পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে আমদানি ব্যয়। এতে প্রতিনিয়তই কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত বছরের এ সময়ে দেশের যে রিজার্ভ ছিল, তা দিয়ে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে (৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) এসেছে। এ রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এরই মধ্যে রিজার্ভ ধরে রাখতে নানামুখী সংস্কার এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর পাশাপাশি রফতানিকারকের রিটেনশন বা প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমা করা বিদেশি মুদ্রার ৫০ শতাংশ নগদায়ন করা। এদিকে ঈদের পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সপ্রবাহে বেশ ভালো গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ১০ জুলাই রোববার দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঢল নেমেছিল। ঈদের ছুটির আগে সাত দিনেই ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ছুটির পর তিন দিনে (১২ থেকে ১৪ জুলাই) পাঠিয়েছেন ৩৩ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ১৪ দিনে (১ থেকে ১৪ জুলাই) ১২৪ কোটি (১ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে ১৪ দিনের এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১১ হাজার ৬৫০কোটি টাকা। গড় হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৮৩১ কোটি টাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। যদিও ডলারের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। পতন হচ্ছে টাকার মান। কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের দাম আবারও ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল বাজার থেকে এক ডলার কিনতে ১০০ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১০০ টাকা ৪০ পয়সা দিতে হয়েছে। এর আগে গত ১৭ মে খোলা বাজারে ডলারের দাম ১০২ টাকায় উঠেছিল। ব্যাংকগুলোতেও নগদ ডলার ৯৭ টাকা থেকে ৯৮ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানিরে ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়ার সুযোগ আছে। রফতানির সঙ্গে রেমিট্যান্সকেও বাড়াতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনীয় পণ্য না হলে আমদানি বন্ধ করতে হবে। এসব না করতে পারলে পরিস্থিতি আরও (ক্রিটিক্যাল) খারাপের দিকে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এখনো ভালো অবস্থায় রয়েছে রিজার্ভ। বেশকিছু পদক্ষেপের কারণে রিজার্ভ ভালো অবস্থানে যাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিলাসবহুল এবং অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে সরকার একটা পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপরও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও রেমিট্যান্স কমে আসায় ডলারের এ সংকট। এতে রফতানি আয় বাড়লেও ডলারের সংকট কাটছে না। এতে রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এসব কারণে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে ডলারের জোগান বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ‘ব্যাংকগুলো তাদের আমদানির খরচ মেটাতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে ঋণ নিতে পারবে। আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। রপ্তানিকারকের রিটেনশন বা প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমা করা বিদেশি মুদ্রার ৫০ শতাংশ নগদায়ন করতে হবে।’
কাগজে-কলমে রিজার্ভ এখন প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এ হিসাব নিয়ে আছে বিতর্ক। বলা হচ্ছে— প্রকৃত রিজার্ভের অংক ৩২ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভের অংক নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আইএমএফ যুক্তি হচ্ছে-বর্তমানে রিজার্ভের অর্থে রফতানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) ৭০০ কোটি, জিটিএফে ২০ কোটি, এলটিএফএফে ৩ কোটি ৮৫ লাখ এবং সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষকে ৬৪ কোটি ডলার ও বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে। এ ৭৯২ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের বাইরে কারেন্সি সোয়াপের আওতায় শ্রীলঙ্কাকে দেয়া হয়েছে ২০ কোটি ডলার। এটা রিজার্ভ থেকে বাদ দিলে প্রকৃত রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।
অন্যদিকে, প্রতিনিয়ত রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ। এক বছর আগে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড অবস্থায় ছিল। কিন্তু এখন সেই অবস্থানে নেই। গত বছরের এ সময়ে যে রিজার্ভ ছিল তা দিয়ে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা তৈরি হলেও বর্তমান সময়ে তা কমে হয়েছে চার মাসের। মূলত আমদানি ব্যয় মেটাতেই শেষ হচ্ছে রিজার্ভ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সতর্ক না হলে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (এসিইউ) আমদানির অর্থ পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে গেছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যায় এমন রিজার্ভ থাকলে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। যদিও সেখানে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। আমাদের কয়েক মাস পরে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (এসিইউ) আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে হবে, সেখানে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের মতো চলে যাবে। একটা ক্রিটিক্যাল অবস্থা তৈরি হতে পারে। কাজেই এখন চেষ্টা করতে হবে রপ্তানি বাড়ানো আমদানি ব্যয় কমোনার। বিশেষ প্রয়োজনীয় না সেব পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে। বেশ কিছু দিন ধরে রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রেমিট্যান্সকে আমরা গুরুত্ব মনেকরি, কারণ এ টাকাটা আমাদের রিজার্ভ এ যোগ হয়। রেমিট্যান্সটাকে বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
ডলারের সঙ্কট মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়ছে ডলারের, এর বিপরীতে দুর্বল হচ্ছে টাকা। রিজার্ভ ধরে রাখতে তাই নানামুখী সংস্কার এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে রিজার্ভ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়নি এমনটাই বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ দিয়ে তিন মাস পর্যন্ত আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হলে, তখন পর্যন্ত শঙ্কা থাকে না। আমাদের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে নানা পদক্ষে নিয়েছে। ডলারের বাজার স্বাভাবিক রাখতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি আরও কঠোর করা হয়েছে। এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংকগুলোকে আমদানিকারকদের কাছ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম অর্থ নিতে পারবে। ব্যাংকগুলো এখন তাদের আমদানির খরচ মেটাতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে ঋণ নিতে পারবে। আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে এবং রপ্তানিকারকের রিটেনশন বা প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমা করা বিদেশি মুদ্রার ৫০ শতাংশ অনতিবিলম্বে নগদায়ন করতে হবে।
এদিকে বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের দরের চেয়েও বেশি দামে রেমিট্যান্স দেশে আনছে। কোনো কোনো ব্যাংক ৯৬/৯৭ টাকায় প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স দেশে আনছে। এ হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১৪ দিনে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বেশি হবে।
রেমিট্যান্সপ্রবাহে নিম্নমুখী ধারায় শেষ হয় ২০২১-২২ অর্থবছর। ৩০ জুন শেষ হওয়া এই অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুসহ প্রয়োজনীয় অন্য কেনাকাটা করতে অন্যবারের মতো এবারও পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সে কারণেই রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রফতানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে, ঈদের পরও রেমিট্যান্সের গতি বেশ ভালো। সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রণোদনা বেড়েছে। ডলারের দামও বেশি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হওয়ায় ওই দেশগুলো থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী দিনগুলোয় রেমিট্যান্স বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরজুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছর। এই অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।