পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণেই তিস্তা নদী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। মূল নদীতে পানিরপ্রবাহ না থাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্পও এখন অকার্যকর। খালগুলো শুকিয়ে ঘাস গজিয়েছে। এর ফলে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতাধীন কৃষি জমিগুলোও এখন পানির অভাবে খাঁখাঁ করছে। চলতি বোরো মৌসুমেও চাষাবাদে বিঘœ ঘটছে মারাত্মকভাবে। ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের কৃষক সমাজ। এর প্রতিবাদে এবং তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল (সোমবার) তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে রোডমার্চ করেছে বাসদ। দুপুর ১২টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে বাসদ রংপুর জেলা শাখার সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে রোডমার্চ পূর্ব এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শুভাংশু চক্রবর্তী, জয়পুরহাট জেলা সমন্বয়ক ওবায়দুল্লাহ মুসা, গাইবান্ধা জেলা আহবায়ক কমরেড আহসানুল হাবীব সাঈদ, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কমরেড মঞ্জুর আলম মিঠু, দলের রংপুর জেলা কমিটির সদস্য পলাশ কান্তি নাগ।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, আমাদের শাসকগোষ্ঠীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় হয়নি বরং সকল সরকারই ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ভারতের স্বার্থে একের পর এক গণবিরোধী চুক্তি করেছে। ভারত সকল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতি লংঘন করে তিস্তার উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তাকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে।
গত তিন বছরে ৩ জেলার ১২ উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক-ক্ষেতমজুর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। হাজার হাজার মৎস্যজীবী, মাঝি পরিবার বেকার হয়ে পড়েছে। এসব কৃষক-জনতার মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হাহাকার।
বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবমতে, তিস্তায় একসময় শুষ্ক মৌসুমে ১৪ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো। ভারতের (গজলডোবা ব্যারেজ) পানি প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ অংশে তা কম ৪,০০০ কিউসেকে দাঁড়ায়। খরা মৌসুমে তা ২৫০-৩০০ কিউসেকে নেমে এসেছে।
বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও বগুড়া জেলার সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু হয়। যার সেচ লক্ষ্যমাত্রা ৭ লক্ষ ৫০ হাজার হেক্টর হলেও সেচ সুবিধা দেওয়া যেত ১ লক্ষ ১১ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে।
ভারতের কাছে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যর্থতার এমন ভয়াবহ পরিণতি যে, চলতি মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবরাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
বক্তাগণ আরও বলেন, তিস্তার পানি না পাওয়ায় প্রতিবছর ফসলহানির কারণে সর্বশান্ত হচ্ছে কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারি সহায়তা না পেয়ে মহাজনী ও এনজিও ঋণের দ্বারস্থ হচ্ছে।
এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে মধ্যম চাষি জমিজমা বিক্রি করে গরিব ক্ষেতমজুর, দিনমজুরে পরিণত হয়। তিস্তার গজলডোবা বাঁধ একদিকে শুল্ক মৌসুমে শুকিয়ে মারে আবার বর্ষা মৌসুমে প্রবল পানির স্রোত ফসল-বাড়িঘর ডুবিয়ে মারে। ফসলি জমি বালুচরে পরিণত হয়। নদী ভাঙনে সর্বশান্ত হয় মানুষ।
শুধু তিস্তা নয় দু’দেশের অভিন্ন ৫৪টি নদীর ৫১টি নদীতে আন্তর্জাতিক নদী আইন অমান্য করে ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উজানে অসংখ্য বাঁধ, ব্যারেজ দিয়ে এবং ভিন্নখাতে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে। ভারতের এই পানি আগ্রাসনের কারণে মরুকরণের দিকে গোটা বাংলাদেশ।
ভারতের পানি আগ্রাসন ও সরকারের নতজানু নীতির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
সমাবেশে শেষে প্রেসক্লাব চত্বর থেকে যাত্রা শুরু করে রংপুর মেডিকেল মোড়, পাগলাপীর, গঞ্জিপুর, চন্দনের হাট, মাগুড়া, গাড়াগ্রাম, অবিলের বাজার হয়ে বিকাল ৩টায় বড়ভিটায় পৌঁছে। সেখানে রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশ থেকে মার্চ মাসজুড়ে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, মতবিনিময় শেষে আগামী ৭ এপ্রিল রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।