পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে গত সপ্তাহে সিলেট বিভাগে দেখা দেয়া বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পানি কমায় সঙ্গে সঙ্গে নেমে এসেছে ভানভাসিদের দুর্গতি। একদিকে পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি, অন্যদিকে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট। বন্যায় টিউবওয়েলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। খাবার বিশুদ্ধ পানির জন্য বন্যাদুর্গত এলাকার লাখ লাখ মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপচিরালক প্রফেসর এ বি এম খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় বর্তমানে খাবারের চেয়ে বড় সঙ্কট বিশুদ্ধ পানি। তাই স্বাস্থ্য অধিদফতর পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠাচ্ছে। গতকালও ৫০ হাজার ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে। আরো পাঠানো হবে। তবে এই ট্যাবলেট সবার কাছে পৌঁছানোই চ্যালেঞ্জ।
সিলেট বিভাগের বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ আর সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় জেগে উঠতে শুরু করেছে রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন স্থাপনা। আর এর সঙ্গে ফুটে উঠছে বন্যার ক্ষত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, বন্যায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ যত স্বাভাবিক হচ্ছে ততই পাওয়া যাচ্ছে হতাহতসহ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া বানভাসিরা এখনই ফিরতে পারছেন না বাড়ি-ঘরে। টিউবওয়েলগুলো ডুবে থাকায় পানির জন্য হাহাকার সর্বত্রই। পানির অপর নাম ‘জীবন’ এটা সর্বোচ্চভাবে অনুভব করছে বন্যাদুর্গতরা। খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কটে পড়ে দিশেহারা তারা। খাবার কিছুটা মিললেও বিশুদ্ধ পানির অভাবে বন্যাদুর্গত এলাকায় বোতলজাত পানির চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু এই দুর্যোগে পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি লিটার বোতলের পানি বিক্রি হয়, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ১ হাজার কোটির কাছাকাছি। প্রতি বছরই বোতলের পানির বাজার বাড়ছে প্রায় ২০ শতাংশ হারে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক ও বন্যাদুর্গতদের পাশে মানবিক সাহায্য নিয়ে দাড়ানো সমাজকর্ম অ্যালামনাইর সভাপতি প্রফেসর আলী ওয়াক্কাস সোহেল ইনকিলাবকে বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের সবচেয়ে বড় সঙ্কট বিশুদ্ধ পানি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে কিছু পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাওয়া গেলেও তা সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তিনি সমাজের দানশীল এবং বিশুদ্ধ পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এদিকে বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট নিরসনে সরকারিভাবে কিছু বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রদান করা হলেও তা পৌঁছাচ্ছে না সবার কাছে।
সূত্র মতে, ’৯০-এর দশকে বাংলাদেশে বোতলজাত পানির ব্যবসা শুরু হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে বোতলজাত পানির ব্যবসা করছে যেসব প্রতিষ্ঠান তা হলোÑ পারটেক্স গ্রুপের ‘মাম’, প্রাণ-আরএফএলের প্রাণ, মেঘনার ফ্রেশ, ঢাকা ওয়াসার শান্তি, সিটি গ্রুপের জীবন, আকিজের স্প্রা, একমি গ্রুপের একমি ড্রিংকিং ওয়াটার, দেশবন্ধু পানিসহ দেশে দেড় শতাধিকেরও বেশি পানির ব্র্যান্ড রয়েছে। যদিও বাজারে প্রতিযোগিতা করছে ১৫-২০টি প্রতিষ্ঠান। এমনকি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি পেপসিকো ‘অ্যাকুয়াফিনা’ ও কোকাকোলা ‘কিনলে’ নামে দেশে পানি বিক্রি করছে। বছরে এসব পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে প্রায় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে। অথচ সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে শত বছরের মধ্যে ভয়াবহ বন্যায় মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কটে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তখন এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নীরব দর্শকের ভূমিকায় আছে। ব্যক্তি বা সংগঠনের উদ্যোগে কেউ কেউ পানি কিনে বন্যাদুর্গতদের বিতরণ করলেও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি বিশুদ্ধ পানির চাহিদা বাড়ায় উৎপাদনও বাড়িয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান, কিন্তু করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) থেকে পানি সহায়তা দিচ্ছে বন্যাদুর্গতদের। যদিও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা সিএসআর থেকে বোতলজাত পানির সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি পানির সঙ্কট যাতে না থাকে সে জন্য সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে বোতলজাত পানির ব্যবসায় ‘মার্কেট লিডার’ হিসেবে ব্যবসা করছে পারটেক্স গ্রুপের পানির ব্র্যান্ড মাম। পারটেক্স গ্রুপের এজিএম (ব্র্যান্ড) মো. নাহিদ ইউসুফ বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডিসহ স্যাররা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে বন্যার্তদের। তবে এ পর্যন্ত কি পরিমাণ সহায়তা করা হয়েছে তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি তিনি। এছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রচুর পানি যাচ্ছে। অনেকেই ব্যক্তিগভাবে পানি কিনে সহায়তা করছে। পারটেক্সের ডিলার এবং ডিপোতে পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখা হয়েছে যাতে কোনোভাবে পানির সঙ্কট না হয়।
প্রাণ গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির প্রচুর সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পানির উৎপাদনও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাণ-এর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে পানি সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি অনেকেই আমাদের থেকে পানি কিনে ওখানে বিতরণ করছে। তাই সিলেটে পানির সরবরাহও বাড়ানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।