পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাটের উন্নয়নের জন্য প্রতি বছরই পাটকল করপোরেশনকে (বিজেএমসি) শত শত কোটি টাকা দিলেও লাভের মুখ দেখছে না, উল্টো লোকসানের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। গত এক দশকে বিজেএমসিকে পাটকল চালানোর জন্য সরকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। এর ফল হিসেবে শুধু ২০১০-১১ অর্থবছরে মাত্র ১৯ কোটি টাকা লাভ করে দেখাতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া প্রতি বছর ৬৬ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনেছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন। গত অর্থবছরেও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোকসান করেছে বিজেএমসি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত শ্রমিকদের বেতন, বিজেএমজির অদক্ষতা, সঠিক সময়ে পাট না কেনা ও কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে এই খাতের ভরাডুবি হচ্ছে। এছাড়া এ খাত থেকে শুধু গতানুগতিক পণ্যই তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ। পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বৈচিত্র্য নেই বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন বলেছেন, কিছু পাটকল আবার নতুন করে চালু করার কারণে প্রথমে লোকসান দিতে হয়েছে। এছাড়া পাটকলে কোনো কারণে যদি পণ্য উৎপাদন বন্ধ থাকে তবুও সরকারি নিয়ম অনুয়ায়ী শ্রমিকদের বেতন দিতে হয়। তবে গত বছরগুলোতে লোকসান হলেও পাট নিয়ে সরকারের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের কারণে এ বছর থেকে লোকসান না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিজেএমসির পাটকলে দৈনিক ৬০০ টন পাটপণ্য উৎপাদিত হয়। আগের দুই বছরে ৪০০ টনের মতো উৎপাদন হয়েছে। ২০০ টন বাড়তি পণ্য উৎপাদন হওয়ায় লোকসান নাও হতে পারে। তবে বর্তমানে পাটকলগুলোতে ৮০০ টন উৎপাদন চাহিদা রয়েছে বলে তিনি জানান।
পাট ও পাটপণ্যের দীর্ঘদিনের দুর্দিন কাটাতে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মাইডাসকে দিয়ে এক জরিপ গবেষণা চালায়। এতে পাটের বাজার সম্প্রসারণে চ্যালেঞ্জ হিসেবে পাট চাষে বীজের সঙ্কট এবং মৌসুমের শুরুতে পাট না কেনাকে দায়ী করা হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মৌসুম শেষে পাট কেনার কারণে দর বেশি দিতে হয়। বাড়তি এ অর্থ যায় মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের পকেটে। পাটের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক।
জানা গেছে, কয়েক দশক ধরেই লোকসানে থাকা বিজেএমসি ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা লাভ করে। এর পর থেকে আবারো লোকসান শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১১-১২ অর্থবছরে ৭৯ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৮৫ কোটি এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৫২ কোটি টাকা লোকসান দেয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিজেএমসির লোকসানের অঙ্ক ৬৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে; যা আগের যেকোনো বছরের তুলনায় লোকসানের রেকর্ড।
এদিকে ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পাঁচটি বন্ধ পাটকল চালু এবং ৩৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে এখন বিপদে রয়েছে সরকারি পাটকলগুলোর পরিচালন সংস্থা বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। তাদের ২২ হাজার শ্রমিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত। তাদের পেছনে বছরে ব্যয় হচ্ছে আড়াইশ’ কোটি টাকা। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতি মণ মোটা ও পাতলা পাটের বস্তা, সুতা কিংবা ব্যাগ উৎপাদনে গড়ে খরচ পড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ একই ধরনের পণ্য উৎপাদনে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) খরচ হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, সংস্থাটির ২৬টি প্রতিষ্ঠানে এখন ৮০ হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছেন। অথচ বেসরকারি খাতে এ ধরনের মিলগুলো চালাতে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে ২৬টি মিলে বিজেএমসির প্রতি বছর গড়ে উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ৮৭ হাজার টন পণ্য। বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পাটকল অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) সূত্রে জানা গেছে, বিজেএমএ ১৩১টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতি বছর গড়ে দুই লাখ টন পণ্য উৎপাদন করছে। আর এ পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে মাত্র ৫২ হাজার শ্রমিক। ফলে লোকসান থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
বেশি খরচ পড়া কারণ হিসেবে দেখা দেছে, কাঁচা পাট ক্রয়ে অদক্ষতা, উৎপাদনে সিস্টেম লস, বেশি খরচে পুরনো মেশিন পরিচালনা, কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি এবং বিপণন অদক্ষতায় ক্ষতি মিলে টনপ্রতি সার্বিক খরচ ছাড়াচ্ছে ৫ হাজার টাকা। প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময় থেকে একই ধরনের চটের বস্তা আর সুতা তৈরি করে চলেছে বিজেএমসি। পুরনো ডিজাইনের এসব পণ্যের চাহিদা না থাকায় বিক্রি হয় না। গুদামেই পড়ে থাকে। গুদামে পণ্য জমে থাকায় অনেক সময় দৈনিক উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়। বেসরকারি পাটকলগুলোর অধিকাংশই পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার, নিত্যনতুন বিপণন কৌশল, ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটিয়ে শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। তবে সরকারি পাটকলে পণ্যে বহুমুখীকরণ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক নাসিমা বেগম বলেছেন, এখন পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে ১৩৫ জিনিস তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন নতুন জিনিস তৈরির পরিকল্পনা চলছে। এর ফলে দেশের বাজারে এই পণ্যের চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের কদর বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
এছাড়া পাটের বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে চীন। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে পাটের বস্ত্র, বিভিন্ন প্রকার সুতা তৈরি করা হবে। এসব বস্ত্র দিয়ে তৈরি সামগ্রী বিদেশে রফতানির এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। পাশাপাশি পাটের সুদিন ফেরাতে পাট আইন করার পাশাপাশি পাটনীতি সংশোধন করারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া সর্বশেষ পাট ও পাটজাত পণ্যের উন্নয়নের জন্য সরকার এ খাতকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করলেই হবে না। অতিরিক্ত শ্রমিক কমাতে হবে। পাটের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। পাটকলগুলোকে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে যেতে হবে। তাহলেই পাটের দেশী-বিদেশী বাজার কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব হবে। এর ফলে লোকসান কমে আসবে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরনের পাটপণ্য তৈরি হচ্ছে। চাল, চিনি, গম, ধান, ভুট্টা ও সারের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ‘প্যাকেজিং অ্যাক্ট’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশেই ২০ লাখ কাঁচা পাটের অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করা হয়েছে।
পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোছলেহ উদ্দিন বলেন, পাটের উন্নয়নের জন্য সরকার এটাকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমাদের অধিদপ্তর পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহয়তা প্রদান করছে। এছাড়া বাংলাদেশ পাটপণ্যের ব্যবহারও বাড়ছে। সব মিলিয়ে আগামীতে আবার পাট ও পাটজাত পণ্যের সোনালি দিন আসবে বলে তিনি মনে করেন।
সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, আমরা দেশের পাট খাতকে লাভজনক করতে ১০ বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছি। পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন বা বিএমআরআই করা ও পাটকলগুলোর অব্যবহৃত জমি বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পাটকলগুলোর সঙ্কট আর থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।