Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেলকে জনপ্রিয় করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এম খালেদ সাইফুল্লা : সব দেশেই রেলের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের রেলের অবস্থা হচ্ছে দিন দিন খারাপ। বিপদে না পড়লে কেউ আমাদের রেল গাড়িতে মানুষ ওঠে না। উঠতে চায়ও না। কিন্তু বাইরের দেশে রেলগাড়ি বেশ আনন্দদায়ক ভ্রমণ। প্রয়োজন না থাকলেও পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মানুষ রেলভ্রমণ করে। জাপান, জার্মানি, চীন প্রভৃতি দেশে রেলগাড়ি চলে খুব দ্রুত। প্রায় উড়োজাহাজের গতিতে ঘণ্টায় ৪০০ থেকে ৫০০ মাইল বেগে। আমাদের রেলগাড়ি চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ৩০০-৪০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত শহরে রেলগাড়িতে যেতে আমাদের লাগে প্রায় সারাদিন। অন্যদেশে এমন দূরত্বে রেলগাড়িতে পৌঁছতে লাগে মাত্র এক-দেড় ঘণ্টা। এছাড়া অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা, ছিনতাই, ডাকাতের কবলে পড়ে মালপত্র খোয়ানোসহ জীবন বিনাশের ঘটনাও ঘটে এখানে। শুধু তাই নয়, সকালের গাড়ি বিকালে পৌঁছানোর ঘটনাও ঘটে।
রেল সড়কের পুরনো অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, রেল সড়কের ওপর হাটবাজার, দু’পাশে বসতি, কয়েক মাইল পর পর অন্য যানবাহনের ক্রসিং প্রভৃতি কারণে রেলগাড়ির গতি যেমন ধীর হয়, তেমনই এসব প্রতিবন্ধকতার জন্য রেল সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটে প্রায় প্রতিদিনই। তাই আমাদের দেশের অনেক মানুষই আজকাল রেলগাড়িকে আতঙ্ক মনে করেন। তারা পারতপক্ষে রেলগাড়িতে ভ্রমণ করেন না। অথচ আমাদের এদেশে এক সময় রেলগাড়ি ছিল আকর্ষণীয় পরিবহন মাধ্যম। মানুষ সখ করে রেলগাড়ির নিকিট কেটে ভ্রমণ করতেন।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে রেলের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে এতে। রিপোর্টটিতে কেবল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, তেজগাঁও, টঙ্গী রেলস্টেশনের আওতাভুক্ত রেলসড়কের কথা বলা হলেও এ অবস্থা প্রায় সারাদেশেরই। অনেক জায়গায় রেললাইনের নাট-বল্টু, ক্লিপ নেই। সড়ক থেকে পাথর সরে গেছে বা চুরি হয়ে গেছে। বিনা বাধায় লাইন দিয়ে মানুষ হাঁটাচলা করছে রেলসড়কের ওপর দিয়ে। দোকানপাটও বসে রেলসড়কের ওপর। কেনাকাটা চলে। ক্যারাম, ক্রিকেট খেলাও চলে মহানগরী ঢাকার মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া রেলসড়কের পাশেই। মাঝে মাঝে বস্তি, বাজার উচ্ছেদ করা হলেও রহস্যজনকভাবে সেগুলো আবার বসে যায়। কারওয়ানবাজারের কাছে রেলসড়কের পাশে বিরাট বস্তিটি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। দিনে-দুপুরে এখানে প্রকাশ্যে গাঁজা বেচাকেনা হয়। পুলিশসহ কেউ তাদের কিছু বলে না। টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত অনেকগুলো বস্তি উঠেছে রেলসড়কের পাশে। এসব বস্তি কারা বসায়? কেন বসে তা সবারই মোটামুটি জানা। কিন্তু বস্তি উচ্ছেদের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
১৮৬১ সালের রেলওয়ে আইন মোতাবেক রেলসড়কের ২০ ফুটের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত সাধারণ মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সবসময় ১৪৪ ধারা বলবৎ। অথচ এ আইন কেউ মানে না। রেলসড়কের ওপর দিয়ে শত শত মানুষ তো হাঁটাচলা করেই। সড়কের ওপর লোহালক্কড় ফেলে ওয়েল্ডিং কারখানার লোকজন কাটাকুটাসহ প্রায় সারাদিন গ্রিল তৈরির মতো কাজকর্ম অবাধে করে চলে। কেউ তাদের বাধা দেয়ার নেই। ফলে ঢাকার মগবাজার, খিলগাঁও, মালিবাগ তেজগাঁও এলাকায় প্রায়শ রেল দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়। আইন অনুসারে রেলসড়কের ২০ ফুটের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কাউকে পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু এ আইন সম্পর্কে যেন কারোরই কোনো করণীয় নেই।
যাহোক, রেলের উন্নয়ন করতে হলে সবরকম দুর্নীতি, অনিয়ম দূর করে একে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। রেলের অবস্থা সুন্দর হোক, দুর্নীতিমুক্ত হোক। রেল জনপ্রিয় পরিবহনে পরিণত হোক। গ্রহণযোগ্য হোক, এ আমাদের সকলের কাম্য।
লেখক : যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় কমিটি, এলডিপি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন