Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিক দর্শন : স্মৃতিময় সফর মাস

মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বছর পরিক্রমায় আমাদের মাঝে আবারো ফিরে এসেছে হিজরী সনের ২য় মাস সফর। আল্লাহর মাস খ্যাত মহররমের পরেই এ মাসের অবস্থান। ইসলামপূর্ব জাহেলীযুগ থেকেই এ মাসের সাথে নানা ঐতিহাসিক বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। অত্র প্রবন্ধে স্মৃতিময় এ সফর মাস সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে। ইনশাআল্লাহ।
নামকরণ :
সফর শব্দটি আরবী। এর বিভিন্ন অর্থ রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো- শূন্য হওয়া, খালি হওয়া
এ মাসের নামকরণের ব্যাপারে দুটি মত পাওয়া যায়। তা হলোÑ
এক. এ মাসে মক্কা জনশূন্য হওয়ার কারণে, কেননা মক্কাবাসীরা এ মাসে সফর করত।
দুই. এ মাসকে সফর নামে নামকরণ করা হয়েছে, কারণ এ মাসে তারা বিভিন্ন গোত্রের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতো এবং শত্রুপক্ষের কারো সাক্ষাৎ পেলে তাকে রসদ ও আসবাবপত্রশূন্য করে রেখে আসত।( লিসানুল আরব, খ- নং- ৪, পৃষ্ঠা নং- ৪৬০)
উপরোক্ত কারণে এ মাসের নামকে ‘সফর’ হিসাবে নির্ধারণ করা হয়।
জাহেলী যুগে এ মাসকে নাযির বলা হতো। এর অর্থ হচ্ছেÑ তীব্র পিপাসা। জাহেলী যুগে তীব্র গরমের মাসকে নাযির বলা হতো। এ মাসে উটসহ অন্যান্য প্রাণীরা অধিক পিপাসায় ভুগত এবং পিপাসা নিবারণের জন্য অধিক পানি পান করত। এ কারণে এ মাসকে নাযির বলা হতো। (আশশামারিখ ফি ইলমিত তারিখ, পৃষ্ঠা নংÑ ১৩)
জাহেলী যুগে সফর মাস
জাহেলী যুগে সফর মাসকে ঘিরে দুটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়Ñ
০১। এ মাসকে আগ-পিছ করায় লিপ্ত হতো
০২। এ মাসকে অশুভ ও কুলক্ষণ মনে করত।
নি¤েœ এ বিষয় দুটি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হলোÑ
১মাস রদবদল
জাহেলী যুগে আরবরা মাসের ক্রমবিন্যাস রদবদল করত। এক মাসের পরিবর্তে আরেক মাস ব্যবহার করত। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সময় থেকে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত ছিল। মাসগুলো হলোÑ জিলকদ, জিলহজ, মহরম ও রজব। তারাও এ মাসসমূহকে সম্মানিত মনে করত। জিলকদ, জিলহজ ও মহরম একাধারে তিন মাস হারাম মাস হওয়ার কারণে এ মাসসমূহে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। টানা তিন মাস যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ রাখা তাদের জন্য খুব দুষ্কর ও অসুবিধাজনক ছিল। এজন্য তারা ঘোষণা দিত- এ বছর সফর মাস মহররম মাসের আগে যাবে। যাতে করে তারা সফর মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতে পারে। আবার তারা বলত, এ বছর মহররমের মাসের হুরমত (সম্মান ও নিষিদ্ধতা) সফর মাসে চলে যাবে। এভাবে তারা মহররম মাসেই যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো। মাসের ধারাবাহিক এ ক্রমবিন্যাস রদবদল করার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছেÑ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার কাছে মাসের সংখ্যা বারটি, যা আল্লাহ তায়ালার কিতাব অনুযায়ী সেইদিন থেকে চালু আছে, যেদিন আল্লাহ আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন। অতএব তোমরা এ মাসসমূহতে নিজেদের ব্যাপারে জুলুম করো না। তোমরা সবাই মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করো যেমনিভাবে তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। জেনে রাখ। আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকীনদের সাথেই আছেন।”
মাস রদবদল বা পিছিয়ে দেয়া মূলত কুফরীকেই বৃদ্ধি করা। তারা এ কাজকে এক বছর হালাল মনে করে এবং অন্য বছরের জন্য হারাম সাব্যস্ত করে, যাতে করে আল্লাহ তায়ালা যে মাসগুলোকে নিষিদ্ধ করেছেন, তা পূরণ করতে পারে। ফলে আল্লাহ তায়ালা যা হারাম সাব্যস্ত করেছেন, তারা তা হালাল মনে করে। তাদের অপকর্মকে তাদের নিকট সুসজ্জিত করা হয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা কাফের সম্প্রদায়কে সুপথ দেন না। (সুরা তাওবা, আয়াত নং- ৩৬-৩৭)
সফর মাসকে অশুভ ও কুলক্ষণ মনে করা :
জাহেলী যুগে আরবরা সফর মাসকে কুলক্ষণ ও অশুভ মনে করত। এজন্য তারা এ মাসে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকত। ইসলাম আগমণের পরক্ষণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধারণা খ-ন করতঃ ইরশাদ করেনÑ
“কোন সংক্রামক, সফর মাসের অশুভত্ব এবং কোনো অশুভ আত্মার অনিষ্টতা ইসলামে নেই।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৫৪৩৭)
অতএব বোঝা গেল, এ মাস কোনো কুলক্ষণ বা অশুভ পরিণতি বহন করে না। অন্যান্য মাসের ন্যায় এ মাসও আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি। এ মাসে নেক আমলের ফযিলত যেমন রয়েছে, তেমনি বদ আমলের পাপও রয়েছে। এ জন্য এ মাসকে অশুভ মনে করা জাহেলী যুগের স্বভাব। এ কুসংষ্কার ও ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদেরকে যোজন যোজন দূরে থাকতে হবে।
নবীজীবনে সফর মাস :
সফর মাসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের বেশকিছু ঘটনা রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকটি গাযওয়া ও সারিয়া পরিচালনা করেছিলেন এ মাসে। তাঁর অন্তিম রোগও শুরু হয় এই সফর মাসে। নি¤েœ এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোÑ
০১। গাযওয়ায়ে আবওয়া :
মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী এক স্থানের নাম আবওয়া। মদীনা থেকে এর দূরুত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাতা বিবি আমিনার কবর রয়েছে। এ স্থানকে ওয়াদ্দানও বলা হয়ে থাকে। হিজরী ২য় সনের সফর মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ স্থানে যুদ্ধে গমন করেন। এটি ছিল স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অংশগ্রহণে সর্বপ্রথম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ইসলামের পতাকা বহন করেন হামযা বিন আব্দুল্লাহ (রা.)। এ গাযওয়ায় কোনো আক্রমণ ও রক্তপাত হয়নি। কিনানা গোত্রের বনু দ্বামরার সাথে সন্ধি ও চুক্তিনামা হয়। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, খ-- ৪, পৃষ্ঠা নং-১৪)
০২। রজী’ প্রান্তরের ঘটনা :
৪র্থ হিজরী সনের সফর মাসের শুরুর দিকে আদল ও আলকারা নামক গোত্রের কয়েকজন লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে আবেদন করলেনÑ ইয়া রাসূল্লাল্লাহ। আমাদের গোত্রের লোকেরা নতুন ইসলাম গ্রহণ করছে। আপনি আমাদেরকে কয়েকজন শিক্ষক দিন, যারা আমাদেরকে বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিবেন।
এ আবেদনের প্রেক্ষিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসিম বিন সাবিত (রা.)-কে দলনেতা নির্বাচন করে ১০ জনের বিজ্ঞ সাহাবীকে তাদের সাথে প্রেরণ করেন। দলটি মক্কা ও উসফান নামক স্থানের মধ্যবর্তী রজী’ প্রান্তরে আসলে আদল ও আলকারা গোত্রের সেই প্রতিনিধি দল বিশ্বাসঘাতকতাপূর্বক পার্শ¦বর্তী হুযাইল বংশের সাথে আঁতাত করে সাহাবীদের উপর আক্রমণ করেন। উল্লেখ্য যে, ঐ বংশের লোকেরা মুসলমানদের ঘোরবিরোধী ছিল। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত প্রায় ২০০ জন সৈন্য নিরস্ত্র সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে নির্মমভাবে তীর নিক্ষেপ করে। ফলে দলনেতা আসিম (রা.)সহ ৭ জন সাহাবী শাহাদাতবরণ করেন এবং অপর ৩ সাহাবী তাদের হাতে বন্দি হন।
আসিম (রা.)-এর ইন্তেকালের কথা শুনে কুরাইশরা তাঁর দেহ থেকে মাংস কর্তনের জন্য লোক প্রেরণ করেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আসিম (রা.)-এর দেহ আবৃত করার জন্য অসংখ্য মৌমাছি প্রেরণ করেন। মৌমাছিরা দেহরক্ষীর মত তাঁকে পাহারা দিতে লাগল। ফলে কুরাইশরা তাঁর দেহ থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করতে পারল না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮৫৮)
আল্লাহ তায়ালা এভাবেই তাঁর জন্য জীবনোৎসর্গকারী শহীদ বান্দাদের সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণœ রাখেন।
০৩। বি’রে মাউনার ঘটনা :
৪র্থ হিজরী সনের এ মাসে আরো একটি নির্মম দুর্ঘটনা ঘটে। বি’রে মাউনার সেই ঘটনা ইতিহাসের এক নির্মম কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে। নজদ এলাকা থেকে আমির বংশের আবুল বারা নামক এক ব্যক্তি মদীনায় আগমন করেন। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে আরয করলেনÑ ইয়া রাসূলাল্লাহ। ইসলাম ধর্ম আমার কাছে ভালোই লাগে। কিন্তু আমার স্বগোত্রীয় লোকদের রেখে একা একা ইসলাম ধর্মগ্রহণ করার সাহস আমার নাই। আপনি আমার সাথে কয়েকজন সুদক্ষ আলেম সাহাবী প্রেরণ করুন, যারা ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে আমার গোত্রের লোকদের ইসলামে দাখিল করাবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কথায় সংশয় প্রকাশ করলেন এবং অস্বীকৃতি জানালেন। সে তখন বললÑ আমি আমাদের গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। আমি উনাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। আর আমাদের বংশের নেতা তো আমার ভ্রাতুষ্পুত্র। অতএব আপনি আলেম সাহাবী কাফেলাকে নির্দ্বিধায় আমার সাথে পাঠাতে পারেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে ৭০ জন সাহাবীর এক কাফেলা প্রেরণ করেন। যারা সবাই ছিলেন কোরআন শরীফের হাফেজ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে কাছের।
তাদের সাথে আরো তিনজন সাহাবীকে পত্রসহ আমির গোত্রের নেতার নিকট প্রেরণ করলেন। ঐ নেতা পত্রবাহককে পাওয়ার সাথে সাথে হত্যা করল এবং আগত সাহাবী কাফেলার উপর আক্রমণ করল। নিরস্ত্র সাহাবীগণ তাদের নির্মম অত্যাচারে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। শুধুমাত্র কা’ব বিন যায়েদ (রা.) আহত অবস্থায় বেঁচে যান।
হাফেজ সাহাবীদের এ বিশাল কাফেলার নির্মম শাহাদাতবরণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মারাত্মকভাবে ব্যথিত করে। ফলে তিনি একাধারে একমাস বি’রে মাউনার জালিমদের জন্য ফজর নামাজে কুনুতে নাযিলা পাঠ করেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮৬০)
০৪। খয়বার বিজয় :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭ম হিজরী সনের মহররম মাসে খয়বার অভিমুখে যাত্রা করেন। তিনি সফর মাসে খয়বার বিজয় করেন। (যাদুল মাআদ, খ--৩, পৃষ্ঠা নং-৩৪০)
০৫। সর্বশেষ সারিয়া :
মক্কা বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় ফিরে আসার পর ১১শ হিজরীর ২৬শে সফর সোমবার রোমানদের সাথে যুদ্ধের জন্য আবু বকর, উমর, আবু উবায়দা (রা.)সহ প্রমুখ শীর্ষস্থানীয় সাহাবীদের সমন্বয়ে একটি বাহিনী প্রস্তুত করেন। এ বাহিনীর প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন হজরত উসামা বিন যায়েদ (রা.)। এটাই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেরিত শেষ সারিয়া বা অভিযান। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, খ--৬, পৃষ্ঠা নং-২৪৮)
০৬। অন্তিম রোগ শুরু :
হজরত উসামা বিন যায়েদ (রা).কে অভিযানে প্রেরণের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তিম রোগ শুরু হয়, যে রোগে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর অন্তিম রোগ শুরুর ব্যাপারে ইবনে ইরাকী (রহ.) বলেনÑ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সফরের শেষ দশকে রোগাক্রান্ত হন এবং সর্বমোট ১০, ১২, ১৪ অথবা ১৩ দিন রোগাক্রান্ত অবস্থান থাকেন। (আলফিয়াতুল ইরাকী ফিস সিরাত, পৃষ্ঠা নং-৩৫)
মোটকথা ১১শ হিজরী সনের সফর মাসের শেষ বুধবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তিম রোগ শুরু হয়। এ দিনটি ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ নামে আমাদের কাছে পরিচিত।
০৭। জান্নাতুল বাকী কবরস্থান জিয়ারত :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১১শ হিজরীর ২৮শে সফর বুধবার দিবাগত রাতে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য দোয়া করেন।
সফর মাসের বিশেষ ফযিলত :
সফর মাস হিজরী সনের ২য় মাস। এ মাসকে জাহেলী যুগের লোকেরা অকল্যাণ ও অশুভ মনে করত। তাদের এ কুসংস্কার ইসলাম খ-ন করে দিয়েছে। এ মাস অন্যান্য মাসের মতোই। অন্য মাসে নেক আমলের সাওয়াব যেমন এ মাসেও ঠিক তেমন। এ মাসে আমলের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র কোনো ফযিলত হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়নি। অতএব এ মাসকে কুলক্ষণ মনে করা যাবে না। এ মাসে অন্যান্য মাসের মতোই আমল করতে হবে।
সফর মাস সংক্রান্ত দুর্বল বর্ণনা :
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যাচার করে জাল হাদীস বর্ণনার শাস্তি জাহান্নামে নিবাস নির্ধারণ। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে জাল বর্ণনা রয়েছে। অনেকে চমকপ্রদ বর্ণনা পেয়ে সনদের শুদ্ধাশুদ্ধি যাচাই ব্যতিরেকেই অসতর্কতাবশত তাদের বই-পুস্তকে জাল হাদীস ঢুকিয়ে দেন। এতে করে সাধারণ পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং সঠিক ইসলামী জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়। এব্যাপারে লেখকশ্রেণীর দীর্ঘ অনুসন্ধান ও সনদ বিশ্লেষণ একান্ত কাম্য। সফর মাসের অশুভত্ব সম্পর্কে কিছু জাল বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন :
যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস শেষ হওয়ার সংবাদ দিবে, আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিব। এটি জাল বর্ণনা। ইমাম সগানী (রহ.) তার ‘মাওজুআত’ কিতাবে, মোল্লা আলী কারী (রহ.) তার আলআসরারুল আরফুয়া কিতাবে এবং শাওকানী তার আলফাওয়ায়িদুল মাজমুআ কিতাবে এ বর্ণনাকে জাল হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও আরো কিছু জাল বর্ণনা রয়েছে। আমাদের উচিত সেগুলো থেকে বিরত থেকে হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি যাচাইপূর্বক আমলযোগ্য হাদীসসমূহের উপর আমল করা।
এ মাসে করণীয় :
এ মাসের স্বতন্ত্র কোনো আমল হাদীস শরীফে বর্ণিত নেই। অন্যান্য মাসের মতো এ মাসেও নেক আমল, তাওবা-ইস্তেগফার ও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়া উচিত। এ মাসের প্রচলিত কুসংস্কার যেমন : এ মাসকে অকল্যাণ-অশুভ মনে করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া প্রত্যেক মাসের মতো এ মাসেও আইয়্যামে বীয তথা ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ রোজা রাখা যেতে পারে। যেদিনগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত রোজা রাখতেন।
ইবনে রজব হাম্বলী (রহ.) বিখ্যাত ‘লাতায়িফুল মাআরিফ’ গ্রন্থে এ মাসের করণীয় কয়েকটি বিষয় পংক্তি আকারে উল্লেখ করেনÑ
মোদের কাছে এসেছে দেখ ২য় মাস সফর,
যেথা আছে কল্যাণ আর সৌভাগ্য-জফর।
এ মাসেতে কর শুরু এমন শুভ কাজ
যে কাজেতে খুশি হবে কিয়ামতের মাঝ।
বয়সসীমা শেষের আগে মহান রবের কাছে,
তওবা করে মাফ করে নাও যত গোনাহ আছে।            (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা নং-১৫৭)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সফর মাসে অধিক পরিমাণে নেক আমল সম্পাদন ও পাপ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে পরকালীন সফরের সহজ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।



 

Show all comments
  • ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:১৯ এএম says : 0
    খুব সুন্দর হয়েছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ