পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বিশ্ববাজারে গত এক সপ্তাহে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও দামি এই ধাতুটির দাম কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। গতকাল বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদের আগে দেশের বাজারে এক দফা স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আরও কমেছে। অপরদিকে টাকার বিপরীতে ডলার ও দিরহামের দাম বেড়েছে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করবে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক মাসের বেশি সময় ধরেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নিম্নমুখী। এতে ১৫ মাসের মধ্যে স্বর্ণের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। স্বর্ণের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে রুপা ও প্লাটিনামের দামেও বড় পতন হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম কমেছে ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। রুপার দাম কমেছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া প্লাটিনামের দাম কমেছে ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ। এক মাস আগে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৮৫৬ দশমিক ৬১ ডলার। সেখান থেকে কমতে কমতে এখন তা এক হাজার ৭০৬ দশমিক ৭৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এক মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম কমেছে ১৪৯ দশমিক ৮৩ ডলার। এর মধ্যে গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে ৩৫ ডলার বা ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
স্বর্ণের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে রুপা ও প্লাটিনামের দাম। সবশেষ সপ্তাহে প্রতি আউন্স রুপার দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৬১ ডলার বা ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স রুপার দাম দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৬৯ ডলারে। এছাড়াও প্লাটিনামের দাম গত সপ্তাহে কমেছে ৪৬ দশমিক ৪৬ ডলার বা ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৫০ দশমিক ৫০ ডলারে।
বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রেক্ষিতে সর্বশেষ ঈদুল আজহার তিনদিন আগে ৭ জুলাই দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়। সে সময় সবচেয়ে ভাল মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ৭৮ হাজার ৩৮২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৫০ টাকা কমিয়ে ৭৪ হাজার ৮৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৬৪ হাজার ১৫২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫৯ টাকা কমিয়ে ৫৩ হাজার ৪৭৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে দেশের বাজারে এই দামেই স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হবে কি না জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। তবে এটাও দেখতে হবে স্বর্ণের দাম কমলেও টাকার বিপরীতে ডলার ও দিরহামের দাম বেড়েছে। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এসব বিষয় আমাদের বিবেচনায় নিতে হয়। গতকাল বিকেলে মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। ওই বৈঠকের মাধ্যমে আমরা স্বর্ণের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। হুট করে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান, এরপর আবার বড় দরপতনের ঘটনা ঘটছে গত কয়েক মাস ধরেই। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হু হু করে বেড়েছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু পর প্রথম সপ্তাহেই বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম চার দশমকি ৩৭ শতাংশ বা ৮২ দশমিক ৪৮ ডলার বেড়ে যায়। এতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম এক হাজার ৯৭০ দশমিক শূন্য ৭ ডলারে উঠে যায়। যার প্রেক্ষিতে ৩ মার্চ বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। সে সময় সবচেয়ে ভাল মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ২৬৫ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া সেসময় ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৯১ টাকা বাড়িয়ে ৭৪ হাজার ৭৬৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৪ হাজার ১৫২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ২১৬ টাকা বাড়িয়ে ৫৩ হাজার ৪২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
তবে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পর এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। ফলে ৯ মার্চ দেশের বাজারে আবার বাড়ানো হয় স্বর্ণের দাম। এ দফায় ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার ৬৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৮১৬ টাকা বাড়িয়ে ৬৪ হাজার ৯৬৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬৪২ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৫৪ হাজার ৬২ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে টানা দরপতনের মধ্যে পড়ে স্বর্ণ। ফলে ১৬ মার্চ এবং ২২ মার্চ দুই দফায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়। এর মধ্যে ২২ মার্চ সবচেয়ে ভাল মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৫০ টাকা কমিয়ে ৭৭ হাজার ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৫০ টাকা কমিয়ে ৭৩ হাজার ৬০০ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৬৩ হাজার ১০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৪৫৮ টাকা কমিয়ে ৫২ হাজার ৬০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর রোজা শুরু হলে দেশের বাজারে ঈদকেন্দ্রিক স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি কিছুটা বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে দামেও। বিশ্ববাজারে খুব একটা দাম না বাড়লেও দেশে ১২ এপ্রিল সবচেয়ে ভাল মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার ৩৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৪৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৬৪ হাজার ৫৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ধাপে সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ২২৪ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৫৩ হাজার ৮২৯ টাকা।
তবে বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা দিলে ২৬ এপ্রিল আবার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়। সে সময় সবচেয়ে ভাল মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৯১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫৮ টাকা কমানো হয়।
ঈদের পর এক সপ্তাহ না যেতেই ১১ মে আরেক দফা স্বর্ণের দাম কমানো হয়। সে সময় ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে করা হয় ৭৬ হাজার ৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ৭৩ হাজার ১৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৬২ হাজার ৬৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৮৭৬ টাকা কমিয়ে ৫২ হাজার ১৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এরপর ২২ মে আবার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম চার হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৮২ হাজার ৪৬৫ টাকা। আর ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম চার হাজার ২৪ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৭৩২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৭ হাজার ৫৩৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়াও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৮৫৭ টাকা বাড়িয়ে ৫৬ হাজার ২২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওই দাম বাড়ানোর চারদিনের মাথায় দেশের বাজারে আবার স্বর্ণের দাম কমানো হয়। ২৬ মে ২২ ক্যারেটের ভরিপ্রতি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৯১৭ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। এছাড়াও ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৭৯৯ টাকা কমিয়ে ৭৫ হাজার ৯৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪৯৯ টাকা কমিয়ে ৬৫ হাজার ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সেসময় সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৯৮২ টাকা কমিয়ে করা হয় ৫৪ হাজার ২৩৮ টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ঈদুল আজহার তিনদিন আগে ৭ জুলাই আরেক দফা স্বর্ণের দাম কমানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।