পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অং সান সুচি। পরিবারের ৩ সদস্যের নামের পদবী নিয়ে তাঁর নামকরণ। পিতার নাম থেকে ‘অং সান’ পিতার নানীর নাম থেকে ‘সু’ এবং মা খিন ‘চি’র নাম থেকে ‘চি’র শব্দ নিয়ে হন অং সান সুচি। গৃহবন্দি থাকাবস্থায় ১৯৯১ সালে তিনি শান্তিতে পান নোবেল পুরস্কার। বলা হয় বার্মার এই নেত্রী দেশের জনগণের অধিকার আদায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভূমিকা রাখায় হন নোবেল লরিয়েট। বিশ্বের দেশে দেশে তাকে ‘শান্তির রানী’ হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশের নির্বাচনে জিতে চলতি বছরের প্রথম দিকে ক্ষমতায় আসার পর পাল্টে যায় তার আচরণ। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সুচি’র খুলে যায় ‘মুখোশ’। বিশ্ববাসীর সামনে বেরিয়ে পড়ে প্রকৃত চেহারা। মানবাধিকার নিয়ে আগে কথায় কথায় সামরিক জান্তাদের দোষারোপ করলেও এখন ক্ষমতায় তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। তিনি ক্ষমতায় অথচ রোহিঙ্গা মুসলিমরা নিজ দেশেই পরবাসী। প্রশ্ন হলো মসনদ পেয়ে কি শান্তির কথা ভুলে গেলেন সুচি? মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে ‘পোড়ামাটি নীতি’ গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ৮শ’ বাড়ি-ঘরে জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে নাফ নদীতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-শিশু ভাসছে দিনের পর দিন। বিভীষিকাময় জীবন। রাখাইনে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে অথচ মুখে কুলুপ এঁটেছেন শান্তির রানী সুচি। রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে তাঁর নীরবতা দেখে বোঝা যায় শান্তির জন্য নয়; মূলত পশ্চিমারা সুচিকে পরিকল্পিতভাবে আইকন বানিয়েছে। তিনি কার্যত পশ্চিমাদের নাচের পুতুল। শান্তির রানী সুচির মুসলিম রোহিঙ্গাদের রক্ত, নারী-শিশুর কান্না, সম্ভ্রম হারানো যুবতীদের বিলাপ, আগুনে ঝলসে যাওয়া লাশ নিয়ে মা-বাবার চিৎকার যেন ‘উপভোগ’ করছেন।
রাজনীতিক নন, সাধারণ গৃহবধূ হিসেবেই জীবন শুরু করেন সুচি। ইংল্যান্ডে লেখাপড়া করতে গিয়ে ১৯৭১ সালে ব্রিটিশ নাগরিক মাইকেল অ্যারিসকে বিয়ে করেন। বিয়ের এক বছর পরই প্রথম সন্তান আলেক্সান্ডারের জন্ম। দ্বিতীয় সন্তান কিমের জন্ম ১৯৭৭ সালে। এরই মধ্যে সুচি জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উ-থান্টের আনুকূল্যে কিছুদিন জাতিসংঘে চাকরি করেন। বার্মার অধিবাসী উ-থান্ট ছিলেন সু চির বাবার বন্ধু। ১৯৮৮ সালে মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে সুচি ছুটে আসেন মিয়ানমারে। দেশজুড়ে চলছিল তখন গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন। সেই আন্দোলনের শ্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে গঠন করেন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। রাজনৈতিক দল গঠন করেই সামরিক সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হন। ১৯৮৯ সালে হন গৃহবন্দি। পারিবারিক জীবনের সমাপ্তি ঘটে সেখানেই। এরপর প্রায় দুই দশক গৃহবন্দি ও কারাগারে কাটাতে হয়। এখন ক্ষমতায় এসে বদলে গেছেন সুচি।
ক্ষমতায় এসে সুচি যেমন বদলে যান; তেমনি তারও আগে বদলে যায় বার্মার ইতিহাস। এক সময় দেশটির নাম ছিল বার্মা। ১৯৮৯ সালে নাম বদল করে হয় মিয়ানমার। রাজধানীর নামও করা হয় পরিবর্তন। রেঙ্গুন হয়ে যায় ইয়ানগুন। বর্তমানে রাজধানী নেইপিদো। ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ’ ৭৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটির লোকসংখ্যা ৫ কোটি ৩২ লাখ। একশ’ জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত দেশটি এক সময় ভারত উপমহাদেশের অংশ ছিল। ১৯৩৬ সালে শাসন কাজের সুবিধার জন্য ইংরেজরা বার্মাকে ভারত থেকে পৃথক করে। এর আগে ১৮৮৫ সালে ইঙ্গো-বার্মা যুদ্ধে পরাজয়ের পর বার্মা ঔপনিবেশিক শাসনে চলে যায়। এই উপমহাদেশ থেকে চলে যাওয়ার সময় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ইংরেজরা দেশটিকে স্বাধীনতা দেয়। দেশটির রাজনীতিকদের কলহ-বিবাদের সুযোগে ১৯৬২ সালে জেনারেল নে-উইন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ক্ষমতায়। ১৯৯২ সালে নে উইনের স্থালভিষিক্ত হন থেইন সেইন। জেনারেল নে-উইন ১৯৯০ সালে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন দেন। সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি ভোটে জয়লাভ করে। কিন্তু নে উইন ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সুচিকে গৃহবন্দি করেন। আবার ২০১০ সালে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। সে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ইউএসডিপি বিজয়ী হয়। সুচির দল এনএলডি ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। মূলত ১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অং সান সুচি গৃহবন্দি ছিলেন। ২০১২ সালে সমঝোতার মাধ্যমে তিনি মুক্তি পান। ২০১২ সালে ৪৫টি আসনের উপ-নির্বাচনে সুচির দল প্রার্থী দিলে ৪৩টি আসনে জয়লাভ করে। সুচি নিজেও নির্বাচিত হন। অতঃপর মিয়ানমারের ওপর থেকে পশ্চিমারা অবরোধ তুলে নেয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি ২৩৮ আসন তথা শতকরা ৮০টি আসন লাভ করে।
এ অঞ্চলের মধ্যে আরাকানেই প্রথম মুসলিম বসতি স্থাপিত হয়। নাম পরিবর্তন করে বর্তমানে রাখাইন রাজ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমের বসবাস। ডাকাত সম্প্রদায় মগদের উৎপাত ছিল বহুদিন থেকেই। অতঃপর বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। এখন নতুন করে সেনাবাহিনী এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা বরাবরই মিয়ানমারের নাগরিকত্ব এবং ভোটাধিকারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তবুও নিজ দেশে পরবাসী হিসেবে তাদের দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সেনাবাহিনীর তা-বে সব হারাতে হচ্ছে তাদের। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত বিয়ে, পরিবার-পরিকল্পনা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং চলাফেরার স্বাধীনতা তথা নাগরিকদের সবকিছুতেই বৈষম্যের শিকার রোহিঙ্গারা। শরণার্থীরা ভিন দেশে যেভাবে বাস করেন রোহিঙ্গারাও নিজ দেশে সেভাবেই বসবাস করছে। যতই দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। জীবন বাঁচাতে নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে কী করবে এখন এই নিপীড়িত মুসলিম জাতিগোষ্ঠী?
বিশ্বের দেশে দেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হচ্ছে। অথচ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সুচি নীরব। বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যাযজ্ঞ ইস্যু নিয়ে গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে জাতিসংঘে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার এবং নিপীড়ন বন্ধে সুচি সরকারের অক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কাজ করছেন। কিন্তু সুচি নীরব। এতদিন পর্যন্ত মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে এক আদর্শের নাম ছিলেন গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সাং সুচি। তিনি যে দেশে ক্ষমতায় সেখানেই বর্তমানে গণতন্ত্র উধাও; মানবতা বিপর্যস্ত। মাটিতে রক্তের দাগ, বাতাসে লাশের গন্ধ। শকুন-শৃগালেরা খুবলে খুবলে খাচ্ছে মানুষের মাংস। এসব দেখে বিশ্বজুড়ে সুচির নামে নিন্দার ঝড় উঠেছে। শুধু তাই নয় সুচিকে দেয়া নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেয়ার দাবি উঠেছে। বিশ্ববাসী বুঝে গেছে অং সান সুচি গণতন্ত্রের নেত্রী নয়। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রে তার কোনো অবদানও নেই। মূলত পশ্চিমারা তাকে নিজেদের নাচের পুতুল হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি ‘পুতুল’ হওয়ায় পুরস্কার হিসেবে তথাকথিত শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। যদি তার ধমনীতে গণতন্ত্রের রক্তের ছিঁটেফোঁটা থাকতো তাহলে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন বন্ধে তিনি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অধিকার ফিরিয়ে দিতেন। রোহিঙ্গারা মুসলিম। এ জন্য পশ্চিমাদের কাছে তাদের নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার তেমন গুরুত্ব পায় না। তাই সুচি...।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।