনাফা করেছে। এনসিসি ব্যাংক ৫০০ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংক প্রায় ৪০০ শতাংশের বেশি মুনাফা করেছে। একই সঙ্গে দেশীয় আরও একাধিক ব্যাংক ডলার কারসাজি করে ১০০০ শতাংশের বেশি মুনাফা করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। পাশাপাশি বিদেশি ব্যাংক এইচএসবিসি ব্যাংক ১০০০ শতাংশের বেশি মুনাফা করলেও তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। আর এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।