Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুল্ক ছাড়াই ৪ লাখ টন চাল আসছে

আমনের ফলনেও ঘাটতির শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

চাল উৎপাদনের প্রধান বোরো মৌসুমে চালের দাম কয়েক মাস ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বছরের বাকি সময়ের জন্য চালের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া দেশের উত্তর পূর্বে সিলেট অঞ্চলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, রংপুরের কুড়িগ্রাম জেলাও চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা। এতে আমনের ফলনেও ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমদানিকারকদের আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশের বাজারে আনতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ গুদামজাত ও বাজারজাত করার তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককেও জানাতে হবে। চালের দামে লাগাম পরাতে আমদানি শুল্ক তুলে নেয়ার পর প্রথম দফায় বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৯ হাজার টন আমদানি করতে ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার।

আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল আনার আমদানির অনুমতি দিতে অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ক চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। শর্ত হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে এলসি খুলতে হবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।

আমদানিকারকদের আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশের বাজারে আনতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ গুদামজাত ও বাজারজাত করার তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককেও জানাতে হবে। সরকারি হিসাবে দেশে চালের সরবরাহ ও মজুতের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও চালের দাম বেড়ে চলেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে সরু চালের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সরু চালের দাম এক মাসেই বেড়েছে ৯ শতাংশ। টিসিবির হিসাবে ১ বছর আগে এই সময়ে দেশে সরু চাল বিক্রি হতো কেজিপ্রতি ৫৬ থেকে ৬৫ টাকায়। এখন তা ৬৪ থেকে ৮০ টাকা। ১ বছর আগে মাঝারি চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, যেটি এখন হয়েছে ৫২ থেকে ৬০ টাকা। ১ বছর আগে মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৮ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারও অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখছে। সম্প্রতি বিভিন্ন চালকল ও বাজারে সরকার অভিযানও চালাচ্ছে। বৈধ মাত্রার চেয়ে বেশি মজুত করায় মামলাও হয়েছে স্কয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযানের সুফল বাজারে কমই মিলছে।

চাল উৎপাদনের প্রধান বোরো মৌসুমে চালের দামে এ লাভ বছরের বাকি সময়ের জন্য শঙ্কা তৈরি করছে। বোরো ধান ওঠার পরও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আমদানি বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার। এর অংশ হিসেবে আমদানিতে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে শুল্ক। তবে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, অ্যাডভান্সড ট্রেড ভ্যাট বা এটিভি এখনও কিছু বহাল আছে, যদিও এর হার কমানো হয়েছে অনেকটাই। এতদিন চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো সরকারকে। অর্থাৎ আমদানিতে ১০০ টাকা খরচ হলে সরকারকে দিতে হতো ২৫ টাকা। এই খাতে এখন কোনো টাকা দিতে হবে না।

যদিও নিয়ন্ত্রণমূলক যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেটি পুরোপুরি প্রত্যাহার হয়নি, তবে কমানো হয়েছে অনেকটাই। এতদিন এই শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ, সেটি কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এর বাইরে অগ্রিম আয়কর, এটিভি মিলিয়ে শুল্ক দিতে হবে ২৫ শতাংশ। এতদিন আমদানি শুল্কের সঙ্গে এগুলো মিলিয়ে শুল্ক ছিল ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য আনতে সরকারকে দিতে হতো ৬২ টাকা। এখন কম দিতে হবে ৩৭ টাকা। আমদানি করা চালের মূল্য আগের চেয়ে কম পড়লে দেশি উৎপাদকরা প্রতিযোগিতার স্বার্থে দাম কমাতে বাধ্য হবে বলে আশা করছে এনবিআর। আর এর ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে এবং ভোক্তারা কম দামে চাল কিনে খেতে পারবে। এনবিআর থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্কহার কমানোর এই আদেশ বহাল থাকবে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে শর্ত দেয়া হয়েছে। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামে পুনরায় প্যাকেটজাত করতে পারবে না। চাল বিক্রি করতে হবে প্লাস্টিক বস্তায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্ত দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল

১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ