পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন নবায়ন না করায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ নিয়ে গত শুক্রবার জেনেভায় একটি বিবৃতি দিয়েছেন সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। এছাড়া অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করায় বাংলাদেশ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১১টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে অধিকারের নিবন্ধন নবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।
জেনেভায় রাভিনা বলেন, বাংলাদেশ সরকার অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অবশ্যই জাতিসংঘকে সহযোগিতা করায় নিরুৎসাহিত করা যাবে না। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই যাতে এই সিদ্ধান্ত এখনই পুনরায় বিবেচনায় আনা হয়। ২০১৩ সাল থেকেই অধিকার ভয়ভীতি এবং প্রতিহিংসার শিকার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এর কার্যক্রমের পেছনে নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘকে সহায়তা করায় অধিকার গত এক দশক ধরে যে প্রতিশোধের শিকার হয়েছে।
এছাড়া অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন না করা নিয়ে পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। পাশাপাশি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে মোট ১১টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
অধিকারের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এমন সিদ্ধান্তের অর্থ হচ্ছে, মানবাধিকার রক্ষায় যারা কাজ করে তাদের কণ্ঠ রোধ এবং ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা চলছে। মানবাধিকার লংঘনকারীদের সম্পর্কে তথ্য রাখা এর বিচারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের রেকর্ড খুব দুর্বল। আর এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। মানবাধিকার নিয়ে তথ্য প্রকাশ করার কারণে ‘অধিকারের’ নিবন্ধন নবায়ন না করার বিষয়টিকে হাস্যকর বলে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি। অ্যামনেস্টির দাবি, অধিকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে তাই সরকার সংগঠনটির উপরেক্ষুব্ধ। অবিলম্বে সংগঠনটির কাজের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেন, বাংলাদেশে অপরাধীদের তাদের অপরাধের জন্য চিহ্নিত করার জন্য অধিকারের মানবাধিকার লংঘন বিষয়ক রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এই রিপোর্টের কারণে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ায় অধিকারের নিবন্ধন ৮ বছর আটকে রাখার পর বাতিল করে দেয়া অযৌক্তিক। অধিকারের বিরুদ্ধে এমন প্রতিশোধ বাংলাদেশের মানবাধিকারের রক্ষকদের স্তব্ধ এবং সাবধান করে দেয়ার এক জঘন্য এবং নির্লজ্জ চেষ্টা। তিনি আরো বলেন, সরকার বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলো যে ধরনের তথ্য বা মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ প্রকাশ করে, সেই অভিযোগগুলোকে যথাযথ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরা। অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করার অর্থ হলো মানবাধিকার এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি একটি ভয়ঙ্কর আগ্রাসনের লক্ষণ। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে অধিকারসহ অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার আহ্বান জানান। সাদ হাম্মাদি বলেন, মানবাধিকার লংঘন নিয়ে রিপোর্ট করা মোটেই সরকারবিরোধী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়।
এদিকে ৯ জুন নিজেদের ওয়েবসাইটে একই ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা দাবি করেছে, বাংলাদেশ সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে অন্য আরো ১১টি সংগঠন। তারা বলছে, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রতিহিংসা, ভয়-ভীতি এবং হেনস্তা ছাড়াই মানবাধিকারকর্মীদের কাজ করতে দিতে হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে জানানো হয়, ১৯৯৪ সাল থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে অধিকার। ২০১৪ সাল থেকেই নিবন্ধন আটকে ছিল সংগঠনটির। মানবাধিকার সংস্থাটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে অধিকারের সদস্য এবং তাদের পরিবারকে নজরদারিতে রেখেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। বাংলাদেশ সরকার এর আগেও অধিকারের সদস্যদের কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করেছে। ২০১৩ সালে অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে স্বেচ্ছাচারী ভাবে যথাক্রমে ৬২ দিন এবং ২৫ দিন আটকে রেখেছিল।
বিবৃতিতে দাবি জানানো হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে। তাদেরকে প্রতিহিংসার মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই কাজ করতে দিতে হবে এবং তাদের রিপোর্টকে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসেবে দেখে স্বাগত জানাতে হবে। ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো হচ্ছে- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যান্টি-ডেথ পেন্টালি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজেপিয়ারেন্সেস, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট, ইলিয়স জাস্টিস, হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন এগেইনস্ট এনফোর্সড ডিজেপিয়ারেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।