পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : ঢাকা শহরের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ দুই মেয়রের জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে উচ্ছেদ বিকালে দখল, বিকালে উচ্ছেদ সকালে দখল। উচ্ছেদ অভিযান এখন সিটি কর্পোরেশনের দৈনিক কর্মসূচির অংশ। তিন মাস ধরে এভাবেই চলছে রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতের হকারদের সাথে সিটি কর্পোরেশনের ইঁদুর-বিড়াল খেলা। কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাত পার হয়ে হকাররা এখন মূল রাস্তা দখল করে নিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা ও দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কিছু কাউন্সিলরের ছত্রছায়ায় লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজ, কর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য উচ্ছেদের পরক্ষণেই আবার হকারদের বসিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো এলাকা থেকে স্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদের পর তা আবার কয়েকদিনের মধ্যে পুনর্নির্মাণ হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালিদ আহম্মেদ ইনকিলাবকে বলেন, গত প্রায় চার মাসে আমরা ঢাকা মেডিকেলের সামনে থেকে ৭ বার ও গুলিস্তান থেকে ৮ বার ফুটপাত ও সড়ক থেকে হকার এবং অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু তা করে কী হবে? আমরা উচ্ছেদ অভিযান কাজ শেষ করে স্থান ত্যাগ করার সাথে সাথেই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালানোর মতো আমাদের তেমন কোনো লোকবল ও পুলিশ প্রডাকশন না থাকলেও আমরা এ কাজটি চালিয়ে যাওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার পরও দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখলদারদের সাথে পেরে উঠতে পারছি না।
প্রশাসনের অবারিত ক্ষমতা থাকার পরও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে বাধা কোথায় Ñ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসন চালানো আর রাজনীতি এক কথা নয়। উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে আমাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। ফুটপাতের হকারের চকিতে নাড়া দিলে সে নাড়া অনেক দূর পর্যন্ত যায়। তবে এটাকে আমরা আমলে নিচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমরা এক জায়গায় বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি, মূলত তাদের অস্থির করে রাখার জন্য। তারা একদিন বাধ্য হবে অবৈধ দখলদারিত্ব ও সরকারি রাস্তা এবং ফুটপাত থেকে সরে যেতে। অবৈধ দখলদার ও সরকারি জায়গা থেকে হকার উচ্ছেদ করতে যতদিন লাগে আমরা তাদের উচ্ছেদ করে ছাড়বই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ফুটপাতগুলোর দখল এখন নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতে। অথচ নির্বাচনের আগে তারাই ফুটপাত দখলমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রাজধানীর অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকা, গুলিস্তান, গুলশান ও বনানী। এর মধ্যে অন্তত ১২ জন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক রাজধানীতে এক গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, সবাই বলেন, ফুটপাত থেকে হকার তুলে দেন, রাস্তা দখলমুক্ত করেন। কিন্তু এটা তত সহজ নয়। তারা টাকা দিয়ে বসেছেন। শক্ত শক্ত হাত এর পেছনে আছে।
হকার সমিতিগুলোর হিসাবে, ঢাকায় প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার হকার আছেন। এর মধ্যে দেড় লাখ হকার ফুটপাতে বসেন। ২৫ হাজার রাস্তায় দোকানদারি করেন। আর ২৫ হাজার মৌসুমি হকার। এরা রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদের সময় ঢাকায় আসে। ফলে মৌসুমি হকারের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাকি হকাররা গণপরিবহন, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় নানা পণ্য বিক্রি করে থাকেন।
এসব হকারের কাছ থেকে প্রতিদিন স্থানভেদে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। ঈদ কিংবা উৎসবে এই চাঁদার হার আরও বেড়ে যায়। প্রতি হকারের কাছ থেকে গড়ে ১০০ টাকা করে দৈনিক মোট ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ওঠে। বছরে এর পরিমাণ ৯০০ কোটি টাকার বেশি। রমরমা এই চাঁদাবাজির কারণেই সকালে হকার উচ্ছেদ করলে বিকেলে পুনরায় বসে যায়।
বাংলাদেশ হকার ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাসেম বলেন, সম্প্রতি চাঁদাবাজদের তালিকা দেওয়ার পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সিটি কর্পোরেশনকেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রাজস্বের বিনিময়ে হকারদের নিবন্ধন দিতে। তাহলে বাইরের চাঁদাবাজি বন্ধ হবে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গুলিস্তান স্কয়ারের পশ্চিম দিকের ফুটপাতজুড়ে পলিথিনের ছাউনি টাঙিয়ে বসেছে সারি সারি তৈরি পোশাকের দোকান। শার্ট, প্যান্ট, বাচ্চাদের পাশাক, থ্রিপিস Ñ সবই মিলছে এখানে। এখানকার শার্ট বিক্রেতা মাদারিপুরের আনছার আলী জানান, প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন তিনি। নতুন করে এখানে পসরা সাজানোর জায়গা নেই। নতুন যারা ব্যবসায় আসছেন, তারা সড়কের ওপর পলিথিন বিছিয়ে বা টেবিল পেতে পসরা সাজান। পুরোনো ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে দিলে সেই জায়গাটি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। তবে সচরাচর জায়গার হাতবদল হয় না। প্রতিদিন ‘লাইন ফি’ দিতে হয় ১০০ টাকা আর বিদ্যুতের জন্য ২০ টাকা। এই হলো দোকানের খরচ। বিক্রি মন্দ নয়, দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকলে ১০-১৫ হাজার টাকার বিক্রি হয় প্রতিদিন।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদার ও হকার উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতে পা ফেলার জায়গা নেই। কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায় বসছেন হকাররা। বিশেষ করে রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, জিপিও, ক্রীড়া ভবন, দৈনিক বাংলা, স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, কাপ্তানবাজার, দিলকুশা, মতিঝিল, ফকিরাপুল, টিকাটুলি, সদরঘাট, বঙ্গবাজার, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, ঢাকা কলেজ, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, জুরাইন, শাহবাগ, মালিবাগ-মৌচাক, ফার্মগেট, মহাখালী, মিরপুর ১০ নম্বর, গাবতলীসহ রাজধানীর ব্যস্ততম এমন কোনো এলাকা নেই যেসব এলাকার ফুটপাত ফাঁকা আছে। কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে এখন হকার বসানো হয়েছে রাস্তার ওপর। এতে বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলাসহ নানা কারণে ঢাকা শহরের যে সমস্ত স্থানগুলো স্পর্শকাতর স্থান হিসেবে পরিচিত সে স্থানগুলোর ফুটপাতও দখল হয়ে গেছে।
সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, একথা সত্য যে ঢাকার দুই মেয়র ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। যেহেতু এর পিছনে রাজনৈতিক মহল জড়িত, স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত, স্থানীয় পুলিশ জড়িত থাকার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আরও বহু স্বার্থন্বেশি মহলের হাত এর পিছনে রয়েছে। এতোসব অনাকাক্সিক্ষত অপশক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে মেয়ররা যে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের ব্যপারে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে এর জন্য তারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন, একাজে আর বড় একটি অন্তরায় রয়েছে। আর সেটা হল মানবিক দিক। এ সমস্ত ফুটপাতে যারা ব্যবসা করে পরিবার-পরিজন চালায় তারা নিতান্তয়ই গরিব শ্রেণীর মানুষ। উচ্ছেদের আগে এদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা মাথায় রাখতে হবে। এতসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে খুব সহজে এ কাজ সম্পন্ন করা যাবে বলে মনে হয় না। তবে তিনি আশা করেন, ঢাকার দুই মেয়র এ কাজে আবশ্যই সফল হবেন।
হকারদের একটি সূত্র জানায়, রাজধানীর পল্টন এলাকার ফুটপাতের লাইনম্যানদের সর্দার হচ্ছেন জনৈক বাবুল। ক্যাশিয়ার হলেন দুলাল এবং আমিন। পল্টনের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর হামদর্দের সামনে চাঁদা আদায় করছেন সাবেক সরদার সালাম। সুন্দরবন স্কোয়ার মার্কেটের উত্তর পাশে জজ মিয়া ও ভোলা, ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনে বিমল বাবু, আল মনসুরের পূর্ব পাশে খোরশেদ ওরফে বড় মিয়া, শহীদ ও তার ভাই হাসান, রেলওয়ে মার্কেটের পশ্চিম পাশে সুলতান, লিপু, রমনা ভবনের পশ্চিম ও উত্তর পাশে মনির ও তৌহিদ, রাজধানী হোটেল ও সিঙ্গারের সামনে শ্রী বাবুল, রব, আহাদ পুলিশ বক্সের উত্তর পাশে লম্বা হারুন, পশ্চিম পাশে কানা সিরাজ, কাপ্তানবাজার এলাকায় জয়নাল, ভাষানী স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে আব্দুল আলী, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে আব্দুল কাদের ও খলিল, পশ্চিম পাশে কোটন, স্বর্ণ মার্কেটের সামনে চাটগাইয়া হারুন ও জাহাঙ্গীর, উত্তর পাশে সাজু, জিপিওর দক্ষিণ পাশে দাড়িওয়ালা সালাম, বাসসের সামনে আবুল হাশেম কবির, ক্রীড়া ভবনের সামনে নুরু, হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনে দুলাল, আলম, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর বেল্টের গলিতে কালা নবী এবং পূর্ণিমার সামনে আক্তার ও জাহাঙ্গীর চাঁদা তুলছেন।
মতিঝিল এলাকায় ৩০টি ফুটের নিয়ন্ত্রণ নাসির ওরফে ফেন্সি নাসির বাহিনীর হাতে বলে হকাররা জানান। এই এলাকার সর্দার আজাদ, ক্যাশিয়ার কালা কাশেম। আলিকো অফিসের সামনে চাঁদা আদায় করছেন সাদেক, সোনালী ব্যাংকের সামনে মকবুল, রূপালী ব্যাংকের সামনে তাজু ও তার ছেলে, সেনা কল্যাণের সামনে গাঞ্জুটি হারুন, ফারুক, বলাকার সামনে নুরুল ইসলাম নুরু, আইডিয়ালের সামনে সাইফুল, মোল্লা নাসির শাহজাহান ও মোহর আলী। কোতোয়ালি এলাকার সর্দার কন্ডু। ওয়াইজঘাট এলাকায় চাঁদা নিচ্ছেন নুরু মোল্লা, পাখি ও কালু, কোর্টকাচারী এলাকায় সফিক, নয়াবাজারে মন্টু, কালু, সফি ও আজম।
সূত্রাপুর এলাকার কাপ্তানবাজারে চাঁদা তুলছেন সেকেন্দার, হাই, সাজু ও বিষু। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকার সর্দার সোনা মিয়া। আরো আছেন তোরাব আলী, জুলমাত, আবুল কালাম ও মান্নান। কদমতলী ও শ্যামপুর এলাকার সর্দার হচ্ছেন সিরাজ তালুকদার। আরো রয়েছেন নুরুল ইসলাম, তার ছেলে বাবু, হালিম, জাহাঙ্গীর, ফটিক, রহমান সরদার, ফারুক ও রহিম। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই গেটে চাঁদা তুলছেন রফিক। শাহবাগসহ এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে চাঁদা তুলছেন সোহেল, হেদায়েত, ফজর আলী, কামাল, সোহেল, ওবায়েদ, হানিফ, বাবুল ওরফে গাইরা, দেলু ও শাজাহান। সূত্র জানায়, এরাই হকার উচ্ছেদে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।