পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নত দেশে প্রবাস জীবনে অভ্যস্ত বাংলাদেশিরা দেশের বিমানবন্দরে পা রেখেই শিকার হচ্ছেন হেনস্তার। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার, বিভিন্ন ছুতোয় হয়রানি যেন নিত্যদিনের ঘটনা। কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখলেও এয়ারপোর্টে তাদের জন্য নেই ন্যূনতম মর্যাদা ও সম্মান। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ আরও দু’টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের শিকার হতে হয় বহুমাত্রিক হয়রানির। কাস্টমস, ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রতারকচক্র ও দালাল-দৌরাত্ম্য। প্রবাসীর লাগেজ খুলে হাতিয়ে নিচ্ছেন মূল্যবান জিনিসপত্র। এয়ারপোর্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিযুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বকশিশ দাবি করেন। হয়রানি থেকে বাঁচতে অনেক প্রবাসীকে রিয়াল, ডলার বা পাউণ্ড দিতে হয়। পদে পদে হয়রানির পর প্রবাসীদর শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট ডেস্কে অভিযোগ জানালেও মেলে না কোনো প্রতিকার।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ মিলিয়ে ৭৫-৮০টি বিমান ওঠা-নামা করে। এসব বিমানে যাতায়াত করেন দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার যাত্রী। দেশি যাত্রীদের মধ্যে ৯৫ ভাগই প্রবাসী বাংলাদেশি। তাদের রিসিভ এবং সি-অফ করতে এয়ারপোর্টে ভিড় জমান ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ। তাদের ঘিরেই চলে হয়রানি ও প্রতারণা বাণিজ্য।
‘সেবা’র নামে প্রবাসী হয়রানি : অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘কমন’ অন্তত ১২টি পর্যায়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হতে হয় প্রবাসীদের। ছুটি কাটিয়ে দেশত্যাগ করার সময় বিমানবন্দরের প্রবেশে মোড়েই শুরু হয় যাত্রী হয়রানি। ‘যাত্রী সেবা’য় নিয়োজিত পুলিশ, আনসার, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এমনকি ক্লিনার দ্বারাও হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রবাসীরা ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস সার্ভিস নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত। স্ক্যানার হয়ে লাগেজ বের হয়ে আসার পরও হাজারও কৈফিয়ৎ দিতে হয় ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের। অনেক সময় তাদের ‘সন্তুষ্ট’ করে ছুটতে হয়। ইমিগ্রেশন বিভাগে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা প্রবাসী কর্মজীবীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। সম্মান প্রদর্শনের পরিবর্তে কথা বলেন তুই-তোকারি করে। প্রবাসী শ্রমিকের পেটে কলমের গুঁতো, ইয়ার্কির ছলে দুই হাতে গলা চেপে ধরা, পশ্চাদদেশে লাথি মারার ঘটনাও ঘটছে। অপমানজনক ব্যবহারে অসহায় প্রবাসীরা দুঃখে কান্নাকাটি করেন। বিমানবন্দরের ফ্লোরে গড়াগড়িও দেন। অনেকে জীবনে দেশে না ফেরার শপথ পর্যন্ত করেন।
মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী জুলফিকার হোসেন নিজ অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিয়ে বলেন, বিমানবন্দরের টার্মিনালের বাইরে আমার ছোট ভাই ও পরিবারের স্বজনরা আসছেন আমাকে নিতে। এখানকার কয়েজন আনসার সদস্যের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা আমার ছোট ভাইয়ের গায়ে হাত তোলে। টার্মিনাল থেকে বেরুনোর সময় জেঁকে ধরে দালালচক্র-ট্যাক্সি লাগবে ট্যাক্সি? লাগেজ নিয়ে টানা-হেঁচড়া শুরু হয়। অগত্যা কোনো ট্যাক্সিতে উঠলেও ৫০০ টাকার ভাড়া চায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা। যারা এয়ারপোর্টভিত্তিক জীবিকা নির্বাহ করে তারা মনে করে বিদেশ থেকে আমরা কোটি কোটি টাকা নিয়ে আসি। পদে পদে টাকা দাবি করে।
বিমানবন্দরে আমর্ড পুলিশের দায়িত্ব বহির্গমন, পার্কিং লট, ক্যানোপি, কনকর্স হল, আগমনী কনভেয়ার বেল্ট, টারমাক, রানওয়ে, ড্রাইভওয়ে ও অ্যাপ্রোন এলাকায় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকা। তবে তারা অধিকাংশ সময়ই ব্যস্ত থাকেন আগমনী আর কার পার্কিং এলাকায় যাত্রীদের মালামাল তল্লাশির কাজে। বিদেশ থেকে আসা অনেক যাত্রী বিমানবন্দরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে গাড়িতে ওঠার পরই এই আর্মড পুলিশের তল্লাশির মুখোমুখি হন। টানাহেঁচড়া করে আবার বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এপিবিএন পুলিশ ও সিভিল টিম সদস্যরা শাহজালালে বহির্গমন যাত্রীদের ভিসা, পাসপোর্ট, টিকিট চেকিংয়ের নামে প্রবাসীদের হয়রানি করেনÑ মর্মে অভিযোগ রয়েছে।
তবে এসব বিষয় ইতিপূর্বে সংঘটিত মর্মান্তিক ঘটনারই ধারাহিকতা বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। ‘হিউম্যান রাইটস আন্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ ইউ.কে. শাখার প্রেসিডেন্ট মো: রহমত আলী বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্মীরা প্রবাসীদের নিছক পণ্য মনে করেন। তাদের হয়রানি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। প্রতিবাদ করতে গেলে নির্যাতনের খড়্গ নেমে আসে। সম্প্রতি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে ফ্রান্স প্রবাসী তারেক আহমদ এবং আফসানা আক্তার মীম, ইতালি প্রবাসী আফজাল হোসেন, শেফালী বেগম, স্পেন প্রবাসী রুনা আক্তার, পর্তুগাল প্রবাসী আয়েশা আক্তার এবং সিদ্দিকুর রহমান জানান, এয়ারপোর্ট কর্মকর্তাদের কাছে কোনো অভিযোগের প্রতিকার চাইতে গেলে উল্টো ভুক্তভোগীকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। হাত তোলা হয় প্রবাসীর গায়েও। এমন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়।
বিমানবন্দর কর্মীদের হয়রানি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় প্রবাসী ছুরত মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মুগল মিয়াকে করা হয় অপহরণ। ব্যারিস্টার রেজওয়ানকে নির্যাতন করে রক্তাক্ত করা হয়। এরকম ছোট-বড় অসংখ্য ঘটনা রয়েছে বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে। কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।
হয়রানির আরেক নাম ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ : ইমিগ্রেশনে থাকে লম্বা লাইন। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় লাগেজের জন্য। সংঘবদ্ধচক্র অনেক সময় লাগেজ গায়েব করে ফেলে। কখনওবা লাগেজ কেটে ভেতরের মূল্যবান মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়। অনেক সময় যাত্রীদের লাগেজ আসেনি বলে জানানো হয়। জানানো হয়, পরবর্তী ফ্লাইটে আসবে। পরবর্তী ফ্লাইটে লাগেজ এলেও লাগেজ প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছানো হয় না। ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ডিপার্টমেন্ট’ যেন প্রবাসীদের আরেক হয়রানির জায়গা। সাধারণত : কোনো লাগেজের মালিক পাওয়া না গেলে সেটি কাস্টমস গোডাউনে জমা রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মালামাল হারানো যাত্রীরা আবেদন করে মালামাল ফেরত পান। তবে মালামাল একেবারেই না পাওয়া গেলে সেটি জানানোরও প্রয়োজন বোধ করেন না লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগ। অনেক সময় নিজেদের লোককে সংশ্লিষ্ট যাত্রী সাজিয়ে মালামাল তুলে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে ।
ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিড়ম্বনা : বহু ক্লায়ক্লেশে নিজ ভূমিতে ফিরলেও প্রবাসীরা দেশে অবস্থানকালে মুখোমুখি হন আরও কিছু বিড়ম্বনার। এর একটি হচ্ছে ভূমি জরিপ এবং জমি রেজিস্ট্রি। প্রবাসীরা দীর্ঘ পর দেশে ফিরলেও হাতে নিয়ে ফেরেন কিছু কাজ। এর একটি হচ্ছে সহায়-সম্পত্তির খোঁজ-খবর নেয়া। কোনো জমি বিক্রির প্রয়োজন হলে রেকর্ডপত্র তল্লাশি দিতে যেতে হয় স্থানীয় ভূমি অফিসে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রবাসীর ক্রয়কৃত জমির নামজারি হয়ে আছে অন্যের নামে। এটি মিস কেসের মাধ্যমে অন্য নাম কেটে নিজের নামে আনতে লেগে যায় দীর্ঘ সময়। তারিখের পর তারিখ পড়ে। ২৮ দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করার কথা থাকলেও লেগে যায় কয়েক মাস। ততোদিনে প্রবাসীদের ভিসা ও টিকিটের মেয়াদ শেষ শেষ হওয়ার উপক্রম হয়। অনেকে কাজ শেষ না করেই ফিরে যান কর্মক্ষেত্রে। জমি বিক্রি আর সম্ভব হয় না।
জমি-জমার বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। অনেক প্রবাসীরই এই সম্পর্কে ধারণা নেই। এটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে স্থানীয় টাউট এবং ভূমিদস্যুরা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রবাসীর জমি। প্রতিটি এসি (ল্যান্ড) অফিস, তহসিল অফিস এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রয়েছে সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। তাদের হাতে অনেক প্রবাসী নিঃস্ব হওয়ার নজির রয়েছে।
ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারদের দুর্নীতি, অদক্ষতা, সেচ্ছাচারিতামূলক মনগড়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসিল্যান্ড নামজারি করেন। এ কারণে জমিজমা রক্ষণাবেক্ষণে জটিলতায় পড়েন প্রবাসীরা।
প্রবাসীদের ভূসম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমমোক্তারনামা বা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’। প্রতারকচক্র ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি তৈরি করে প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। প্রবাসে অবস্থানকালে ওই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়ার বিধান। কিন্তু এভাবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়া হলেও দেশে সেটি কার্যকর হচ্ছে না। টাউট শ্রেণির মানুষ ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সৃজন করে নিজ নিজ স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ভুয়া কি-না এটি যাচাই করে না এসিল্যান্ড, ভূমি এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। ঘুষের বিনিময়ে ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ভিত্তিতেই তারা জমির ক্রয়-বিক্রয় নিবন্ধন করছে। করোনাকালিন দুই বছরে দেশে অন্তত : ৬ শতাধিক ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ভুক্তভোগী হন প্রবাসীরা। এ বিষয়ে দ্রুত প্রতিকার লাভের কোনো জায়গা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।