Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি

২০১৮ সালের মধ্যে দৃশ্যমান

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের ও হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২২ এএম, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬

পদ্মা সেতুর অর্ধেক ও পায়রা বন্দরের ৩০ ভাগ কাজ সম্পন্ন : ওবায়দুল কাদেরের হাতেই থাকছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব

বর্তমান মেয়াদের মধ্যেই মেগা প্রকল্পগুলোতে দৃশ্যমান অগ্রগতি আনতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কয়েকটি প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের মধ্যেই শেষ করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এজন্য মেগা প্রকল্পগুলোতে কাজের গতি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে জোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা ফাস্টট্রাক প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে ২০১৯ সালের মধ্যে যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে সেগুলোর দিকেই বেশি নজর সরকারের। কারণ, ওই সময়ের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনগণের সামনে উন্নয়ন সাফল্য তুলে ধরতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু, দোহাজারী-রামু-ঘুনধুম রেলপথ, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনালের কাজ শতভাগ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের কাজ ৮০ ভাগ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ৮০ ভাগ, পদ্মা রেলসেতু সংযোগ ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ ৩০ ভাগ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সরকার। ভূ-রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে থমকে আছে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি। তবে এ বিষয়ে সুরাহা করতে তৎপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ৫০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় চীন। তবে এ প্রকল্পে জোর আগ্রহ রয়েছে ভারতেরও। পাশাপাশি এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব ঠেকাতে এই প্রকল্পে বাগড়া দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রও। তাই এই প্রকল্প নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না সরকার। তবে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে জোর কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ চাচ্ছে চীনই এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করুক।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫০ ভাগ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে ৮২ ভাগ। আর পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাজ ৩২ ভাগ শেষ হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজ ৫ ভাগ, মৈত্রী সুপার থার্মাল (রামপাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ২ দশমিক ২ ভাগ এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ হয়েছে ১ দশমিক ৩ ভাগ।
এদিকে যোগাযোগ খাতের বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে সফলভাবে বাস্তবায়ন করায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে সুনজরে আছেন বলে জানা গেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই পদ্মা সেতুর কাজ অর্ধেক সম্পন্ন করে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন ওবায়দুল। সড়ক যোগাযোগ খাতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তাই শিগগিরই মন্ত্রী সভায় রদবদল আসলেও এসব কারণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ওবায়দুল কাদেরের হাতেই থাকছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু: আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ২৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ আছে ৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ এই সেতু উদ্বোধনের লক্ষ্য ধরে কাজ করছে সেতু বিভাগ।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প: গত জুন মাসে এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ফাস্টট্রাক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃদেশীয় রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০২২ সালে শেষ করার লক্ষ্য বেঁধে কাজ করছে রেল মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৮ সালের মধ্যেই শেষ হবে। তখন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল যাবে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত। ২ শতাংশ সুদে প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা যোগাবে চীন। চলতি বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মেট্রোরেল: ঢাকা মহানগরে গাজীপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর প্রথম ধাপ অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত উড়াল রেলপথ স্থাপনের কাজ ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ করবে সরকার। ২০২৪ সালে শেষ হবে পুরো প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পে ৫ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা আসবে সরকারের তহবিল থেকে। বাকিটা দেবে জাপান। এ বছর ২২শ’ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ আছে এই প্রকল্পের জন্য।
সাম্প্রতিক গুলশানে হলি আর্টিজানের জঙ্গী হামলার পর এই প্রকল্পের কাজ কিছুটা শ্লথ হয়ে এসেছিল। কারণ, ওই হামলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ৭ জাপানি কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন। তবে এখন আবার পুরো গতিতে কাজ শুরু হয়েছে এই প্রকল্পের।
দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার ঘুনধুম রেলপথ: পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে গৃহীত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পটির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা দেয়ার কথা। এই অর্থবছরে এর জন্য বরাদ্দ আছে ৬৩১ কোটি টাকা। দুই ধাপে ১২৯ কিলোমিটার রেলপথ হবে এ প্রকল্পে।
পায়রা সমুদ্রবন্দর: দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের অনগ্রসরতা, আমদানি বৃদ্ধি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ ধারণ ক্ষমতা বিবেচনায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। দেশের তৃতীয় এ বন্দর নির্মাণে ২০১৩ সালের নভেম্বরে জাতীয় সংসদে ‘পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন’ নামের একটি আইন পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ইতোমধ্যে এই বন্দরে পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজ লোড-আনলোড শুরু হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পাবনার ঈশ্বরদীতে ৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে সরকার ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয় করবে। রাশিয়ার প্রকল্প সাহায্য রয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ৬০০ মেগাওয়াট করে দু’টি কেন্দ্রের মাধ্যমে মোট ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ প্রকল্প নেয়া। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে জাপান দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প শেষ হবে ২০১৯ সালে। ১৪ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ইউনিটের মাধ্যমে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা এই প্রকল্পে। এই অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য ২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর: দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে। বন্দরটি হলে তা প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য ব্যবহার করতে পারবে। সরকার মনে করে, বন্দরটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি কেন্দ্রে পরিণত হবে। প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য নীতিগত অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে জি টু জি ভিত্তিতে এ বন্দর নির্মাণে চীন, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও দুবাইয়ের চারটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করেছে।
মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ১০ সদস্যের একটি কমিটিতে প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে এই প্রকল্পের জন্য কোন বরাদ্দ নেই।
এলএনজি টার্মিনাল: সাংগু গ্যাস ক্ষেত্র শেষ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সংকট বিরাজ করছে। এ সংকট নিরসনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির লক্ষ্যে মহেশখালী উপকূলে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টার্মিনাল হবে। টার্মিনাল থেকে মূল ভূখ-ে গ্যাস আনতে ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। ২০১৭ সালে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
মেগা প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পগুলো শেষ করতে বদ্ধপরিকর সরকার। যত বাধাই আসুক প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।



 

Show all comments
  • মাহবুব আলম ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৩ এএম says : 0
    আশা করি নির্ধারিত সময়েই কাজগুলো শেষ হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamil ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৪ এএম says : 0
    We are waiting to see that
    Total Reply(0) Reply
  • নিজাম ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১:০০ পিএম says : 0
    সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ওবায়দুল কাদেরের হাতে থাকলে ভালো হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rubel ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১:১০ পিএম says : 0
    Many Many thanks to the reporters and The Daily Inqilab
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা. মেগা

২৩ নভেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ