পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
গাড়ি-বাড়ির ঋণে ৯ শতাংশ সুদের হার তুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে গভর্নরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। এ ছাড়াও উৎপাদনশীল খাত বাদে বিলাসপণ্য উৎপাদন ও আমদানি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ এবং গাড়ি, বাড়ি, ব্যক্তিগতসহ বিভিন্ন ভোক্তাঋণে সুদহারের সীমা তুলে দিতে বলেছেন ব্যাংক মালিকরা। সম্প্রতি এ ব্যাপারে বিভিন্ন দাবি নিয়ে নবনিযুক্ত গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করেছে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ সংগঠনটির নেতারা। বিএবির দাবির ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিএবির চাপে এর আগে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করা হয়েছে। বিভিন্ন নীতিমালা স্থগিত ও পরিবর্তনও করা হয়েছে। তাই তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুদহারের সীমাও তুলে দেয়া হতে পারে।
বিএবির চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু পরে ব্যাংকগুলো এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। ঋণের সুদহারের সীমা বেঁধে দেয়ার কারণে ব্যাংকগুলো আয় ঠিক রাখতে আমানতের সুদও কমিয়ে দেয়। এখন কম সুদে আমানত সংগ্রহ করা খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে আমানত সংগ্রহ আরও কঠোরতর হয়ে পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে আমানতের সুদহার বৃদ্ধি না করলে ব্যাংকগুলো নতুন আমানত তো পাবেই না; বরং বিদ্যমান আমানতও হারাবে। তাই ক্ষেত্রবিশেষে ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ থেকে অর্জিত আয় বৃদ্ধি পায় এবং আমানতের জন্য অধিক সুদ প্রদান করতে পারে।
গাড়ি, ফ্রিজ, ইলেকট্রনিকস, কসমেটিকসের (কম্পিউটার ছাড়া) মতো বিলাসপণ্য বা এসব পণ্যের যন্ত্রাংশ বা কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ও কেনার জন্য ব্যাংকঋণের সুদ ৯ শতাংশের বেশি করা যেতে পারে। বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল (ট্রেডিং) এবং আমদানিনির্ভর (ভ্যালু এডিশন শিল্প ব্যতিরেকে) শিল্পের জন্য প্রদত্ত ঋণের সুদহার বাড়ানো যেতে পারে বলে চিঠিতে জানিয়েছে বিবিএ।
এ ছাড়াও চিঠিতে মেয়াদি আমানতের সুদ কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম হতে পারবে না- এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা অনুযায়ী আমানত সংগ্রহ করলে সিএমএসএমই ও ভোক্তাঋণে সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। এ ধরনের ঋণ কর্মসূচি ব্যাংকের আয়-ব্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা কঠিন। সিএমএসএমই ও ভোক্তাঋণের পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। কারণ, একজন গ্রাহককে এই ঋণ দেয়ার আগে এবং পরে অনেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়, যা করপোরেট গ্রুপের ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। চিঠিতে বলা হয়, সিএমএসএমই ও ভোক্তাঋণের গ্রাহকপ্রতি গড় ঋণ মাত্র ৫ লাখ টাকা। তাতে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিতে প্রায় ১ লাখ গ্রাহকের কাছে যেতে হয়। অথচ ৫০টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে ১০০ কোটি টাকা করে ঋণ দিলে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, যদি ব্যাংকগুলো ছোটদের ঋণে আগ্রহ হারায়, তাহলে এসব গ্রাহককে বিভিন্ন এনজিও বা কোণ্ডঅপারেটিভ সোসাইটি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হবে। যেখানে সুদের হার ২২-২৪ শতাংশ। আবার উদ্যোক্তাদের অনেকেই প্রয়োজনীয় ঋণের জন্য স্থানীয় মহাজন থেকে দৈনিক উচ্চহারে সুদভিত্তিক ঋণ নেবেন, যা কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়। পাশাপাশি বিএবি জানিয়েছে, ব্যাংকের সুদহার যতই বৃদ্ধি করা হোক না কেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে ব্যাংকের পক্ষে আমানত সংগ্রহ করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে থাকবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিএবি সুদহারের সীমা তুলে দেয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা পর্যালোচনা করে দেখছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।