পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বাংলাদেশের মুদ্রার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের ঊর্ধ্বমুখী গতি থামছেই না। গতকাল খোলা মার্কেট (কার্ব মার্কেটে) মার্কিন মুদ্রা বিক্রি হয়েছে ১০৪ টাকার বেশি দরে। ডলারের সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েই চলেছে। এদিন ঢাকার মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলার ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত কেনাবেচা হয়েছে। মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের আগে ও পরে ১০০ থেকে ১০২ টাকার মধ্যে ডলার কেনাবেচা হলেও এদিন তা ১০৪ টাকা ছাড়িয়ে যায়। খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারগুলো সাধারণত বিদেশ ফেরত ও সংগ্রহে থাকা ডলার ক্রয় করে। ব্যাংকের রফতানি ও প্রবাসী আয়ের সঙ্গে এই বাজারের সম্পর্ক নেই। এদিকে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলেও ডলারের দাম বেড়ে গেছে। কারণ, রফতানি বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত বৃহস্পতিবার থেকে অবশ্য প্রতি ডলারের জন্য খরচ করতে হচ্ছে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা।
সূত্র মতে, গত এক মাসের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। এদিকে খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে আরও চড়া দামে। দুই সপ্তাহ আগে খোলাবাজারে ডলারের দাম ছিল ৯৮ টাকা। গত সপ্তাহের শুরুতে তা এক শ’ টাকার ওপরে ওঠে। ২০ জুলাই তা ১০২ টাকা ৬০ পয়সা পর্যন্ত হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গতবছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সঙ্কট শুরু হয়। যা এখনও অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। তবে গতবছরের ৩ আগস্ট থেকে দু-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গতবছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছাড়ায়। অবশ্য চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা হয়েছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। যা ৯ জানুয়ারি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ টাকা। গত ২৩ মার্চ তা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। গত ২৭ এপ্রিল ডলার প্রতি ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত ১০ মে ডলার প্রতি আরও ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত ১৬ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ২৩ মে আবারও ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করে। এরপর ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। গত ২ জুন আরও ৯০ পয়সা বাড়িয়ে ডলার দাম ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। গত ১৫ জুন ডলার দাম ছিল ৯২.৮০ টাকা। এরপর ২১ জুন ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯২.৯০ টাকা।
এদিকে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের এডি ব্যাংকগুলোর ডলার বিনিময় মনিটরিং করাসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে দেয়া চিঠিতে তিনি এ আহ্বান জানান। চিঠিতে চেম্বার সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বাড়ছে। এরইমধ্যে এ মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকগুলো নির্দেশনা জারি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মূল্য অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দাম ৯৪ টাকার মধ্যে থাকলেও অনেক ব্যাংক এখন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০২ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। তিনি বলেন, এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিল্পের কাঁচামাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যয় অনেক বাড়বে। যার দায়ভার শেষ পর্যন্ত ভোক্তা সাধারণকেই বহন করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ যা প্রকৃতপক্ষে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রায় ১০ শতাংশ। এই মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে। এ ধারা চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ আরও বাড়বে। সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এডি ব্যাংকগুলোর জন্য ডলার বিনিময়ে একই হার নির্ধারণ করে দিলেও অনেক ব্যাংক ওই নির্দেশনা প্রতিপালন করছে না এবং তাদের ইচ্ছেমতো দর আদায় করছে। এই অবস্থা উত্তরণে ব্যাংকগুলোর ডলার বিনিময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ের আওতায় আনা প্রয়োজন। ভোগ্যপণ্যসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি এবং শিল্পোৎপাদনের ব্যয় হ্রাসে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে এডি ব্যাংকগুলোর ডলার বিনিময় মনিটরিং করাসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নরের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানান চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।