পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করায় ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) এটিএম বুথ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই পুরো ঘটনা ক্ষতিয়ে দেখে নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইস্টার্ন ব্যাংকই নয় আরো দুটি ব্যাংকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে এটিএম জালিয়াতি রোধে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নতুনভাবে স্থাপিত এটিএম বুথে বাধ্যতামূলকভাবে এন্টি স্কিমিং ও পিন শিল্ড ডিভাইস রাখা এবং পূর্বে স্থাপিত বুথগুলোতে আগামী একমাসের মধ্যে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘এটিএম বুথে নিরাপদ ও ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোর করণীয়’ বিষয়ে এই নির্দেশনা জারী করা হয়। যদিও এই একমাস সময় নিয়েও প্রায় ১ কোটি এটিএম গ্রাহকের মধ্যে আতঙ্কে বিরাজ করছে। তাদের মতে, এই সময়ের মধ্যে আবার না কোন বিপদে পড়তে হয়। কারণ হিসেবে তারা জানান, অনেক এটিএম বুথেই সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রও নিশ্চিত করেছে কিছু বুথে সিটিভি ক্যামেরা বা জালিয়াত চক্র শনাক্তের মেশিন থাকলেও বেশিরভাগেই নেই। একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, এটিএম বুথগুলোতে প্রযুক্তিসহ সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবহার না করে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সাথে এক ধরনের প্রত্যারণার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মতে, ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই সব ধরনের নিরাপত্তা জোড়দার করে গ্রাহকদের কাছে সেবা নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
যদিও গত শুক্রবার এটিএম বুথ থেকে টাকা জালিয়াতের ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বিভিন্ন ব্যাংকে দায়িত্বরত বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষকদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি সব পর্যবেক্ষকের সাথে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে ব্যাংকগুলোর তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বড় ধরনের জালিয়াত চক্রের জালে জড়িয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ। গ্রাহকের কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। এতে শুধু গ্রাহকই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, মারাত্মক আস্থা সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। আর এর সাথে দেশী-বিদেশী চক্রের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত রোববার সিটি, ইউসিবিএল ও ইস্টার্ন এই তিনটি ব্যাংকে তদন্ত দল পাঠিয়ে এমন তথ্য পেয়ে অবাক হয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। গতকালও ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত দল পাঠানো হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে জালিয়াত চক্র এ পর্যন্ত কতজন গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে, তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। জালিয়াত চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করতে ব্যাংকগুলোর কাছে এটিএম বুথের লেনদেনের ভিডিও ফুটেজ তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেছেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ২১ জন গ্রাহক অভিযোগ করেছেন তাদের এটিএম কার্ডের টাকা ক্ষোয়া গেছে। অন্য ব্যাংকগুলো থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি।
এদিকে এটিএম বুথে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপনে ব্যাংকগুলোকে দেয়া এক মাস সময় জালিয়াত চক্রের জন্য সুযোগ কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, এটিএম বুথগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে। একই সঙ্গে মনিটরিং ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার প্রতি জোড় দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। যাতে করে জালিয়াত চক্র নতুন কোন ধরনের উদ্যোগ নিলে তা চিহ্নিত করা যায়। যদিও তিনি স্বীকার করেন- বেশিরভাগ এটিএম বুথেই সিসিটিভি ক্যামেরা নেই।
২০১৩ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানলে এটিএম জালিয়াতির ঘটনা ঘটতো কিনা জানতে চাইলে শুভংকর সাহা বলেন, নির্দেশনা মানলে হতো না, এটা ঠিক। তাই পুরো ঘটনা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে নির্দেশনা অমান্যকারী ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই গ্রাহকের স্বার্থকে প্রাধ্যান্য দেয়। তাই ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত গাহকদের অর্থ ফেরতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংককে। তিনি বলেন, এ রকম জালিয়াতির ঘটনা ব্যাকিং খাতের জন্য সু-খবর নয়। একটা ঘটনাও হওয়া ঠিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, জালিয়াতচক্র যে সব গ্রাহকের কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করেছে তাদেরকে নতুন করে কার্ড প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবারের এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় বিদেশি নাগরিক জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশে ব্যাংক। নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বেসরকারী ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের একটি এটিএম বুথে লাগানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ওই ব্যক্তির চেহারা ধরা পড়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া তার সাথে একজন বাংলাদেশী ছিলো বলেও জানা গেছে। এ ব্যাপারে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে থানায় ইতিমধ্যেই মামলা হয়েছে। জানা গেছে, প্রাথমিক তদন্তে তিনটি ব্যাংকের ছয়টি এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস ও ভিডিও ক্যামেরা স্থাপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গ্রাহক যখন লেনদেন করে তখন আগে থেকে স্থাপন করা ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য ও পিন সংগ্রহ করে জালিয়াত চক্র। এরপর সংগ্রহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে অবিকল কার্ড তৈরি করে গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়। এ চক্রের সাথে ব্যাংকেরও কিছু সদস্য জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, সম্প্রতি কয়েকটি এটিএম বুথে কার্ড স্কিমিং ও পিন ক্যাপচার ডিভাইস স্থাপন করে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য ও পিন নম্বর সংগ্রহ করে জালিয়াতি করে ইস্টার্ন ব্যাংকের ২১ জন গ্রাহকের টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটে। আর এ কারণে আগামী একমাসের মধ্যে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের এটিএম বুথে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী এই কর্তৃপক্ষ। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ এ সংক্রান্ত (ডিএসডি সার্কুলার নং ০১/২০১৬) একটি সার্কুলারও জারি করেছে।
সার্কুলারে এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) লেনদেন নিরাপদ ও ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকদের স্বার্থে এটিএম বুথগুলোতে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপন, নিয়মিত ভিত্তিতে ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ এবং কোন ব্যক্তি যাতে বুথে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন বা মেরামত করতে না পারে সে ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা। একই সঙ্গে গত ৭ জানুয়ারি থেকে গত রোববার পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের যে সব ক্রেডিট-ডেবিট কার্ডের ডাটা জালিয়াতি হয়েছে তার তালিকা তৈরি গ্রহকদের অবহিতকরণ, উক্ত কার্ড বাতিল এবং পরিবর্তে সম্পূর্ণ নতুন কার্ড ইস্যুর কথা বলেছে। তবে যে সব বুথে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে সেসব বুথে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস ছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তদন্ত টিম কাজ করছে। তবে কয়েকটি বুথে এই ডিভাইস ছিলো না বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।