পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রবেশদ্বার গেলে বাঁ দিকে ঘুরতেই চোখে পড়ে বর্জ্যরে স্তূপ। বিচারপ্রার্থীদের অভ্যর্থনা জানাতেই যেন নগরীর বর্জ্য এখানে জমা করা! আদালত অঙ্গনে নিত্য যারা আসেন দৃশ্যটি তাদের গা সওয়া। কিন্তু অনভ্যস্ত কারও পক্ষে নাকে টিস্যু না চেপে জায়গাটি অতিক্রম করা কষ্টসাধ্য। সিলেট বিভাগীয় শহরের আদালত চত্বর বলে কথা। সুপরিসর, সুবিন্যাস্ত ভবন। এর মাঝে লতা-গুল্মে আচ্ছাদিত ব্যবহার অনুপযোগী স্থাপনাও রয়েছে। ৯টা বাজতেই ঘন হতে থাকে জনসমাগম। বিচারক, সহায়ক স্টাফ, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, আদালত সংশ্লিষ্ট সব মানুষ জড়ো হন এ অভিন্ন গন্তব্যে। দেশের আর সব আদালত প্রাঙ্গণের দৈনন্দিন চিত্র যেমন- ব্যতিক্রম নয় এখানেও। আদালত ভবন, বিচারক, এজলাস, বিচার প্রক্রিয়া, আইনের ধারার মতো জটিল অলিগলি এবং আগত বিচারপ্রার্থীর সঙ্কটের জটাজাল নিয়ে ভাবতে ভাবতে এখানে কাটিয়ে দেয়া সম্ভব একটি দুপুর।
সিলেট আইনজীবী সমিতির ৩ নম্বর ভবন। একটি কক্ষে উঁকি দিতেই প্রত্যক্ষ করা গেল, ভিকটিম-আইনজীবীর দর-কষাকষি। মধ্যবয়সি মহিলা। সঙ্গে বাচ্চা। আইনজীবীকে অণুনয় করে বলছেন, বিশ্বাস করেন স্যার, আমার কাছে আর নাই! বিকাশে ৫, ওইদিন ১০ আর আজ ১৫। বিরক্ত আইনজীবীর- এসব কী দ্যাও ! এইটা কি ৩০-৪০ হাজার টাকার কেস? এক লাখ টাকার কম কারও বাপেরও সাধ্য নাই, এই মামলায় বেইল (জামিন) করে! জননিরাপত্তা আইনের মামলা। দুই-এক মাস তো ভেতরে (কারগারে) থাকতেই হবে! কোর্ট জামিন না দিলে আমি কি জেলের তালা ভেঙে ছাড়িয়ে আনব? আইনজীবীর ঝাঁঝাঁলো কথায় কেঁদে ফেললেন নারী। জানা গেল, তার উপার্জনক্ষম স্বামী, ভাঙচুর মামলায় কারাগারে। দুই সপ্তাহ ধরে ছোটাছুটি করছেন আদালতে। শুধুই টাকাই ঢেলে যাচ্ছেনÑ কাজ হচ্ছে না।
কথা হয়, বাটোয়ারা মামলার বিচারপ্রার্থী বদিউল আলমের সঙ্গে। এক মামলায় দৌড়াচ্ছেন ৬ বছর। আইনজীবীকে শুধু টাকাই দিয়ে যাচ্ছেন। রায় পাচ্ছেন না। ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘এখানকার উকিল টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না!’ নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিনপ্রাপ্ত ছমিরন বেওয়া বলেন, এইখানকার উকিলদের ফি অনেক বেশি। জিআরও, পেশকার, সেরেস্তাদার, রেকর্ড কীপারসহ এখানকার ইট-কাঠও যেন হা করে থাকে টাকার জন্য!
বিভাগীয় সদরের আদালত হিসেবে সিলেট আদালতে নিত্য ভিড় করেন হাজারও বিচারপ্রার্থী। এক কম্পাউন্ডের ভেতর বিভিন্ন এখতিয়ার সম্পন্ন ৫৫টি আদালতে বিচার চলে এখানে। এর মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আওতায় রয়েছে ৪২টি আদালত। ৪টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ১টি সাব জজ, সিলেট সদরসহ ১২টি উপজেলায় রয়েছে একটি করে দেওয়ানি আদালত। পারিবারিক আদালত ও ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ৪টি বিশেষ আদালত, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালত, অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও ১৩ উপজেলার একটি করে আমলী আদালত (কগনিজেন্স কোর্ট) আছে এখানে। মহানগর দায়রা আদালতের আওতায় রয়েছে ১১টি আদালত। এরমধ্যে একটি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালত, দু’টি যুগ্ম দায়রা আদালত, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালত, অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ছাড়াও মেট্রোপলিটন এলাকার ৬টি থানার পৃথক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে। এসব আদালতে মামলা পরিচালনা করেন, কয়েক হাজার আইনজীবী। তবে সিলেট জেলা বারের সদস্য রয়েছেন ২ হাজারের মতো। তারা বিচারপ্রার্থীদের আইনি সেবা দেন। এর মধ্যে সরকারপক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য রয়েছেন ৮৬ জন পিপি, জিপি, অতিরিক্ত পিপি এবং এপিপি। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা পরিচালনার জন্য পৃথক ২ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। সিলেট জেলা আদালতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সহায়ক জনবল রয়েছেন ১০২ জন কর্মচারী।
সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের দৃষ্টিনন্দন ১০তলা নতুন ভবনের দু’টি লিফটের একটি অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। যেটি চালু সেটিতে আইনজীবীদের অগ্রাধিকার। সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের উঠতে হয় হেঁটেই। লিফটের সামনে অসুস্থ, বয়স্ক বিচারপ্রার্থীদের দীর্ঘলাইন চোখে পড়ার মতো। ভবনের অনেক কক্ষে এজলাস থাকলেও গুটগুটে অন্ধকার। বিচারক অনুপস্থিত। স্বল্প আলোয় কাজ করছেন কয়েকজন স্টাফ। খালি কক্ষে একজনকে গান গাইতে শোনা যায় হেরে গলায়। ভবনের আনাচ-কানাচ অপরিচ্ছন্ন। দেয়ালের পলেস্তরা ড্যাম হয়ে জমেছে শ্যাঁওলা। এ যেন সিলেট আদালতপাড়ার বিচারপ্রার্থীর দুর্ভোগ, হয়রানি আর অব্যবস্থাপনার সার্বিকতাকেই নির্দেশ করছে।
আলাপচারিতায় আইনজীবীরা জানালেন, কয়েক মাস ধরে সিলেটের আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তির গতি বেড়েছে। বিশেষত: প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা পাওয়ার পর বিচারকদের মাঝে তৎপরতা বেড়েছে। তবে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এখনও বিদ্যমান। চাঞ্চল্যকর মামলাসহ ফৌজদারি অনেক মামলাই রয়েছে, একের পর এক শুধু বিচারক বদলি হচ্ছেন। মামলা এগোচ্ছে না। আইনজীবীদের চোখে বড় সঙ্কট বিচারাধীন মামলার তুলনায় বিচারক স্বল্পতা। বিশেষত : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চলছে একজন বিচারককে দিয়ে। যেখানে প্রয়োজন ৩ জন বিচারক। এ আদালতে মামলা সংখ্যা এখন ৭ হাজার ছুঁই ছুঁই। ঘন ঘন বিচারক বদলিকে মামলাজটের বড় কারণ বলে জানালেন সিলেট আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট মো: ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি জানান, স্যাটেলমেন্ট কোর্টের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এখানে মামলা কম করে হলেও ২০ হাজার হবে। বারের কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী জানান, মানুষের হয়রানি ও দুর্ভোগ লাঘবে স্যাটেলমেন্ট কোর্টের সংখ্যা বাড়াতে তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। সিলেট জেলা আদালতে কত মামলা বিচারাধীনÑ এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না কেউই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেরেস্তাদার জানান, মামলার প্রকৃত সংখ্যা দেয়া অত্যন্ত কঠিন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এখন মামলা গণনা চলছে। কিন্তু এতেও প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ সম্ভব কি-না সন্দেহ। কারণ, একটি মামলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর একাধিক মামলার উৎপত্তি। সে ক্ষেত্রে কোন্ মামলাটিকে হিসেবে আনা হবে? সবগুলোকে একটি মামলা ধরা হবে নাকি প্রতিটির পৃথক হিসাব আলাদা? নির্দেশনায় স্পষ্টতা নেই। আদালত সহায়ক আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনীয়তার চার ভাগের একভাগ জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। একেকজনের ত্রাহিদশা। তবুও লোকবল বাড়ানো হচ্ছে না। অব্যবস্থাপনার অভিযোগও এ কারণেই।
নানা সমস্যা ও সঙ্কটে জর্জরিত বিভাগীয় শহর সিলেটের আদালত। কিন্তু এ বিষয়ে ‘অন-রেকর্ড’ কথা বলতে রাজী হলেন না, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: সামছুল হক। শুধু বললেন, সর্বাঙ্গে ব্যথা-ওষুধ দেবো কোথা? কথা বললে অসুবিধা আছে!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।