পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নামাজের সময় ছাড়া এসি বন্ধ রাখার নির্দেশনা : কোনো মসজিদেই সারাক্ষণ এসি চালুর রাখার নজির নেই : সরকারি আমলাদের উচিত আগে নিজেরা বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে কৃচ্ছ্রতাসাধনের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা
রাশিয়া-ইউক্রেট যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে চলছে জ্বালানি ও গ্যাসের সঙ্কট। এই গ্যাস সঙ্কটের কারণে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় সরকার কৃচ্ছ্রতাসাধণের পথ ধরেছে। ইতোমধ্যেই দিনে বিদ্যুতের এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করছে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে মসজিদগুলোতে নামাজের সময় ছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের এসি বিলাস কমেনি। অনুসন্ধান করে দেখা যায় বিভিন্ন সরকারি অফিসে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক সংখ্যক এসি ব্যবহৃত হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, কর্পোরেশন, শাখা অফিসগুলোতে অসংখ্য এসি ব্যবহৃত হচ্ছে; অথচ ঠিকমতো বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে না।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, মাঠ প্রশাসন, অধিদপ্তর, দপ্তর এবং পরিদপ্তরের কর্মরত কর্মচারীরা অফিস আসবাব, অফিস সরঞ্জামের প্রাপ্যতা প্রাধিকার মানছে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী একজন সচিব ও অতিরিক্ত সচিব প্রয়োজন অনুযায়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) পাবেন, যুগ্ম সচিব, উপসচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব একটি করে এসি ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু এই প্রবিধান মানা হচ্ছে না। আবার সরকারি ১৩টি ভবনে সেন্ট্রাল এসি বা কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো হয়েছে। এসব ভবনে একজন অফিস করলেও শত শত টনের এসি চলে। ১৩ ভবনের ৬টিতে মোট ৯ হাজার ২০০ টন এসি ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু সারাদেশের মসজিদগুলোতে তেমন এসি ব্যবহার হচ্ছে না। তারপরও ঘোষণা করা হয়েছে নামাজের সময় ছাড়া এসি বন্ধ রাখতে হবে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকার নানা নির্দেশনা দিয়েছে। এ নির্দেশনা যেন কেবল কাগুজে না হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের (আমলা) উচিত হবে নিজেরা সর্বপ্রথম বাস্তবায়ন করে সাধারণ মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হওয়া। সরকারি কর্মকর্তাদের উচিত তাদের এসির ব্যবহার কমিয়ে ব্যবহার করা।
পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি অফিস-আদালত নির্মাণের ক্ষেত্রে আবদ্ধ ভবন নির্মাণ না করে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশ করে এমন পরিকল্পনা করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারের টিম গঠন করতে হবে, যারা নির্দেশনা মানার বিষয়টি তদারকির জন্য সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং জরিমানাসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১২ তলার পানি ভবনের জন্য প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে বছরে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ কোটি টাকার মতো। বিপুল টাকার বিদ্যুৎ বিল খরচ করে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার এমন আয়োজন সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সংস্থায় আর নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারিভাবে দেশের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ টন ক্ষমতার এসির ব্যবস্থা থাকলেও ব্যবহার হয় ৮০০ টন। এদিকে রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় শহর-জেলা ও উপজেলা শহরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরকারি প্রাপ্যতার প্রাধিকার মানছে না। অনেক ডিসি-ইউএনও এবং সহকারী কমিশনার একটি এসি চেয়ার দুই থেকে তিনটি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সিলেট ডিসি অফিস, ঢাকা ডিসি অফিস, রাজশাহী ডিসি অফিস চট্টগ্রাম ডিসি অফিস এবং রংপুর ডিসি অফিস সরকারি প্রাপ্যতার প্রাধিকার মানছে না। অথচ বর্তমান সরকার ২০২০ সালে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রাপ্যতার প্রাধিকার পরিপত্র জারি করেছে।
এদিকে সচিবালয়ে দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম) মো. মহিবুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সচিবালয়ে ৯টি ভবনে ৪০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ চার হাজার টন ক্ষমতার এসি ব্যবহার করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছেÑ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
নির্বাচন কমিশন ভবনে ২ হাজার ৭০০ টন এসি ব্যবহার হচ্ছে, পান্থপথের পানি ভবনে ২ হাজার ৪০০ টন, সচিবালয়ের ভেতরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভবনে ১ হাজার ৫০০ টন, রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় জাতীয় রাজস্ব ভবনে ২ হাজার ৫০০ টন, পুলিশ সদর দপ্তরে (এনেক্স ভবন) ১ হাজার ২০০ টন, বিজ্ঞান জাদুঘরে ১ হাজার টন, জাতীয় আর্কাইভ ভবনে ৬০০ টন এসি ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া পর্যটন ভবন, বিডা ভবন, আইসিটি ভবন, জাতীয় সংসদ, বিটিআরসি ভবন, সিপিটিউ ভবনে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র রয়েছে। এসব ভবনের বেশিরভাগে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিলার এয়ারকুলার বা ওয়াটার কুলার রয়েছে। চিলার কুলার বসাতে হলে কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৫০ টন দিয়ে শুরু করতে হয়। দু-একটিতে আছে ভিআরএফ সিস্টেম। এ পদ্ধতির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কমপক্ষে ১৮ টন দিয়ে শুরু করতে হয়। তবে এসি যন্ত্র বসানো ও বিদ্যুৎ বিল তৈরি করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউ এ বিষয়ে কথা করতে রাজি হননি।
প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে ৪০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য রয়েছে মোট চার হাজার টন ক্ষমতার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। অর্থ ভবনেই রয়েছে দেড় হাজার টন যন্ত্র। এপ্রিল মাসে শুধু অর্থ ভবনেই ১ দশমিক ৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়েছে। গত ২ বছর আগে সচিবালয়ে ২০ তলা একটি ভবনে অর্থ মন্ত্রণালয় কার্যক্রম শুরু করে। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ ভবনে মোট ১ হাজার ৫০০ টন এসি বসানো হয়েছে। চিলার এয়ারকুলার ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের জন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। এ ভবনের জন্য চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই বিদ্যুৎ বিল বাবদ ২৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। সারা বছরের গড় করে এ ভবনের জন্য মাসে ১৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে। সরকারি দপ্তরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসি ব্যবহার করা হয়েছে আগারগাঁও এলাকার জাতীয় রাজস্ব (এনবিআর) ভবনে। সেখানে ২ হাজার ৫০০ টন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসি ব্যবহার করা হয়েছে। এর সঙ্গেই রয়েছে সরকারি অনেক ভবন। সব রেকর্ড ভেঙে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সদর দপ্তর পানি ভবন-এ বসানো হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টন ক্ষমতার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। এটি দেশের প্রথম সেন্ট্রাল এসি সরকারি অফিস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১২ তলার পানি ভবনের জন্য প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ কোটি টাকার মতো। এরপরই রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের (এনেক্স ভবন) অবস্থান। এ ভবনের জন্য বসানো হয়েছে ১ হাজার ২০০ টন এসি। এসব ভবন ছাড়াও সরকারিভাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ টন ক্ষমতার এসির ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও বর্তমানে ব্যবহার করা হয় ৮০০ টন এসি। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ব্যবহার হয় ২৫০ টন আর সরকার নিয়ন্ত্রিত দেশের পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রয়েছে ৯২০ টন এসি। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এমন কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র ব্যবহারকে অনেকে বিলাসিতা বলে মনে করছেন। বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ভবনে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আয়োজন বাস্তবতা-বিবর্জিত। শহরের উঁচু এসব ভবনে সাত-আট তলার ওপরে স্বাভাবিকভাবেই এমন পরিমাণ বাতাস থাকে যাতে অনেক সময় ফ্যান প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের ভবনেও কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো হয়েছে। এছাড়া ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে।
পানি ভবনের এক প্রকৌশলী বলেন, সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, সরকারি অফিস-আদালত নির্মাণের ক্ষেত্রে আবদ্ধ ভবন নির্মাণ না করে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশ করে এমন পরিকল্পনা করতে। কিন্তু আমাদের পাউবোর ভবনসহ অনেক অফিসেই সেন্ট্রাল এসি। ফলে এসব ভবনে যে ক’জনই অফিস করুক না কেন, এসি চলবে সব তলায়। সিঁড়ি, লবি ও লিফটের অংশেও এসি ব্যবহার হয়।
একাধিক প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, অফিসে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের জন্য সিলিং ফ্যান টানানো যায় না। সৌন্দর্য রক্ষার জন্য সেখানে বাধ্য হয়ে এসি বসাতে হয়। শহরের সরকারি ভবনগুলোতে যদি এভাবে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো না হতো তাহলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতো। এসব ভবনে এসির জন্য যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় তা দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সদর দপ্তরেও ৮০০ টনের ওপরে এসি ব্যবহার করা হয়। তবে পানি ভবনের এমন এসির ব্যবহারকে বিলাসী হিসেবে দেখছেন সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, সরকারের কোনো সংস্থার বিদ্যুতের এমন যথেচ্ছ ব্যবহার মেনে নেয়া যায় না।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত ‘আধুনিক পানি ভবন’ ২০২০ সালের ১ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়। ২৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ের এ ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি। পানি ভবনের দৈর্ঘ্য ২৭৬ ফুট ও প্রস্থ ১২৭ ফুট। অডিটোরিয়াম দৈর্ঘ্যে ১০০ ফুট ও প্রস্থ ৫১ ফুট। এর মোট আয়তন ৫ হাজার ১০০ বর্গফুট। অডিটোরিয়ামের উচ্চতা ২১ ফুট এবং ধারণক্ষমতা ৫৩৬ জন। ভবনের বেজমেন্ট এবং সেমি-বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিং ক্ষমতা ১৭৬টি। ভবনের বাইরে খোলা জায়গায় গাড়ি পার্কিং ক্ষমতা ২০০টি। ভবনে কমন টয়লেটের সংখ্যা ৪৮টি। এছাড়া কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত টয়লেট সংখ্যা ৭০টি। ভবনটিতে রয়েছে আটটি লিফট।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্যুৎ বিষয়ক বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রাথমিকভাবে এক ঘণ্টা করে আগামীকাল থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং হবে। এরই অংশ হিসেবে উপাসনালয়ে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার নামাজের সময়সূচি ছাড়া অন্য সময়ে এসি বন্ধ রাখতে হবে। এর আগে সকালে জ্বালানি তেলের লোকসান কমাতে আজ মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে শিডিউল অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হবে। নসরুল হামিদ বলেন, ঘাটতির কারণে এলাকাভিত্তিক বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এখন নিজস্ব গ্যাস ও আমদানি করা যতটুকু পর্যন্ত গ্যাস আনা যাচ্ছে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। কারখানায় গ্যাসের কিছুটা দিতে হচ্ছে। এ জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার নেয়া হচ্ছে। এখন জ্বালানি স্বল্পতার কারণে সন্ধ্যায় ১০০০ থেকে ১৩০০ মেগাওয়াট ঘাটতি হচ্ছে। ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে গড়ে উৎপাদন ১৩ হাজার ৭০ মেগাওয়াট। পেট্রোবাংলার হিসাবে, একশ’ কোটি ঘনফুট এলএনজি আনার কথা থাকলেও আসছে ৫০ কোটিরও কম।
বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের (বিসিআই) সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. নাজমুস সাদাত সেলিম ইনকিলাবকে বলেন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সব মিলিয়ে ৯২০ টন ক্ষমতার এসির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় শীতাতপ ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে সার্বক্ষণিক রান্নার চুলা চালু থাকার কারণে এসির ব্যবহার বেশি হচ্ছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা জোন) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তর সরকারি ভবন বা স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকে তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৮০০ টন ক্ষমতার এসি ব্যবহার হয়। আর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২৫০ টন ক্ষমতার বেশি এসি ব্যবহার হয় না। তবে সরকারি বাসাবাড়ীগুলোর কথা বলা যাচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।