পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আষাঢ় মাস শেষ হতে চলেছে। শ্রাবণ সমাগত। ভরা বর্ষা মওসুমের মধ্যভাগে এসেও চৈত্র-বৈশাখের মতো ভ্যাপসা গরমে-ঘামে নেয়ে নাকাল মানুষ। তীব্র খরতাপে দুর্বিষহ জীবনযাত্রা। প্রায় বৃষ্টিবিহীন তপ্ত এ কেমন অচেনা আষাঢ়! রাজশাহী ও সৈয়দপুরে তাপমাত্রার পারদ উঠে গেছে ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঢাকা, চট্টগ্রামেও ৩৪ ডিগ্রি। দিনে-রাতে সমানতালে গরমের দাপট। অস্বাভাবিক তাপদাহের কারণে জ¦র, সর্দি-কাশি, শ^াসকষ্ট, চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে প্রায়ই ঘরে ঘরে অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে বাড়ছে রোগীর ভিড়।
ভরা বর্ষায় অনাবৃষ্টি। অসময়ে খরা পরিস্থিতি। অথচ আষাঢ় মাসের শুরুর দিকে এমনকি ভরা গ্রীষ্মের জ্যৈষ্ঠ মাসেও আকাশ মেঘলাসহ ঝুম বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিতে শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে। সিলেট, রংপুর বিভাগসহ দেশের অনেক জেলায় ওই সময়ে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়। উজানের ঢল ও দেশের অভ্যন্তরে ভারী বর্ষণে বন্যার অবনতি ঘটে। এখন বিপরীত চিত্র। রাজশাহী বিভাগ, উত্তরাঞ্চলসহ অনেক জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত রোববার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনেও ছিটেফোঁটা দুয়েক জায়গায় ছাড়া তেমন কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। অসহনীয় তাপদাহে কেটেছে ঈদ। তীব্র গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। তীর্যক সূর্যের দহনে পুড়ছে ফল-ফসল।
দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাসে চলতি জুলাই মাসে সারাদেশে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া বিভাগ। বাতাসের আর্দ্রতার হার বা জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি বেশি থাকায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে আষাঢ়ের বৈরী খেয়ালী আবহাওয়া। জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন এরজন্য দায়ী মনে করেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞগণ। অসময়ের খরতাপে দেশের অনেক জায়গায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে একটি লঘুচাপ। এটি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এর প্রভাবে সমুদ্র উপকূলীয় অনেক জায়গায় বিরাজ করছে গুমোট আবহাওয়া। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উড়িষ্যা উপকূলের কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে উড়িষ্যা উপকূল ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। লঘুচাপটি ঘনীভূত হতে পারে। পরবর্তীতে এর প্রভাবে এ সপ্তাহের শেষে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় থেকে মোটামুটি সক্রিয় অবস্থায় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী ও নীলফামারী জেলার উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা তৈরি হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সমুদ্রবন্দর ও নৌ-বন্দরসমূহে কোন সঙ্কেত দেখাতে হচ্ছে না।
ক্রমেই চরম-ভাবাপন্ন, এলোমেলো ও বৈরী উঠেছে আবহাওয়া-জলবায়ু। এর ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হচ্ছে বিপর্যস্ত। বৃষ্টিপাতে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক অসঙ্গতি। আবহাওয়া-জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। সীমিত কোন এলাকায় হঠাৎ কিংবা স্বল্প সময়ের মধ্যেই অতি বর্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় শহর-নগরে পানিবদ্ধতা ও দুর্ভোগের এটি প্রধান দিক।
বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে বাংলাদেশের আবহাওয়া-জলবায়ুর আবহমানকালের চিরচেনা রূপ ও বৈশিষ্ট্য বদলে যাচ্ছে। এলোমেলো হয়ে উঠেছে আবহাওয়া। অস্বাভাবিক আচরণ করছে। বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নিত্যনতুন দুর্যোগ ও সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। ফল-ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। চিরায়ত ষড়ঋতুর আদি চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে। খরতাপে যেন মরুর আগুনের হলকা। অসহনীয় গরমকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কিন্তু শীতের পরিধি কমে গেছে। শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত ঋতু যেন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
নদ-নদীর পরিস্থিতি : নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল জানায়, দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকবে। প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৮০টি পয়েন্টে পানি হ্রাস ও ২২টিতে বৃদ্ধি পায়। তিনটি স্থানে পানি অপরিবর্তিত ছিল। আপাতত কোথাও পানি বিপদসীমার ঊর্ধ্বে নেই।
সর্বশেষ আবহাওয়া : সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.২ ডিগ্রি
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণায় ১৮ মি.মি., সিলেটে ১৪ মি.মি., খেপুপাড়ায় ১০ মি.মি., রাঙ্গামাটিতে ৮ মি.মি. ছাড়া দেশের কোথাও তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও সৈয়দপুরে ৩৭.২ ডিগ্রি সে.। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৪.৭ ও সর্বনিম্ন ২৮ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের অদূরবর্তী উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত ও সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে বর্তমানে উড়িষ্যা উপকূল ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর একটি বর্ধিতাংশ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে বিচ্ছিন্নভাবে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
রাজশাহী, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলাসহ সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার শেষের দিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।