Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউনিয়ন করার অধিকার পাচ্ছেন ইপিজেড শ্রমিকেরা

আইনের খসড়া অনুমোদন

প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের আদলে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি করার অধিকার দিয়ে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৬-এর আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে শ্রমিকেরা দর-কষাকষির অধিকারও পেতে যাচ্ছেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘শ্রম আইন-২০১৩ ইপিজেডে (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) প্রযোজ্য নয়। শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে নতুন আইনটি করা হয়েছে। আইনে ১৬টি অধ্যায় এবং ২০২টি ধারা রয়েছে।’ নতুন আইন অনুযায়ী রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) শ্রমিকরা সংগঠন (ট্রেড ইউনিয়ন) করতে পারবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ সংগঠনের নাম হবে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি। নাম ভিন্ন হলেও অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য নেই। নামটি একটু শ্রুতিমধুর। কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে শ্রমিক প্রতিনিধিরা মজুরি, কর্মঘণ্টা, নিয়োগ ও নিয়োগের শর্ত, ধর্মঘটের অধিকার রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে সরাসরি মালিকদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারবেন।
খসড়া আইনে কল্যাণ সমিতি গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে, সমিতি গঠন করতে ইপিজেডে শিল্প-কারখানার ৩০ শতাংশ শ্রমিককে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাতে হবে। এরপর এদের মধ্যে ভোট হবে। আবেদনকারী শ্রমিকদের ৫০ শতাংশ সমিতি করার জন্য ভোট দিলে সমিতি গঠনের অনুমোদন দেওয়া হবে। সমিতিতে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। এর আগে ২০১৪ সালের ৭ জুলাই আইনটি নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আইনের খসড়াটি উপস্থাপন করেছে।
খসড়া আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এতে শ্রমিকদের নিয়োগ এবং চাকরির শর্তাবলি, প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা, স্বাস্থ্য রক্ষা, কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা ও কল্যাণমূলক ব্যবস্থা, কর্মঘণ্টা এবং ছুটি, মজুরি ও মজুরি পরিশোধ, ইপিজেড মজুরি বোর্ড, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ও জখমের জন্য ক্ষতিপূরণ, শ্রমিক কল্যাণ সমিতি, মীমাংসা ও সালিশ, ইপিজেড শ্রম আদালত এবং আপিলাত ট্রাইব্যুনাল, দ- ও দ- প্রদানের পদ্ধতির বিধান এবং ভবিষ্যৎ তহবিলের বিধান রাখা হয়েছে।
প্রসূতিকালীন মোট ১৬ সপ্তাহের ছুটির কথা আইনে বলা হয়েছে বলে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘দুর্ঘটনাজনিত কারণে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ইপিজেডের বাইরের শ্রমিকদের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুজনিত কারণে ক্ষতিপূরণ দু’লাখ টাকা। আইনে স্থায়ী ও সম্পূর্ণ অক্ষমতার ক্ষতিপূরণ দু’লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আইন অনুযায়ী শ্রমিকের বয়স ৬০ বছর হলে, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলেও কেউ চাইলে অবসর নিতে পারবেন। অবসরের পর শ্রমিকরা প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেক পূর্ণ বছরের চাকরির জন্য ৩০ দিনের মূল্য মজুরি প্রদান করা হবে।
শফিউল আলম বলেন, ইপিজেড শ্রম আইনে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য স্থায়ী মজুরি বোর্ড প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয়েছে। এখন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে ইপিজেডের শ্রমিকদের এ মজুরি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধি, বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি ও নিরপেক্ষ উৎস থেকে প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। বেপজার (বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এ বোর্ডে সদস্যসংখ্যা হবে ১২ জন বলেও জানান শফিউল আলম। যখনই প্রয়োজন মনে হবে তখনই এ বোর্ড মজুরি পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নেবে।
বিভিন্ন দেশ ও বিদেশি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার প্রস্তাব ছিল, সেজন্য কি আইনে এ বিধান রাখা হয়েছে Ñ জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তা অনেকটা বলতে পারেন। আইএলওসহ আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলোরও এ দাবি ছিল। এছাড়া শ্রমিকদের সুন্দর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি আমাদের সংবিধান ও আইনে রয়েছে। শুধু দাতাদের চাহিদা পরিপ্রেক্ষিতে এটা করেছি তা নয়।
ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগের কারণে জিএসপি ফিরে পাওয়া সহজ হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের বার্গেইনিং স্ট্রেনথ-টা (দর কষাকষির সামর্থ্য) তখন বাড়বে। আমরা বলতে পারব, ইপিজেডে আমরা শ্রমবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছি।
তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়ন বা সিবিএ এবং ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক কল্যাণ সমিতির মধ্যে যৌথ দর কষাকষির এজেন্টের কাঠামো গঠন, পরিষদের মেয়াদ বা কার্যাবলির মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার, শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন, যৌথ দর কষাকষিতে প্রতিনিধিত্বের অধিকার, শিল্পবিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, ধর্মঘট করার অধিকার এবং চাকরির নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়গুলো যুক্ত করে ইপিজেড শ্রম আইনকে ‘সুসংহত’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ইপিজেড শ্রম আইনে শ্রমিকদের যৌথ দর কষাকষির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, শ্রমিক প্রতিনিধিরা মজুরি, কর্মঘণ্টা, নিয়োগ ও নিয়োগের শর্ত, ধর্মঘটের অধিকার রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি মালিকদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে পারবেন।
ইপিজেডে শ্রমিকদের সংগঠন করার সুযোগ দেওয়ায় কারখানায় কোনো জটিলতা হবে কি না এমন প্রশ্নে শফিউল বলেন, সরকারের মূল্যায়ন হলো এখন যদি ইপিডেজগুলোতে সিবিএ বা কল্যাণ সমিতি খুলে দেওয়া হয়, তাহলে বড় রকমের কোনো ঝামেলা হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউনিয়ন করার অধিকার পাচ্ছেন ইপিজেড শ্রমিকেরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ