Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘাটতি মেটাতে বিদেশি অর্থায়ন খুঁজতে হবে

বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ সুশাসন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। রাজধানীর মতিঝিলে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে গতকাল শনিবার বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ অভিমত জানান এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাক্সক্ষা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য ঘোষিত বাজেটের আকার অত্যন্ত সময়োপযোগী, তবে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায়।

তিনি প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে চূড়ান্ত বাজেটে এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণেরও আহ্বান জানান।

প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অধিক খাদ্য উৎপাদন ও সারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর, রফতানি বৈচিত্র্যকরণ, কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন ও সম্পন্নকরণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ সবচেয়ে ভালো দিক বলে মন্তব্য করেন জসিম উদ্দিন।

বাজেটে ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের প্রচেষ্টা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিতে হবে এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। বাজেটের এই ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের প্রচেষ্টা নেওয়ার অনুরোধ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তা নাহলে ব্যাংক ঋণের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরতা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

মো. জসিম উদ্দিন বলেন, যথাযথ বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। রাজস্ব নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারেন। মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সুসমন্বয় রাখা জরুরি।

প্রস্তাবিত বাজেটে খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হলে তা করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে অবিহিত করে জসিম উদ্দিন বলেন, খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হলে তা করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করা হবে কেন? দুর্ভোগ লাঘবের জন্যই খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হয়ে থাকে বিধায় মওকুফকৃত ঋণের ওপর কর আরোপ করা যুক্তিযুক্ত নয়। আমরা মনে করি আয়ের ওপর কর আদায় করাই হচ্ছে আয়করের মূলনীতি। তিনি বলেন, পাচার হওয়া টাকা বিনা প্রশ্নে দেশে আনার সুযোগ দেওয়াকে ব্যবসায়ীরা সমর্থন করে না।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি পাচার হওয়া টাকা বিনা প্রশ্নে দেশে আনার সুযোগ ব্যবসায়ীরা সমর্থন করে না। কারণ এ ধরনের সুযোগ দিলে সবাই এতে টাকা পাচার করার ব্যাপারে উৎসাহী হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, আমি এখন ২২ থেকে ৩০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করবো। অন্যদিকে বিদেশ থেকে ফেরত আনলে ১৮ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমরা এ ধরনের অনৈতিক কাজকে সমর্থন করি না। কারণ এতে করে ভালো ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হবেন। তিনি বলেন, এখন ডলারের সংকট, তাই সরকার হয়তো ডলারের প্রবাহ বাড়াতে এ সুযোগ দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এটা কোনোভাবেই সমর্থন করে না।

মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রাপ্ত অর্থের ওপর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশের পরিবর্তে এক শতাংশ উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করে পূর্বের ন্যায় শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করছি। সোলার প্যানেল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে এক শতাংশ করা হয়েছে। সোলার প্যানেলের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করছি।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে উৎপাদকদের কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ এবং ব্যবসায়িক পণ্যের সরবরাহের ওপর উৎসে করের হার ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। উৎসে কর ফেরতযোগ্য এবং ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি করে বিধায় উৎসে কর প্রত্যাহারের জন্য আমরা পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ব্যক্তি শ্রেণির আয়করের সীমা বর্তমান ৩ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ লাখ টাকা করার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে আয়করের সীমা বৃদ্ধি করা হয়নি। আয়করের সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ভারতে আয়করের সীমা ৫ লাখ রুপি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘাটতি মেটাতে বিদেশি অর্থায়ন খুঁজতে হবে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ