পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১টি প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো সংশোধনের ফলে খরচ বেড়েছে ২৯ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। বাড়তি এই খরচের টাকায় একটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। যেখানে পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। বার বার সংশোধন ও সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার ফলেই এই খরচ বেড়েছে। এমনটাই দাবি করেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান। গতকাল রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে ‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ ইন শিওরিং গুড ভ্যালু ফর মানি’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এই দাবি করেন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনা সংলাপে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এস্টিমেটের চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। সিপিডি ও দ্যা এশিয়ান ফাউন্ডেশন সংলাপের আয়োজন করে।
প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বার বার প্রকল্প সংশোধন হয়, সময় বাড়ানো হয়। সময় বৃদ্ধি মানেই ব্যয় বৃদ্ধি। আমরা মেগা প্রকল্প ও ছোটখাটো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে, সেখানে দেখেছি এক হাজার ৩৫৬টি প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স বাদ দিলে এক হাজার ২৫০টি প্রকল্প থাকে। এগুলো বিভিন্ন সামাজিক অবকাঠামো, সড়ক, সেতুসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ। এসব প্রকল্পে লাখ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এগুলো বাস্তবায়িত হবে। তবে আমরা যদি সুশাসনের সঙ্গে সময়মতো এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি, সাশ্রয়ীভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি-তবে দেশের জন্য মঙ্গল। তাহলে আমরা আরও বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো। এতে আমাদের যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা দিয়ে অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো।
তিনি বলেন, আমরা যে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি তা ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন। পদ্মা সেতু আমাদের অর্জনের একটা বড় প্রতীক। এটা প্রত্যাশিত টাইমলাইনে হয়েছে। পদ্মা সেতু থেকে ইতিবাচক আর্থ-সামাজিক ফলাফল আমরা পাবো। প্রলম্বিত ইতিবাচক একটা ছায়া রেখে যাবে এই সেতু। এটার অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
সিপিডির এই ফেলো আরও বলেন, আমরা দেখছি মেগা প্রকল্প সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে খবরদারি করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে আমরা একটা ইতিবাচক সুফল পাচ্ছি। এই বিষয়টি অন্যান্য প্রকল্পেও যদি কাজে লাগাতে পারি তাহলে এক হাজার ২৫০টি অবকাঠামো ও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রকল্প ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবো। এসব প্রকল্প নিয়ে একটা কাঠামো করা গেলে আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারবো। তাহলে আমাদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে।
তিনি বলেন, ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবকাঠামো উন্নয়নে জড়িত। সঠিক মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে এসডিজি অর্জনে অনেকখানি এগিয়ে যাবো। আমরা যে প্রবৃদ্ধি করতে চাচ্ছি, ২০৩৩ সালের মধ্যে যা করতে চাচ্ছি তা অর্জন করতে পারবো। যদি ভালোভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে প্রাইভেট খাত আরও আকৃষ্ট হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যখন একটা সড়ক হয়, একটা সেতু হয়- তখন তাকে ঘিরে যা বিনিয়োগ হয় তা অবর্ণনীয়। এখান থেকে সরকার কর ও রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
প্রকল্পের ধীরগতি প্রসঙ্গে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটা তুলনামূলক চিত্র যদি দেখি, ২০২১-২২ অর্থবছরে যেসব প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল তার সবই কিন্তু হয়নি। এরকম প্রকল্প কিন্তু ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। তার মানে হলো এগুলো সময়মতো শেষ করতে পারিনি। আমরা জানি সময় বৃদ্ধি মানেই ব্যয় বৃদ্ধি। এটা একটা সাধারণ সমীকরণ। তিনি বলেন, আমরা ২০২১-২২, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি যদি দেখি তাহলে দেখা যায়, এডিপিতে অনেক প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এর সংখ্যা কিন্তু কম নয়। দেখা যায় নানা প্রকল্প এক থেকে তিনবার পর্যন্ত সংশোধন করা হয়। আমরা এখানে একটা হিসাব করেছি, আমাদের (সিপিডির) যে স্বাধীন উন্নয়ন পর্যালোচনা, সেখানে দেখা গেছে অনেক প্রকল্প অনেকবার সংশোধন করতে হয়। এগুলোতে ব্যয় বেড়েছে মূলত সংশোধনের কারণে। বিভিন্ন প্রকল্পে সিম্বলিক (প্রতীকী) বরাদ্দ দেয়া হয়। এটা বাদ দেয়া ভালো।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক কর্মস্থলে থাকেন না-কথা শোনেন না, এটাই দুঃখ’। প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু দেখা যায় পঞ্চগড়ের কোনো প্রকল্পের পরিচালক ঢাকায় থাকছেন, এটা জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজের এলাকায় কেউ থাকতে চাচ্ছে না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীকে পাওয়া যায় না; তাঁদের নাটাই ঢাকায়, কিন্তু সুতা কাটা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রশাসনের অনেক বিধি অপ্রয়োজনীয়। ব্রিটিশ, পাকিস্তানি ও সামরিক শাসকেরা এসব করেছেন, যার এখন বাস্তবতা নেই। কিন্তু অনেক দুষ্ট আমলা এসব বিধান চাতুরীর সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে এসব বদলানোর, তা সত্ত্বেও এসব পরিবর্তন করা যাচ্ছে না, নানা প্রতিবন্ধকতা এসে হাজির হয়। তবে আইনকে আইন দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অবকাঠামোকে দেশের প্রাণ বলে উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, অবকাঠামো আমাদের মূল লক্ষ্য। এসব দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশবান্ধব হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের গ্রামীণ এলাকায় সড়কের নিচ দিয়ে আন্ডারপাস করার পরিকল্পনা আছে, যাতে কৃষক নির্বিঘ্নে গরু নিয়ে রাস্তা পেরোতে পারেন।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, এগুলোকে চুরি বলব না, তবে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে দুর্নীতির বিষয় রেখেঢেকে রাখার প্রয়োজন নেই বলেই তিনি মনে করেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। তিনি বলেন, অনেক প্রকল্পের পরিচালকেরা নতুন গাড়ি কিনছেন, যদিও তিনি এমনিতে গাড়ি পান। এমনকি প্রকল্প এলাকায় তাঁকে প্রতিদিন যেতেও হয় না। ফলে যেখানে তেলের খরচ নিলেই যথেষ্ট, সেখানে নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে। এসব বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া এই সরকারের আমলে সংসদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটি শক্তিশালী করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আবদুস শহীদ। কোন প্রকল্প কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ কমিটির বৈঠকে পেশ করা হচ্ছে।
প্রকল্প প্রণয়নের সময় প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই বা কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন সংসদ সদস্য এনামুল হক। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় মানুষের যাপিত জীবনের পরিবর্তনের বিষয়টি আমলে নেয়া হচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি নিজ সংসদীয় এলাকা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার উদাহরণ দেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগে সেখানে পাকা সড়ক ছিল ৫০ কিলোমিটার, এখন তা ৪০০ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এরপরও সেখানে সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। যদিও এক সময় এত সড়ক হয়তো কাজে আসবে না; কারণ, সবাই যেভাবে শহরের দিকে চলে আসছে, তাতে এক সময় ওখানে অত মানুষই থাকবে না।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।