পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রবাদে আছে ‘বাইরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট।’ এক্সপ্রেসওয়ের যেন সেই দশা হয়ে গেছে। নয়নাভিরাম ডিজিটাল সড়কে প্রতিদিন টোল দিতে গিয়ে এনালগ যন্ত্রণায় পড়ছেন যাত্রীরা। অনেকদিন আগে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ডিজিটাল সড়কটিতে এতোদিনে আধুনিক পদ্ধতিতে টোল আদায়ের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অথচ পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করা শত শত যানবাহন থেকে হাতে হাতে টোল আদায়ের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে; ভোগান্তিতে পরছেন যাত্রীরা। যানজট এড়াতে এতো বড় উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রবাদের ‘যে লাই সেই কদু’ অবস্থা হয়ে গেছে।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করা শুরু হয় গত ১ জুলাই থেকে। দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও ব্যয়বহুল সড়কও এটি। কিন্তু এই সড়কে এখনো নেয়া হয় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ঠোল আদায়ের কারণে যানবাহনগুলোকে টোল দেয়ার কাউন্টারে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে যানজট সৃষ্টি হয়। যা একটি আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর এক্সপ্রেসওয়েতে ম্যানুয়াল পদ্ধতি নয় বরং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আদায় করা হয় টোল। যাতে সড়কে কোন ধরনের যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে না পারে। এবং যাত্রীরা সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। এতে সময়ের সাথে মিল রেখে চলতে পারেন সড়কে। কিন্তু আমাদের এখানে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করেন হাতে হাতে। টাকার বিনিময়ে টোকেনের মাধ্যমেই মেলে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের অনুমতি। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে অত্যাধুনিক টোল আদায় সিস্টেম চালু করার পরামর্শ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। এই সড়কে চলাচলরত সকল যানবাহনকে টোল দিতে হবে অটোমেটিক পদ্ধতিতে। যাতে তেমন কোন সময় ব্যয় হবে না। যানবাহন চালাচল অবস্থায় গাড়ি স্ক্যান করে পূর্বনির্ধারিত গাড়ির টোল প্রদানের কার্ড থেকে টাকা কেটে নেয়া হবে। অথবা গাড়ির নির্ধারিত কার্ড টোল প্লাজায় এসে কার্ড স্পর্শ করা মাত্র টোলের টাকা কেটে নেবে। এতে সময় ব্যয় হবে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। সময় বাঁচার সাথে সাথে এক্সপ্রেসওয়েতে যানজটের কোন ঝামেলা থাকবে না। খুব শীঘ্রই এসব অত্যাধুনিক ব্যবস্থা চালু করার পরামর্শ তাদের।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশে এক্সপ্রেসওয়েগুলোতে টোল দিতে হয়। এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যুক্ত হয় অর্থ। তা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সাহায্য করে। সুরক্ষিত থাকে এক্সপ্রেসওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও। টোল আদায় করার পদ্ধতি থাকলে অযথা কোন লোকজন এসব দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় গিয়ে ভিড় করবে না। শুধু মাত্র বিনোদনের জন্য গাড়ি নিয়ে ঘুরাঘুরি করবে না। সে ক্ষেত্রে যানজটের মতো ভয়াবহ সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলবে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে চলাচলকারী যানবাহন থেকে অত্যাধুনিক টোল আদায়ের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণত রাজধানী ঢাকা থেকে ঈদের সময় নাড়ীর টানে গ্রামে ফেরা লোকজনকে প্রতি বছরই পড়তে হয় বিপাকে। কিন্তু এবার দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোকে সড়ক পথে সরাসরি সংযোগ করেছে পদ্মা সেতু। আর পদ্মা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কারণে এই পথে ঈদযাত্রা সহজ করবে। তবে এই সড়কের টোল আদায় যদি সহজে না দেয়া যায় তাহলে যানজটের আশঙ্কা থেকেই যায়। গতকাল এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পদ্মা সেতুর ওপর দুর্ঘটনা আর টোল আদায়ের ম্যানুয়াল পদ্ধতির কারণে দেরি হলে যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান জানান, প্রথম ছয় মাস আধা ডিজিটাল, আধা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় হবে। এই সময়ের মধ্যে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের একই ধরনের আধুনিক পদ্ধতি স্থাপন করবে। তখন আর টোল দিতে সময়ক্ষেপণ হবে না।
জানা যায়, এই এক্সপ্রেস ওয়েতে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। প্রতি মোড়ে ওভারপাস, ফ্লাইওভার থাকায় বিনা বাধা, বিনা সিগন্যালে এতে গাড়ি চলে। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থায় এটি গতির সূচনা করেছে। আমেরিকা, মালয়েশিয়ায়সহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই এ ধরনের এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে। এর সঠিক ব্যবহার আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে টোল আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়। এতে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষও (বিবিএ) পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য স্বয়ংক্রিয় টোল আদায় ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি। এর জন্য আরও অন্তত ৬ মাস লাগতে পারে বলে জানান সেতু কর্মকর্তারা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি একনেক সভায় জাতীয় মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালের মার্চে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়কটি ১১ হাজার ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়। এটি ছিল দৈর্ঘ্যরে হিসাবে ব্যয় বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাস্তা। ২০২১ সালের এপ্রিলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি ঘোষণার পর অর্থ মন্ত্রণালয় অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা টোল হার (বেইজ টোল) অনুমোদন করে। সেই সময় সড়ক কর্তৃপক্ষ গত বছরের জুলাই থেকে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত বছরের আগস্টে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের জন্য কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনকে নিয়োগ দেওয়ার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে। বর্তমানে ধলেশ্বরী সেতুর কাছে এবং ভাঙ্গার টোল প্লাজাগুলোতে উভয় দিকে ৬টি করে মোট ১২টি করে বুথ রয়েছে।
চুক্তিতে সওজের পক্ষে ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান ও কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের লি ইয়ং সান সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠান আগামী ৫ বছর এক্সপ্রেসওয়েতে চলা গাড়ির টোল আদায় করবে। একইসঙ্গে এই এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ, আধুনিক টোলপ্লাজা ও বুথ নির্মাণ, টোল আদায়ে আধুনিক পদ্ধতি ও ওজন স্কেল স্থাপন এবং সড়কে সিসি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি বসবে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ২০২০ সালের মার্চে। এরপর সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এই এক্সপ্রেসওয়েতে স্বয়ংক্রিয় টোল আদায় ব্যবস্থা চালু করার জন্য ২ বছরেরও বেশি সময় পেয়েছে। গত সপ্তাহে সওজ কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের (কেইসি) নেতৃত্বে একটি যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয় টোল আদায়ের জন্য। প্রতিষ্ঠানটি ম্যানুয়ালি টোল আদায় শুরু করে। এর ফলে এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেন, পদ্ধতি অনুসরণ করে দরপত্র আহ্বান করেছি, টোল সংগ্রহের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছি। যদিও আরও ভালো প্রস্তুতির সুযোগ ছিল, কিন্তু তার জন্য সকল কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হবে ব্যাপারটা এমন নয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে এইরকম ব্যবস্থা আছে, টোল দিতে আমাদের আপত্তি নেই, তবে ভালো সড়কের ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে হবে। আরও বেশি টোল বুথ না থাকলে ঈদের ভিড়ের সময় যান চলাচলে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে। টোলের বিষয়ে আরও বেশি প্রচারণা দরকার, যাতে এই মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা আগে থেকেই এ বিষয়ে সচেতন হন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমি প্রস্তাব করেছিলাম ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুর টোল আদায় একসাথে করা হয়। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করতে হবে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে। যাতে পরিবহনগুলোকে চলাচল করতে বেশি সময় ব্যয় করতে না হয়। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই যেন যোগাযোগ সহজ হয়। এই সড়কটি যেন সব সময় যানজট মুক্ত থাকে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর ড. শামছুল হক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়েতে পদ্মা সেতু সংযুক্ত থাকবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে টোল আদায়ে কৌশলী পদ্ধতি নিতে হবে। সুষ্ঠু যোগাযোগের বিষটা খেয়াল রাখতে হবে। সরকার অর্থনীতি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়ন চায়। বিশ্বে স্বয়ংক্রিয় টোল ব্যবস্থা ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে বিরল। সওজ ও বিবিএর পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট হয়েছে। পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ে আধুনিক অবকাঠামো। যদি এখানে আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম চালু করতে না পারি, তাহলে জনগণ তাদের কাক্সিক্ষত সেবা পাবে না। এক্সপ্রেসওয়েগুলোতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে টোল আদায় করা হবে। এটার রক্ষণাবেক্ষণ ভালোভাবে করতে হবে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।