দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
১। মোহাম্মদ ফাহমিদুল বারী রাইয়্যান খেজুরবাগ ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : মহানবীর (সা.) অলৌকিক মিরাজ সম্পর্কে আলোচনা করুন?
জবাব : মহানবীর ঐতিহাসিক মিরাজ আমাদের লক্ষ্য ও গন্তব্যের সন্ধান দেয়। মিরাজ আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক গভীর করে তোলে। কুরআন-হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে মিরাজ প্রমাণিত। তা অস্বীকার করা কুফরি। মিরাজের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। নি¤েœ ঐতিহাসিক মিরাজ নিয়ে হাদিসের আলোকে আলোকপাত করবো। বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাামের নবুওয়তী জিন্দেগিতে যেসকল অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল তন্মধ্যে মিরাজের ঘটনা অন্যতম। যা পবিত্র কুরআনুল কারীম এবং মাশহুর, মুতাওয়াতীর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন কারীমের দু’টি সূরায় পবিত্র মিরাজের আলোচনা করেছেন। একটি হলো সূরায়ে ‘ইসরা’ অপরটি হলো সূরায়ে ‘নাজম’। এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন, মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছিলাম যেন আমি তাকে আমার নিদর্শনাবলী (কুদরতিভাবে) দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি অধিক শ্রবণকারী ও দর্শনশীল’। (সূরা বনি ইসরাঈল : ১) কুরআনের পরিভাষায় ‘ইসরা’ শব্দ দ্বারা মিরাজের ঘটনার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হাদিসের পরিভাষায় ‘উরজুন’ শব্দ দ্বারা মিরাজের ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। ‘ইসরা’ ধাতু থেকে ‘আসরা’ শব্দটি উৎসারিত। আভিধানিক অর্থে রাত্রে নিয়ে যাওয়া। সফরটি রাত্রের একাংশে সম্পাদিত হয়েছে বিধায় ঘটনাকে ইসরা বলা হয়। ‘উরজুন’ ধাতু থেকে মে’রাজ শব্দ উদগত হয়েছে। তার শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি। যেহেতু রাসূল (সা.) মসজিদে আকসা থেকে সিঁড়ির মাধ্যমে (রফরফ বা বোরাকের’ মাধ্যমে) আরোহণ করে, বায়তুল মামুর এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছে ছিলেন বিধায় উপরিউক্ত সফরকে মিরাজ বলা হয়। আরবি মাস ‘রজবের’ ২৭ তারিখ নবুওয়ের দশম বর্ষে নবী করীম (সা.)-এর ৫০ বৎসর বয়সে পবিত্র মিরাজ সংঘটিত হয়। (সূত্র : সীরাতে মোস্তফা : আশেকে এলাহি মিরাঠি, ও তারিখুল ইসলাম : মাওলানা হিফজুর রহমান সীহারভী) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘তাঁর দৃষ্টিভ্রম হয়নি এবং তিনি সীমালঙ্গনও করেননি। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছেন’। (সূরা আন নাজম : ১৭-১৮) বিখ্যাত সাহাবি হজরত ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, রজবের সাতাইশ তারিখ রাতে হঠাৎ আমার কাছে জিবরাইল (আ.) একটি সাদা রঙের ‘বোরাক’ নিয়ে উপস্থিত হলেন। (বোরাক হচ্ছে সাদা রঙের এক প্রকার আরোহণের যন্ত্র, সে প্রতিটি কদম ফেলে দৃষ্টির শেষ সীমানায়) রাসূল (স.) বলেন, আমি এতে আরোহণ করলাম, অতপর মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং সেখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করলাম। এরপর আমি মসজিদ থেকে বের হলাম। তখন জিবরাঈল (আ.) একটি শরাব এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হলেন। তখন আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। জিবরাঈল (আ.) বললেন আপনি ফিতরাতকেই গ্রহণ করেছেন। (-মুসলিম শরীফ ১ম.পৃ.৯১) আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহ.) ঘটনার বর্ণনা এভাবে বর্ণনা করেন, একদা রাত্রিবেলা রাসূল (সা.) হজরত উম্মে হানী (রা.) নিঝুম নিলয়ে নিভৃতে আরাম নিচ্ছিলেন। রাসূল (সা.) তখন তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন। এমন সময় বিস্ময়করভাবে ঘরের ছাদ ফেটে যায় এবং ছাদপথে ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) কুঠরিতে অনুপ্রবেশ করেন। জিবরাঈল (আ.)-এর সাথে অন্য ফেরেশতারাও ছিলেন। জিবরাঈল রাসূল (সা.)-কে ঘুম থেকে জাগিয়ে হারাম শরিফে নিয়ে আসেন। রাসূল এখানে এসে হাতীমে কাবায় ঘুমিয়ে যান, জিবরাঈল ও মিকাঈল (আ.) পুনরায় রাসূলকে জাগিয়ে দেন এবং ‘জমযম’ কূপের পাশে তাকে নিয়ে আসেন। সেখানে রাসূলের (সা.) বক্ষবিদারণ করে পবিত্র জমযম পানি দ্বারা তার বক্ষ মোবারক ধৌত করেন। অতপর একটি আরোহণের যন্ত্র বোরাক আনা হয়। রাসূল (সা.) সে যানবাহনে আরোহণ করেন। রহমতে আলমের কুদরতি বাহন বোরাক বায়ূগতিতে চলছে। যাত্রাপথে রাসূল (সা.) ইয়াসরীব নগরীতে উপস্থিত হন। জিবরাঈল (আ.) রাসূলকে পরিচয় করিয়ে দেন এটা ‘ইয়াসরিব’ উপত্যকা। আপনার হিজরতের স্থান। রাসূল (সা.) সেখানে অবতরণ করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। বোরাক চলতে থাকে দ্রুতগতিতে। ‘তুর’ পর্বতের পাদদেশে সীনাই প্রান্তরে উপস্থিত হয়। জিবরাঈল রাসূলকে পরিচয় করিয়ে দেন এটা তুর পর্বত। এখানে আল্লাহপাক হজরত মুসা (আ.) নবীর সাথে কথা বলেছিলেন। এখানেই মুসা (আ.) নবুওয়াত লাভ করেছিলেন। রাসূল সেখানে অবতরণ করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। এভাবে টর্নেডু গতিতে চলছে বোরাক। ক্রমেই ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান ‘বায়তু লাহাম’ ফিলিস্তিনে উপস্থিত হন। জিবরাঈল (আ.) নবীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর জন্মস্থান। তখন সেখানে দু’রাকাত নামাজ পড়েন। এভাবে বিভিন্ন পয়গাম্বরদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ অতিক্রম করে করে ‘বায়তুল মোকাদ্দাসে’ পৌঁছেন। (চলবে)
উত্তর দিচ্ছেন : এহসান বিন মুজাহির
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।