পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
দরপতনের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দিয়েও দেশের পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বৈশ্বিক টানাপোড়েনের ধাক্কায় অস্থির দেশের অর্থনীতিতে সুদিন না ফেরা পর্যন্ত পুঁজিবাজারের সঙ্কট কাটবেনা বলেও মনে করছেন তারা। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলছেন বিশ্লেষকরা।
ঈদের পর থেকেই মন্দা ভাব চলছে ঢাকার পুঁজিবাজারে। গেল ১৩ কার্যদিবসে সূচকের উত্থানপতনে ডিএসই’র প্রধান সূচক ৬৩৫৫ পয়েন্ট থেকে কমে দাড়িয়েছে ৫৯৮০ পয়েন্টে। ধারাবাহিক পতনের জেরে মন্দা ছিল লেনদেনেও। দুই সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন হয় ৬০৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১৯, ২৪ ও ২৮ জুলাই লেনদেন ছিল আশঙ্কাজনক কম।
সূচক ও লেনদেনের মন্দাভাবে ঈদের পর মাত্র ১৩ দিনেই ঢাকার পুঁজিবাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। মন্দা ঠেকাতে তাই আবার দরপতনের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে বাজারে।
নিদের্শনা অনুযায়ী, ফ্লোর প্রাইস ঠিক হবে সবশেষ ৫ দিনের ক্লোজিং প্রাইসের ভিত্তিতে। দর স্বাভাবিক হারে ওঠানামা করতে পারলেও তা ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না। এরআগে করোনা সংক্রমণের সময় পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন হলে ২০২০ সালে ফ্লোর প্রাইস চালু করে ছিল বিএসইসি। পরে বাজার স্বাভাবিক হলে তিন ধাপে তা প্রত্যাহার করা হয়।
২০২০ সালে দেশে করোনা সংক্রমণের পর বাজারে ধস ঠেকাতে এই উদ্যোগ সফল হয়েছিল। এবারও এই উদ্যোগ ধস ঠেকাবে বলে আশা করছে সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে, যা আগামী কর্মদিবস থেকেই কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দর সংশোধনে যাওয়ার পর পুঁজিবাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এর মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে শুরু হয় নতুন এক সঙ্কট।
১৩ মাস পর মূল্যসূচক প্রথমবারের মতো নেমে গেছে ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে। এর মধ্যে গত সপ্তাহের পুরোটা, তার আগের সপ্তাহের শেষ তিন দিন এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ধসের মধ্য দিয়ে টানা ৯ কর্মদিবসে সূচক পড়ে ৩১৪ পয়েন্ট।
বিএসইসি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান জানান, ফ্লোর প্রাইস তাদের পছন্দ না হলেও বাস্তবতার আলোকে দিতে হয়েছে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, সবসময় যেটা বলি, এখনই তাই বলব, রেগুলেটর হিসেবে এভাবে ইন্টারফেয়ার করা মার্কেটের জন্য ভালো নয়। ঠিকও না। যখন দেখলাম যে, বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে পুঁজিবাজারে যে পতন এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের খুব ব্লিডিং হচ্ছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার ফলে আগের মতোই লেনদেন কমে যাবে বলে আশঙ্কায় শিবলী রুবাইয়াত। তবে এতে আতঙ্ক কমবে বলে মনে করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, দরপতন থেমে যাবে। কিন্তু ট্রানজেকশন কমে যাবে। কিন্তু আমার কিছু করার নাই। আগের মতো তিন-চার হাজারে সূচক নিয়ে গিয়ে মানুষকে ধ্বংস করবে না। তার আগে ছয় হাজারেই থামাই। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লে পুঁজিবাজারে ধস নামে। প্রতিদিনই শেয়ারদর ক্রমেই কমার পাশাপাশি কমে আসছিল লেনদেন।
এই পরিস্থিতিতে ওই বছরের ১৯ মার্চ প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দিয়ে ঘোষণা করা হয় ফ্লোর প্রাইস। আগের পাঁচ কর্মদিবসের দরের গড় হিসাব করে এই ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়। এই সিদ্ধান্তে বাজারে আতঙ্ক থামে। পরে কয়েক ধাপে তুলে নেয়া হয় ফ্লোর প্রাইস। ২০২০ সালের মে মাস থেকে পুঁজিবাজার উত্থানে ফেরে। প্রথমে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়।
এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছিল কমই। আর ফ্লোর প্রত্যাহারে প্রথম কয়েক দিন দর ঢালাওভাবে কমার পর সেসব কোম্পানির দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ করে দেয়া হয়। এরপর দেখা যায়, এই ৬৬টি কোম্পানির শেয়ারের ব্যাপক লেনদেন হচ্ছে আর একপর্যায়ে বেশির ভাগ কোম্পানির দর ফ্লোর প্রাইসকে ছাড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় ৩ জুন বাকি ৩০টি কোম্পানির ফ্লোর প্রত্যাহারের পরেও একই চিত্র দেখা দেয়। এই ৯৬টি কোম্পানির চিত্র পর্যালোচনা করে ১৭ জুন ফ্লোর প্রাইস পুরোপুরি তুলে দেয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।